দুর্নীতি, নিম্নমানের মালামাল ক্রয়, শোষণ ও বৈষম্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ঘেরাও করেছেন সারাদেশের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকাল থেকে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনকারীরা জানান, সারাদেশে নিম্নমানের বৈদ্যুতিক মালামাল সরবরাহ করে ত্রুটিপূর্ণ বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণ করেছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিআরইবি। ফলে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। নিম্নমানের মালামাল বিআরইবি সরবরাহ করলেও দায় চাপানো হয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ওপর। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিআরইবিতে জানানো হলেও কার্যত পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
আন্দোলনে অংশ নেয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপ-মহাব্যবস্থাপক দীপক কুমার সিংহ, সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক আব্দুল হাকিম ও ওয়্যারিং ইন্সপেক্টর সালাম জাবেদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুতের মিটার, ট্রান্সফরমার, লাইটেনিং অ্যারেস্টেটরসহ বিতরণ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত সব মালামাল টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। পরে সেগুলো দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে সরবরাহ করা হয়। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ মালামাল নিম্নমানের হওয়ায় গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ে। নদীর তলদেশ দিয়ে বিভিন্ন সমিতির আওতায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু অপরিকল্পিত স্থাপন ও ক্যাবল নিম্নমানের হওয়ায় ওয়ারেন্টি মেয়াদের আগেই কয়েকটি সমিতিতে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়। ‘দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের’ কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক সাজেদুর রহমান বলেন, নিম্নমানের মালামাল ও শোষণ-বৈষম্য নিয়ে এর আগে দফায় দফায় বিআরইবিকে জানানো হয়েছে। আন্দোলন-কর্মসূচিও করা হয়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে কয়েকবার অবহিতও করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো যৌক্তিক দাবি জানানো ও প্রতিবাদ করায় সমিতির আন্দোলনকারীরা বিআরইবির রোষানলে পড়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় ২১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাও দেয় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। এরই মধ্যে ডিজিএম বেলাল হোসেনকে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানা। দেশের ক্রান্তিকালেও সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি ও হয়রানি করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির জন্য পল্লী বিদ্যুৎতায়ন বোর্ডের ‘দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটকে' দায়ী করেন তারা।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, মাঠ পর্যায়ে তেমন সম্পৃক্ততা না থাকলেও বিদ্যুতের বিতরণ ব্যবস্থায় নির্মাণ, মালামাল ক্রয় করে বিআরইবি। পরবর্তীতে কোনো ত্রুটি বা সমস্যা দেখা দিলে তদন্তে দায়ী করা হয় সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। চাকরির ক্ষেত্রে এমন হয়রানি ও বৈষম্য বছরের পর বছর ধরে চলছে। বিআরইবির এমন বিমাতাসূলভ আচরণ ও বৈষম্য থেকে মুক্তি ও সমাধান চান তারা।
এ সময় নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎসেবা প্রদানের লক্ষ্যে টেকসই বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণের দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। দুর্নীতি, শোষণ ও বৈষম্য দূর করতে বিআরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূতকরণ, জনবল সংকট দূর করা, চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের স্থায়ীকরণসহ কয়েকটি দাবি জানানো হয় কর্মসূচি থেকে। দাবি না মানলে লাগাতার আন্দলোনের কথাও জানান তারা।
কর্মসূচিতে অংশ নেন সারা দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী।