ঢাকা সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় লিভার সিরোসিস নিরাময়
  • ডা. রুকুন উদ্দিন :
  • ২০২০-০৯-১৫ ০৬:১৪:৩৮

মানব দেহকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন সুস্থ লিভার (কলিজা)। লিভারকে বলা হয় শরীরের পাওয়ার হাউজ যা জীবন ধারনের জন্য অপরিহার্য। তাই লিভারের অসুস্থতার ফলাফল  ক্ষেত্র বিশেষে হতে পারে ব্যাপক ও ভয়াবহ। তবে লিভারের রোগ মানেই সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসায় অনেক  ক্ষেত্রেই সম্পূর্ন নিরাময় এবং জটিলতা মুক্ত থেকে মোটামুটি  স্বাভাবিক ভাবে জীবনে ফেরা যায়।

লিভার নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে লিভার সিরোসিস মানবদেহের একটি জটিল সমস্যা। কিন্তু এটি ক্যান্সার নয়। এ রোগে লিভারের সাধারণ আর্কিটেকচার নষ্ট হয়ে লিভার তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। রোগের সূচনাতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিলে লিভার সিরোসিস থেকে অনেকটা দূরে থাকা যায়।

রোগ নিয়ে অবহেলায় অনেক ক্ষেত্রেই লিভার সিরোসিস থেকে লিভারে ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে। সিরোসিসের রোগীকে সঠিক ডায়াগনোসিস করে কোনো প্রকার কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় দ্রুত রোগী আরোগ্য লাভ করে। অন্যদিকে লিভার সিরোসিস আক্রান্ত কিছু রোগী বহু বছর পর্যন্ত কোনো রকম রোগের লক্ষণ ছাড়াই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তাছাড়া রোগের শুরুতে সিরোসিস তেমন কোনো ল¶ণ থাকে না বললেই চলে। তাই রোগী আর চিকিৎসক উভয়ের প্রচেষ্টাই ক্ষ্রত্রে জরুরি।

সিরোসিস কি এবং কেন হয়
লিভারের কোষের ¶য় এবং টিস্যুর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কিংবা লিভারে যদি দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রদাহ হয়, তাহলে এর কারণে লিভারে যে ফাইব্রোসিস এবং নুডিউল বা গুটি গুটি জিনিস তৈরি হয়, এটিকেই আমরা লিভার সিরোসিস বলি। সাধারণত ভাইরাসজনিত কারণে লিভার সিরোসিস হয়। কিছু ভাইরাস যেমন হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি-এর কারণে প্রধানত লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে। তাছাড়া লিভারে অতি মাত্রায় রক্ত সঞ্চয় হওয়া কেমিক্যাল বা বিষাক্ত পদার্থে ¶তিকর প্রভাব, নিয়মিত মদপান ও অ্যালকোহলজনিত কারণেও লিভার সিরোসিস হতে পারে।

লিভার সিরোসিসের প্রকার ভেদ
১) মাইক্রোনডোলার লিভার সিরোসিস- তিন থেকে চার মিলিমিটার স্থান নিয়ে এই নোডল সৃষ্টি হতে পারে।
২) ম্যাক্রোনডোলার লিভার সিরোসিস- এর নুডোল কয়েক মি.মি হতে কয়েক সি.এম পর্যন্ত হতে পারে।
৩) মিক্সটাইপ লিভার সিরোসিস- এখানে উভয় প্রকারের নুডলস থাকতে পারে।
তাছাড়া লিভার সিরোসিসকে আরো অন্যভাবে ভাগ করা যায়-

ক) এট্রপিক সিরোসিস: এ ক্ষেত্রে লিভারের কোষগুলো খাদ্য অভাবে শুকিয়ে সংকুচিত হয়ে যায় এবং এবড়োথেবড়ো হয়ে যায়।

খ) হাইপার ট্রপিক সিরোসিস: এ ক্ষেত্রে লিভার আকৃতিগতভাবে অনেক বড় হয়ে যায়, যা নাভির কাছে পর্যন্ত নেমে আসে। যকৃৎ অত্যধিক রক্ত জমা হওয়ার কারণে এমন বড় হয়ে যায়।

গ) ফ্যাটি সিরোসিস: এখানে লিভারে অতি মাত্রায় চর্বি জমা হয়। ফলে সিরারের সংকোচিত না হয়ে লিভার বৃদ্ধি হতে থাকে এবং এবড়োথেবড়ো না হয়ে লিভার মসৃণ হয়।

ঘ) গ্লাইসোনিয়ান সিরোসিস: এই প্রকার সিরোসিসে লিভারের আকৃতি ভয়ানক পরিবর্তন ঘটে।

লিভার সিরোসিসের লক্ষণগুলো
একজন লোক যদি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হন, তবে অনেক ক্ষেত্রে ই লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। একটা পর্যায়ের পর তার কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমন: ক্লান্তি বা অবসাদ, বমি বমি ভাব ও বমি ক্ষুধামন্দা, পেটফাপা, ধীরে ধীরে পেটটি বড় হতে থাকে এবং পায়ে পানি জমে ফুলে যায়। ধীরে ধীরে শরীর দূর্বল হতে থাকে এবং ওজন কমে যায়, চর্ম এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ বর্ণ ধারণ করে। বমির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে বা শুধু রক্তবমি হতে পারে। মুখের ম্বাদ পরিবর্তন বা স্বাদহীন, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। পাইলস থেকে রক্ত যেতে পারে, কখনো ডায়রিয়া কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্ত স্বল্পতা , মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা এমোনেরিয়া, পুুরুষ এবং মহিলা উভয়ের যৌন দুর্বলতা আসতে পারে। পুরুষের স্তন বৃদ্ধি হতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ
শিশুকে হ্যাপাটাইটিসের টিকা দিতে হবে। মদ্যপান, স্প্রিট জাতীয় অন্যান্য পানীয় পান থেকে বিরত থাকতে হবে। চর্বিযুক্ত পানীয় পরিহার করতে হবে ও খাদ্যের ভেজাল দূরীকরণ।

রোগী ব্যবস্থাপনা
রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে, ধূমপান, মদপান, অতিরিক্ত লবণ, ফাস্টফুড, হোটেলের যাবতীয় খাবার, সব ধরনের চর্বি জাতীয় খাবার, নেশাজাতীয় দ্রব্য ত্যাগ করতে হবে এবং সব ধরনের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। সহজ পচ্য এবং তরল পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি টাটকা ফলমূল খেতে হবে।

সিরোসিসের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক সিরোসিসের রোগীকে সঠিক ডায়গনোসিস করে ল¶ণ ও চরিত্রানুযায়ী নিম্নোক্ত ওষুধগুলো নিয়মানুসারে সূ² মাত্রায় সেবনের মাধ্যমে চিরতরে এই রোগ আরোগ্য করা সম্ভব। ওষুধগুলো হলো-Nux – Vom, Arsenicum Album, Bryonia Alb, Marc sol, Aurum met, Heper sulph, Iodum, Suplher , Phospores , Chaina , Lycopodium , Chalidonium , Cardus-mary, Chlostorinum, Hoydrestis-can , Nitric acid , Calcaria- carb ইত্যাদি।

লেখক: প্রভাষক, উত্তরা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা
মোবাইল: ০১৭১৮-৪১২৮৯২
e-mail:mdrukun01@gmail.com

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিনামূল্যে ৩০০ জন দুস্থ রোগীর চক্ষু ছানি অপারেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন
ঝালকাঠিতে আশা’র উদ্যোগে ৫ শতাধিক মানুষকে ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান
ঠাকুরগাঁওয়ে আশা'র ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
সর্বশেষ সংবাদ