৮১ বছর বয়সী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বয়সের ভারে নাজুক হয়ে পড়েছেন বলে করছেন তার নিজ দল ডেমোক্র্যাটদের একাংশ। এ কারণে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে তাকে সরে দাঁড়ানোর জন্যে অনুরোধ করছেন তারা। যদিও বাইডেন নিজের অবস্থানে অনড় থেকে জানিয়েছেন যে, তিনি নির্বাচনে লড়বেনই। তবে এবার বড়সড় ধাক্কা খেলেন বাইডেন, আটকে গেছে নির্বাচনের অনুদানের টাকা।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেনের কয়েকজন প্রধান অর্থদাতা জানিয়েছেন, বাইডেন যদি নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ান তাহলে তার নির্বাচনী খরচ বহন করা ‘ফিউচার ফরওয়ার্ড পিএসি’তে অনুদান স্থগিত রাখবেন তারা। এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বড় অঙ্কের অর্থ আটকে যাওয়া বাইডেনের জন্য একটি বিশাল ধাক্কা।
গত জুনের শেষের দিকে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের বিতর্ক সন্তোষজনক না হওয়ায় এমন পরিস্থিতর মধ্যে পড়তে হলো বাইডেনকে। এ বিষয়ে ফিউচার ফরোয়ার্ড গ্রুপ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে গ্রুপটির একজন উপদেষ্টা আশা করছেন বাইডেনের প্রার্থিতা নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেলে দাতারা তাদের অনুদান পুনরায় শুরু করতে পারেন।
কিছুদিন আগে সিএনএন চ্যানেল আয়োজিত নির্বাচনী বিতর্কে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ধরাশায়ী হয়েছিলেন বাইডেন। ওই বিতর্ক চলাকালে বাইডেন একাধিকবার কথার মাঝখানে থেমে গিয়েছিলেন। শারীরিকভাবে যথেষ্ট তরতাজা ছিলেন না তিনি।
এ ঘটনার পর ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে বাইডেনের সক্ষমতা নিয়ে তার দলের ভেতরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বাইডেনের একজন দাতা বলেন, বিতর্কের পর থেকে ফিউচার ফরোয়ার্ড বেশ কয়েকবার তাদের কাছে অনুদান চেয়েছিল। কিন্তু তিনি এবং তার বন্ধুরা আপাতত কোনো টাকা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ফিউচার ফরোয়ার্ডের প্রেসিডেন্ট চ্যান্সি ম্যাকলিন জানান, তাদের কাছে যে সম্পদ রয়েছে তা দিয়েই প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে সর্বোত্তমভাবে সমর্থন করার চেষ্টা করা হবে।
প্রধান দাতারা বাইডেনের জয়ের সম্ভাবনা নিয়ে সন্দিহান হওয়ায় সুপার পিএসি অর্থের ঘাটতির মুখোমুখি হতে পারে। আগামী মাসে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনের পরে শুরু হওয়া বিজ্ঞাপনগুলোতে ইতিমধ্যে ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করার কথা ভাবছে তারা।
ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের আগে ফিউচার ফরোয়ার্ড দাতাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে জানিয়েছিল যে তারা নির্বাচনের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করার লক্ষ্য নিয়েছে এবং ইতোমধ্যেই ৪৩০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপালিকান প্রার্থী ডোনান্ড ট্রাম্পের প্রচারের নির্বাচনী প্রচারণার অন্যতম ইস্যু হলো ৮১ বছর বয়সী বাইডেনের বয়স এবং শারীরিক অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে বাইডেনকে বার বার এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ন্যাটো সম্মেলনের শেষ দিন সংবাদ সম্মেলনেও গোলমাল বাঁধিয়েছেন বাইডেন। প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি ভুল করে তার ভাইস প্রেসিডেন্টে কমলা হ্যারিসকে ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প’ বলে উল্লেখ করেছেন। এর দুই ঘণ্টা আগে ন্যাটোর একটি অনুষ্ঠানে তিনি ইউক্রেনের নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন’ হিসেবে সম্বোধন করেন।
এর অর্থ হচ্ছে, বাইডেনের প্রার্থিতা এখনও বিপদের মধ্যে রয়েছে। ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কে ধরাশায়ীর পর তার প্রত্যেকটি বক্তব্যের ওপর কান খাড়া রাখছেন দলের নেতারা। সেই হিসাবে বৃহস্পতিবার বড় মাপের দুটি ভুল করার কারণে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও অনেকেই হয়তো তাকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাবেন।
এদিকে, শুক্রবার ডেট্রয়েটে শহরে এক জনসভায় বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন না। জনসভায় বাইডন বলেন, ‘আপনাদের মতো ১ কোটি ৪০ লাখ ডেমোক্রেট প্রাইমারিতে আমাকে ভোট দিয়েছেন। আপনারাই আমাকে মনোনীত করেছেন, অন্য কেউ না। প্রেস নয়, পন্ডিত নয়, অভ্যন্তরীণ কোনো শক্তি নয়, দাতারা নয়... আপনারা ভোটাররা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, অন্য কেউ নয়, আর আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি না। আমি নির্বাচনে থাকছি আর এতে আমিই জিতবো।’