দিনাজপুরের পার্বতীপুরে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দলের নির্যাতনে নিহত দিন মজুর অহিদুল হক হত্যাকান্ডের ৮ দিন অতিবাহিত হলেও হত্যাকান্ডে জড়িত খতিবর রহমান খতুসহ অধিকাংশ আসামী এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে। গ্রামবাসী মামলার হুকুমের আসামী আব্দুল হালিমকে আটক করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করলেও পুলিশ নিজ দায়িত্বে এখনও কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি।
খতিবর রহমান খতু ও তার অনুসারীরা মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি দিচ্ছে বলে খোদ মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী আছিয়া খাতুন অভিযোগ করেছে।
এ নিয়ে গত মঙ্গলবার(২৩ জুলাই) দুপুরে নিহত অহিদুল হকের বাড়িতে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়েছে। এতে বক্তব্য রাখেন পার্বতীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক সরদার, পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রমুখ। বক্তারা খতিবর রহমান খতুসহ সকল আসামীকে গ্রেফতারের দাবী জানান। তা না হলে কার্ফু প্রত্যাহারের পর ইউনিয়নের সকল গ্রামবাসীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচী’র আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অহিদুল হক হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ছিল লোম হর্ষক ও বর্বরোচিত। কি কারনে সংঘঠিত হয় হত্যাকান্ডটি? জানতে চাওয়া হলে নিহতের স্ত্রী আছিয়া খাতুন ও তার ছেলে রাসেল জানায়, উপজেলার হলদীবাড়ী গ্রামের মৃত লুৎফর রহমানের পুত্র খতিবর রহমান খতুর সন্ত্রাসী দলের সদস্য হাবড়া বাজারের মোঃ রানা(২৮) সম্প্রতি তার পিতা আব্দুল হালিম ওরফে হাবা’র বাড়ি থেকে ৪টি গরু চুরি করে অন্যত্র পাচার করে দেয়।
আর এই গরু চরির দায় অন্যের উপর চাঁপাতে তার গ্যাং লিডার খতিবর রহমান খতুকে কন্টাক্ট করে মোঃ রানা। খতিবর রহমান খতু ৭০ হাজার টাকার চুক্তি নিয়ে দরগাপাড়া গ্রামের অহিদুল হককে গরু চোর প্রমান করতে ভয়ানক তৎপরতায় মেতে ওঠে। গত ১৮ জুলাই রাত আনুমানিক ৯.৩০ মিনিটে খতিবর রহমান খতু ১২/১৩ জনের সন্ত্রাসী নিয়ে নিরীহ দিন মজুর অহিদুল হককে তার বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে অপহরন করে।
অতঃপর মোটর সাইকেলযোগে নিয়ে যাওয়া হয় ডিমালির ডাঙ্গা আশ্রায়ন প্রকল্পের পাশর্^বর্তী একটি কবরস্থানে। সেখানে রাতভর নির্যাতন করে তার মুখ থেকে গরু চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করে খতিবর রহমান খতু ও তার বাহিনীর লোকজন। ব্যর্থ হয়ে তারা শরিফুল ইসলাম এর মোবাইল থেকে (০১৭৮৪১৪৩৩২০) কল করে অহিদুল হকের স্ত্রী আছিয়া খাতুনের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবী করে বলা হয় টাকা দেয়া নাহলে তার স্বামীকে গরু চরির মামলায় পুলিশের নিকট ধরিয়ে দিবে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে আবারও শুরু করে নির্যাতন। অতঃপর ওই সন্ত্রাসী বাহিনী ১৯ জুলাই সকাল ৭টায় অহিদুল হককে আব্দুল হালিমের বাড়িতে নিয়ে এসে পূনরায় নির্যাতন শুরু করে।
অহিদুল হকের স্ত্রী আছিয়া খাতুন তার স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে আসলে পূরনায় তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবী করা হয়। না দেয়ায় হালিম ও সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকেরা অহিদুল হককে প্রকাশ্যে লাঠি ও বৈদ্যুতিক সক দিয়ে নির্যাতন করে। লোহার শুল দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের মাধ্যমে রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত করে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী পুরো বাড়িটি ঘিরে রেখে অহিদুল হকের উপর লোম হর্ষক এই অমানুষিক নির্যাতন চালায়। অহিদুল হকের গগন বিদারী আর্তচিৎকারে আঁতকে ওঠে প্রতিবেশী লোকজন। কেউ যেন অহিদুল হককে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে না পারে সেজন্য বেশ কিছু প্রতিবেশী লোকদেরকে তাদের বাড়ির ভেতরে আটকিয়ে রাখা হয়। পানির পিপাষায় অহিদুল ছটফট করলেও তাকে কোন পানি পান করতে দেয়া হয়নি। অনেক পরে অহিদুলকে প্রস্রাব পান করানো হয়। অতঃপর আবারও শুরু হয় তার উপর নির্যাতন। উপর্যপুরী নির্যাতনের ফলে অহিদুল হক আনুমানিক দুপুর ১.৩০ মিনিটের দিকে মারা যায়।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নির্যাতনকারী বাহিনীর প্রধান খতিবর রহমান খতুসহ ১৩জন ও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েক ব্যক্তিকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে নিহতের স্ত্রী আছিয়া বেগম (মামলা নং- ২০, তারিখ- ১৯-০৭-২০২৪)।
পার্বতীপুর মডেল থানার অফিসার ইন্চার্জ চিত্তরঞ্জন রায় খতিবর রহমান খতুসহ ১৩জনের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা রুজু করার কথা স্বীকার করে বলেন, মামলার সকল আসামী পলাতক রয়েছে। পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতে এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে কাজ করছে।