অসহযোগ আন্দোলনের শেষ মুহুর্তে উত্তাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা এখন অনেকটাই শান্ত। নাশকতারোধে মঙ্গলবার মাঠে কাজ করছে বিএনপি নেতৃবৃন্দসহ আলেম-ওলামারা। এছাড়া সেনাবাহিনীর টহল লক্ষ্য করা যায়। বিকেল সাড়ে চারটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি শান্ত ছিলো। সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা বিজয় মিছিল বের করে।
এদিকে সোমবার দুপুরে বাড়িতে হামলার পর পালিয়ে যাওয়ার আখাউড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক কোথায় আছেন সে বিষয়ে কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিও পোস্টে অনেকেই লিখেছেন মেয়র তার রাধানগরের বাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়ে সাঁতার কেটে পালিয়ে যান। অনেকে বলছেন বোরখা পড়ে তিনি আন্দোলনকারিদের সঙ্গে মিশে তিনি পালান। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য কেউ দিতে পারেননি। হামলার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওনার নির্দেশেই বাড়ির ছাদ থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হলে একাধিক বিক্ষোভাকারি আহত হলে উত্তেজনা ছড়ায়। এরপরই বিক্ষুব্ধ লোকজন মেয়রের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে বাড়ির সব কিছু লুট হয়। মেয়রের অনুপস্থিতিতে প্যানেল মেয়র মিলি আক্তার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মঙ্গলবার সকাল থেকে মেয়রের কক্ষে বসে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
এদিকে মঙ্গলবার সকালেও মেয়রের বাড়িতে লুটপাট চলতে থাকে। বাড়ির দালান ভবনের রড, ইটও খুলে নিতে থাকে লোকজন। বিষয়টি দেখতে পেয়ে বিএনপি নেতারা লুটপাটকারিদেরকে সরিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে তারা বাড়ির সামনে রশি টানিয়ে দেন। বিএনপি নেতারা চলে গেলে আবার লুটপাট শুরু হয়। আবার ছুটে এসে লুটপাটকারিদেরকে শাসিয়ে সরিয়ে দেন। এ সময় উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক মো. জয়নাল আবেদীন আব্দু, সদস্য সচিব মো. খোরশেদ আলমসহ মো. বাহার মিয়া, মো. সেলিম ভূঁইয়া, জিয়াউল হাসান সানি, মো. ইমরান মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে পৌর এলাকার মহিউস সুন্নাহ মাদরাসায় বৈঠকে বসেন আখাউড়ার আলেম-ওলামা ও ইমাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ। ওই বৈঠকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘর রক্ষা করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়। মাওলানা আসাদ আল হাবীবের সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মুফতি মো. আসাদুজ্জামান, কাজী মো. মাঈনুদ্দিন, মাওলানা মো. হেলাল, মুফতি ইব্রাহিম, মো. বিল্লাল আহমেদ, হাফেজ রাসেল, মো. বায়েজিদ প্রমুখ। হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব বিশ^জিৎ পাল বাবু। এ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি, আখাউড়ার বিভিন্ন মসজিদে নামাজের বয়ানে মন্দির ও বাড়িঘর রক্ষায় সচেতনার কথা বলা হয়। এছাড়া সন্ধ্যার পৌর এলাকার রাধামাধব আখড়ায় হেফাজতের নেতৃত্বে পাহারা দেওয়া হয়।
সন্ধ্যার দিকে শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ থেকে বিজয় মিছিল বের হয়। মিছিলটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পৌর মুক্তমে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। পরে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।