দিনাজপুরে বিষধর সাপের কামড়ে আরেক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বিরল উপজেলায় সাপের কামড়ে মৃত এই নারীর নাম আশা আক্তার (২০)।পর পর দুইদিনে জেলায় সাপের কামড়ে দুই নারীর মৃত্যুতে জেলা জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে,এনিয়ে আতংকের কিছু নেই বলে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন। জেলায় এখনো সাড়ে ৭৫৬ টি স্নাক এন্টিভেনম ভায়েল মজুত রয়েছে বলে জেলা সিভিল সার্জন জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার ( ২৫ জুন) সকাল ৯ টার দিকে বিরল উপজেলার ১২ নং রাজারামপুর ইউপির গরবাড়ি শিববাড়ী গ্রামে গৃহবধূ আশা আক্তার (২০) বাড়ির সামনে খুলিয়ানে গোয়ালঘর পরিষ্কার করছিলেন। এ সময় গরুর পানি খাওয়া মাটির পাত্র (পহনা)-এ থাকা বিষধর সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত আশা আক্তার ওই গ্রামের এবং ফায়ার সার্ভিসের বাবুর্চি সাব্বির আলী'র স্ত্রী।
প্রতিবেশি আঞ্জুমান আরা জানায়,একটি বিষধর গোখরা সাপ গৃহবধূ আশার ডান পায়ের গোড়ালির উপরে কামড় দেয়। গৃহবধূ আশার চিৎকারে বাড়ির লোকজন ছুটে এসে সাপটিকে ওই পানির পাত্রেই মাছ ধরার জাল দিয়ে আটক করে রাখে এবং স্থানীয় ওঝা দ্বারা গৃহবধু আশার চিকিৎসা করলে গৃহবধুর অবস্থা আরো অবনতি হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পরে তাকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু, কর্তব্যরত চিকিৎসক গৃহবধূ আশাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগের তিনি মারা যায়।
খবর পেয়ে দিনাজপুরের বিরল ধর্মপুর ফরেস্ট বিটের বিট কর্মকর্তা মহসিন আলী থানা পুলিশ সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখান থেকে মৃত অবস্থায় ওই গোখরা সাপটিকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিট কর্মকর্তা মহসিন আলী জানিয়েছেন।
মহসীন আলী জানান,উদ্ধার হওয়ার মৃত সাপটি জাত গোখরো। রাসেলস ভাইপার নয়। সাপ নিয়ে আতংক হওয়ার কিছুই নেই। সচেতন হতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে গেলে এই গৃহবধূর মৃত্যু হতোনা। ওঝা,মাহাত দেখাতে গিয়েই সময় নষ্ট করে মৃত্যু ডেকে আনা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) গোলাম মাওলা শাহ জানান, 'পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বন কর্মকর্তাসহ আমরা একটি মৃত সাপ উদ্ধার করেছে।'
অন্যদিকে সোমবার (২৪ জুন) বেলা ১২ টায় বোচাগঞ্জে উপজেলার ৫ নং ছাতোইল ইউনিয়নের শীবতলী গ্রামে বিষধর সাপের কামড়ে ভাদুরী বেওয়া (৬০) নারীর মৃত্য হয়। তিনি ওই গ্রামের মৃত জিতেন চন্দ্র রায়ের স্ত্রী।
ডেইর গ্রামের ফাঁকা মাঠে ছাগলকে খাস খাওয়াতে নিয়ে যায় ভাদুরী বেওয়া। এ সময় তাকে বিষাক্ত সাপ দংশন করে। এতে তার শরীরে সাপের বিষ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দুপুরে বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জেলায় পর পর দুই দিন সাপের কামড়ে দুই নারীর মৃত্যু ঘটনায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। মো.রফিকুজ্জামান শাহ জানিয়েছেন, সাপ নিয়ে আতংকের কিছু নেই।সাপ নিয়ে নেতিবাচক ধারণার কারণে এ ধরনের প্রাণি নির্বিচারে মারা হচ্ছে। রাসেলস ভাইপার নিয়েও গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু,২০১২ সালের বন্যপ্রাণি আইন অনুযায়ী, রাসেলস ভাইপার সাপকে সংরক্ষিত প্রাণী হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী রাসেলস ভাইপার সাপ মারা, ধরা এবং বহন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। সাপ দেখলে আমাদের খবর দিন। মারবেন না।'
অন্যদিকে রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে সচেতন করতে ভারত সীমান্তবর্তী বিরামপুর উপজেলার কৃষকদের নিয়ে এক সচেতনতা মূলক সভা হয়েছে। সোমবার উপজেলা অডিটোরিয়ামে কৃষক সমাবেশ সচেতনতা সভায় সর্প দংশনে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত সেবা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুজহাত তাসনীম আওনের সভাপতিত্বে কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ কবীর এবং প্রধান আলোচক ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম রসুল রাখি।
সমাবেশে জানানো হয়, বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত স্নাক এন্টিভেনম রয়েছে। তাই সর্প দংশনে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত সেবা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন অফিসের অফিসিয়াল পেজে জানানো হয়েছে, দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল,জেনারেল হাসপাতালসহ ১৩ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ বর্তমানে ৭৫৬ টি স্নাক এন্টিভেনম রয়েছে। তাই সর্প দংশনে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত সেবা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।