২০০৬ সালে এশিয়া এনার্জি যদি ফুলবাড়ীতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করত তাহলে বাংলাদেশের পুরো উত্তরবঙ্গের প্রানি সম্পদ নষ্ট হতো। ফলে প্রকৃতির পরিণতি হতো ভয়ংকর। এই এলাকার তিন ফসলি জমি মরুভূমি হয়ে যেত। লাখ লাখ মানুষ ঘর ছাড়া হতো। সেই ভয়ংকর অবস্থা থেকে ফুলবাড়ীর গণ অভ্যুত্থান শুধু ফুলবাড়ীকে নয় বাংলাদেশকেও রক্ষা করেছে। সোমবার (২৬ আগষ্ট) সকাল ১১টায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির উদ্যোগে “ফুলবাড়ী কয়লাখনি বিরোধী ট্রাজেডির” দিবসে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপরোক্ত কথা বলেন বক্তারা।
এ সময় বক্তারা আরও বলেন, সেই সময় আমরা এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী থেকে বিতাড়িত করতে পারলেও, দেশ থেকে বিতাড়িত করতে পারিনি। এশিয়া এনার্জি এখন ঢাকায় বসে কয়লা খনি বাস্তবায়নের নানা চক্রান্ত করছে। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে যে সরকার এখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তাদের কাছে আমাদের দাবি এখন একটি; তা হলো দ্রুত আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দের নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারসহ ফুলবাড়ীর ছয়দফা দাবির পূর্ণ বাস্তবায়ন। অতিতের যে সরকারগুলো যা করেনি তা আপনারা করবেন। নয়ত আমরা দাবি বাস্তবায়নের জন্য আবারও এই এলাকার জনগণ তথা দেশবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলব।
একইসাথে তারা বলেন, খনি বিরোধী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য আন্দোলনকারি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিস্কারসহ তাদের সুবিধাভোগীদের গ্রেফতার এবং ৬ দফা ফুলবাড়ী সমঝোতা চুক্তির পূর্ণবাস্তবায়ন করতে হবে।
সমাবেশে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহবায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী ৪ নভেম্বরের মধ্যে ৬দফা বাস্তবায়নসহ ফুলবাড়ী বাসীর দাবি মেনে না নিলে আগামী ৫ নভেম্বর সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারকে স্মারকলিপি প্রদান, বিক্ষোভসহ আগামী দিনের বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহবায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েলে সভাপতিত্বে সমাবেশে অডিও বার্তায় বক্তব্য রাখেন, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটিরি সমন্বয়ক টিপু বিশ^াস, কেন্দ্রীয় কমিটি বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ’র সাধারণ সম্পাদক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের দীপক রায়, গণসংহতি আন্দোলনে এড. রায়হান কবীর, তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটির দিনাজপুর শাখার আহবায়ক আলতাব হোসাইন, ফুলবাড়ী শাখার সদস্য সচিব জয় প্রকাশ গুপ্ত, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জাতীয় কমিটির নেতা আমিনুল ইসলাম বাবলু, এমএ কাইয়ুম, এসএম নূরুজ্জামান জামান, সঞ্জিত প্রসাদ জিতু প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ২৬ আগষ্ট উদযাপন কমিটির আহবায়ক হামিদুল হক।
এদিকে ফুলবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র আলহাজ্ব মাহমুদ আলম লিটন সকালে শোক র্যালি নিয়ে ২৬ আগস্টে নিহতদের স্মরণে নির্মিত শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ সময় মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, ২৬ আগষ্ট ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনির বিরুদ্ধে আমরা ছিলাম, আজও আছি, আগামীতে থাকব। অপরদিকে পেশাজীবী সংগঠনের মুরতুজা সরকার মানিকের নেতৃত্বে সকালে শোক র্যালীসহ শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র, দোকান কর্মচারি ইউনিয়ন, পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন, হোটেল কর্মচারি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকসহ পেশাজীবী সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করেছে।