দেশজুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনের সদ্য সাবেক এমপি, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। জেলার দাপটে এমপি ও দলের নেতারা এখন কোথায় আছেন জানেন না কেউ।
জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ায় এমপি ও নেতারা নিজের মোবাইল ফোনও বন্ধ রেখেছেন। বাড়িতে খোঁজ নিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এমপি ও সরকারদলীয় নেতাদের বাড়িতে। এ হামলা ও অগ্নিসংযোগ থেকে বাদ যায়নি ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও।
আত্মগোপনে থাকা জেলার ছয় সাবেক এমপি হলেন- সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর-সদরের একাংশ) প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়, সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) ড. জান্নাত আরা হেনরি, সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ, সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) শফিকুল ইসলাম শফি, সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আব্দুল মমিন মণ্ডল ও সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের চয়ন ইসলাম।
জেলার ছয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও একমাত্র চয়ন ইসলাম ছাড়া বাকিদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। অনেক চেষ্টার পরও চয়ন ইসলাম ফোন রিসিভ করেননি।
চলমান এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ছয়জন নেতাকর্মীকে হত্যা, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও ভয়ে গাঢাকা দিয়েছেন।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জে কঠোরভাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে ছাত্র-জনতা। গত ৪ আগস্ট শহরে এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগের হামলা ও গুলিবর্ষণের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এতে শহর যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রঞ্জু মিয়া (৪০), পৌর শহরের গয়লা মহল্লার আসু মুন্সীর ছেলে আব্দুল লতিফ (২৬) ও একই মহল্লার গঞ্জের আলীর ছেলে সুমন সেখের (২২) মৃত্যু হয়। এরপর বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে এদিন রাতে ওই বাড়ি থেকে শাহীন আহাম্মেদ (২৯) নামের একজন ছাত্রলীগ কর্মী ও এক অটোরিকশা চালকের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
অপরদিকে একই দিনে জেলার রায়গঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংবাদিকসহ ছয়জন এবং এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন পুলিশসহ ১৬ জনের মৃত্যু হয়। পরদিন আরও দুই পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, এমপি বা জেলার শীর্ষ নেতারা কে কোথায় আছেন কেউ জানি না। কারো সঙ্গে যোগাযোগও নেই। শুধু জেলার নেতারাই নন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারাও ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে এসব নেতা কেন্দ্রের নির্দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম সচল রাখবেন বলে জানা গেছে।