ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফোরলেন সড়ক নির্মান কাজ বন্ধ রয়েছে। সড়কের অসমাপ্ত অংশে যানবাহনের চলাচল বিপদজ্জনক হয়ে পড়েছে। ওইসব স্থানে বড়বড় গাতাগর্তে বৃষ্টির পানি জমে ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে এই সড়ক। এখানে সেখানে উল্টে পড়ছে ট্রাক-বাস বা অন্যকোন যান। ফেসে যাচ্ছে গাড়ি। সংশ্লিষ্টরা যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনায় প্রানহানির ঘটনা ঘটতে পারে। একটি গাড়ি বেকায়দায় পড়লে ঘন্টার পর ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকছে। দূর্ভোগ উঠেছে চরমে। বৃহত্তর সিলেট,ময়মনসিংহ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে চট্টগ্রাম,কুমিল্লাসহ এই বিভাগের অন্যান্য জেলাগামী শতশত যাত্রীবাহি বাস ও অন্যান্য পরিবহন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে।
আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত এই সড়কের কাজ এখন বন্ধ। ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সবাই দেশ ছেড়েছেন। সড়কটি স্থানীয় ভাবে সাময়িক চলাচল উপযোগী করার মতো পদক্ষেপও নেই।
তবে ঘাটুরা এলাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজের সামনে কিছু অংশ কলেজের শিক্ষার্থীরা মেরামত করে।
২০২০ সালের ফেব্রæয়ারীতে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার এই সড়ক নির্মানের কাজ শুরু হয়। ভারতীয় ঋন সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০২৫ সালের ৩০শে জুন। শুরু থেকে নানা কারনে প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়।
সরকার পরিবর্তনের পর গত ১০ই আগষ্ট বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা কবে ফিরবেন,কবে আবার কাজ শুরু হবে সবই অনিশ্চিত এখন। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান,তিনটি প্যাকেজে এই কাজ চলছে। এরমধ্যে আশুগঞ্জ থেকে সরাইল মোড় পর্যন্ত ১ নম্বর প্যাকেজের কাজ হয়েছে ৬২ পার্সেন্ট। দ্বিতীয় প্যাকেজ সরাইল মোড় থেকে আখাউড়া তন্তর পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৫২ভাগ। আর তৃতীয় প্যাকেজে থাকা তন্তর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত কাজ শুরুই হয়নি। গড়ে সড়কের কাজ ৫০ ভাগ হয়েছে। বর্তমানে আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে তন্তর পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে প্রায় ৪ কিলোমিটার অংশ খুউবই ঝুকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে।
প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো: শামীম আহমেদ বলেন,এটি নিয়ে কি সিদ্ধান্ত হবে তা আমরা এখনো জানিনা। এটি ভারতীয় ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের হাতে ছিলো। তারা সবাই সেফটি ইস্যুতে নিজের দেশে চলে গেছেন। তবে মালম্যাটার,মেশিনপত্র সবই রয়েছে। কবে আসবেন সেটা বলছেননা। যেহেতু রাস্তাটা প্রজেক্টের আন্ডারে ঠিকাধারের কাছে ছিলো। এর যাবতীয় মেইনটিন্যান্স বা রক্ষনাবেক্ষনের কাজ তাদের হাতেই ছিলো। তারা যেহেতু চলে গেছে রাস্তা রক্ষনাবেক্ষন করার উপায় এই মুহুর্তে কারো হাতেই নেই। এরবাইরেও আমরা বিষয়টি চীফ স্যার এবং সচিব স্যারকে বলার চেষ্টা করছি। রাস্তার যে অংশটা বাকী আছে সেটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক বিভাগের মাধ্যমে করানোর জন্যে এর ষ্টিমিটসহ চীফ স্যারের কাছে চিঠিপত্র পাঠিয়েছি। রাইট নাও ফান্ড বা কোন কিছুই যেহেতু নেই আমরা হয়তো ২/৪টা লেবার দিচ্ছি,মেশিন ভাড়া করে মালম্যাটার দিচ্ছি যা অপ্রতুল। এভাবে কিছু করে রাস্তার কিছু করাও সম্ভব নয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান,এতে তাদের করনীয় কিছু নেই। কাজ করলে প্রকল্পের মাধ্যমে করতে হবে। এই ৪ কিলোমিটার অংশ স্বল্প মেয়াদী মেরামতে ১৫ কোটি টাকা প্রয়োজন।
এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সড়কে সৃষ্ট জনদূর্ভোগের বিষয়টি জানিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের কাছে আলাদা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়,জেলার আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরন প্রকল্পের কাজ চলমান ছিলো। প্রকল্পের ৩টি প্যাকেজের মধ্যে ১ম এবং ২য় প্যাকেজ দুইাট ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কের অংশ হওয়ায় তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। প্রকল্পের এই অংশের রাস্তা ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এবং পণ্যবাহি গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু প্রকল্পের অর্ন্তভূক্ত এ দুইটি প্যাকেজের সড়কের কিছু অংশে এখনও নতুন রাস্তা নির্মান শেষ না হওয়ায় বর্তমানে রাস্তার বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গা ও পানি জমে থাকার কারনে জনভোগান্তি সীমাহীন পর্যায়ে পৌছেছে।বিশেষ করে আশুগঞ্জ গোলচত্বর,সরাইল গোলচত্বর,ঘাটুরা মেডিকেল কলেজ,বিরাশার,মধ্যপাড়া,পৈরতলা,পুনিয়াউট,রাধিকা,উজানিসার ইত্যাদি অংশে রাস্তায় বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যানবাহনের দূর্ঘটনা ও যানজট সৃষ্টি করছে এবং প্রতিদিন বাস,ট্রাক,পিকআপ উল্টে দূর্ঘটনা ঘটছে। উল্লেখিত অংশগুলোতে অতিদ্রæত মেরামত কাজ করা না হলে হতাহতসহ বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিকে নির্মান কাজ বন্ধ থাকায় নির্মান সামগ্রী চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিরাপত্তা কর্মী হোসেন মিয়া জানান,তারা নিশান-জাহাঙ্গীর নামে একটি ঢাকার কোম্পানীর নিয়োগকৃত। গত মাসের বেতন তারা পাননি। বেতন না পাওয়ায় তাদের কেউ কাজে আসছেনা। এই সুযোগে রাতে দিনে চুরি হচ্ছে।