ঢাকা শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
দিনাজপুরে উচ্চমূল্যের মাছ চাষে গড়ে উঠেছে ট্যাংক পল্লী
  • শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
  • ২০২৪-০৬-০৪ ১০:১২:১৯
উচ্চমূল্যের মাছ চাষে ট্যাংক পল্লী গড়ে উঠেছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায়।এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে তুলনায় অনেক বেশি লাভ হওয়ায় অনেকে বাড়ির উঠোন ও আশপাশে গড়ে তুলেছে উচ্চমূল্যের মাছ চাষের ট্যাংক।এ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম এখন ট্যাংক পল্লী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রায় শতাধিক ট্যাংকে চাষ হচ্ছে উচ্চমূল্যের মাছ। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে শতাধিক পরিবার। অনেকে প্রস্তুতি নিয়েছে এই ট্যাংক পদ্ধতিতে মাছ চাষের। প্রায় প্রতিটি বাাসা-বাড়ির উঠোন ও আশপাশে ৪ থেকে সাড়ে ৪ ফুট উচ্চতার গোলাকার বা লম্বাটে ট্যাংক চোখে পড়ছে।কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে গেলেই দেখা মিলছে ওই ট্যাংকগুলোকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এ ট্যাংক পদ্ধতিতে চলছে উচ্চমূল্যের মাছ চাষ। এমনি দৃশ্যের দেখা মিলবে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ভবের বাজার,মন্মথপুর, হয়বতপুর, যশাই মোড়, ইন্দ্রপুর, পুরাতন বাজার, থানা মোড়, হয়বতপুরসহ বেশ কিছু এলাকায়। অনেকে নতুন ট্যাংক গড়ে তুলছেন। করছেন উচ্চমূল্যের মাছ চাষ। ভবের বাজার এলাকার নার্সারি ব্যবসায়ী মো.নুরনবী জানালেন,উচ্চমূল্যের মাছ চাষে তিনি সাড়ে ৬ মাসে ট্যাংক গড়েছেন। এই ট্যাংকে দেশী মাগুর ও শিং মাছের সাথে তেলাপিয়া মাছও চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে মাছ বড় হয়েছে।এক বার মাছ তুলেছেন। খেয়েছেন এবং বেশ কিছু বিক্রিও করেছেন। নুরুববীর বড় ভাই মৌসুমি আম-লিচুর বাগানি মো. ফরহাদুননবী জানালেন,ছোট ভাইয়ের দেখে তিনিও আড়াই মাস আগে বাগানে মাছ চাষের ট্যাংক গড়ছেন। জাল টেনে দেখেন,তার মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি ভাবছেন,আরো দু'টি ট্যাংক গড়বেন,বাগানে। হয়বতপুর গ্রামে দেখা গেল অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম বাড়ির উঠোনেই ট্যাংকে জাল দিয়ে উচ্চমূল্যের মাছ চাষ ধরছেন। তার তিনটি ট্যাংক রয়েছে।এসব ট্যাংকে তেলাপিয়া,শিং.মাগুর ও পাবদা মাছ চাষ করছেন তিনি। তিনি জানালেন, 'এই মাছ চাষ করে শুধু তার পরিবারের সচ্ছলতা নয়, পরিবারের সদস্য এবং এলাকার অনেক মানুষের আমিষের চাহিদা মিটছে। মাছগুলো দেখতে যেমন সুন্দর,তেমনি খেতেও বেশ সুস্বাদু। গ্রামে কারও বাড়িতে মেহমান বেড়াতে এলে আমাদের থেকে মাছ নিতে আসেন প্রতিবেশীরা। মাছগুলো ধরাও অনেক সহজ, একদম হাতের নাগালে। স্বল্প সময়ের মধ্যে চাহিদামাফিক মাছ তুলে দেওয়া হয়। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে। আগামীতে নতুন আরও দুটি ট্যাংকে উচ্চমূল্যের মাছ চাষ শুরু করব।’ শুধু নুরনববী,ফরহাদুননবী আর সিরাজুল ইসলাম নয়, একই পদ্ধতিতে যশাই মোড় এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান, সুশান্ত, রমিজ, পুরাতন বাজার এলাকার পিয়াস হোসেন, সোহেল, মোক্তার, মনমথপুর ইউনিয়নের মিশন এলাকার মাগদালিনা হাসদা, ফ্যামিলিয়ন হাসদাসহ অনেকেই করছেন ট্যাংকে উচ্চমূল্যের মাছ চাষ। এ ছাড়া অনেকে গলদা চিংড়ি, গুলশাসহ অ্যাকুরিয়াম ফিশ অর্থাৎ রঙিন মাছও ট্যাংকে চাষ করছেন। ফ্যামিলিয়ন হাসদা জানালেন, ট্যাংকে অ্যাকুরিয়াম ফিশ অর্থাৎ রঙিন জাতের মাছের মধ্যে রয়েছে অরেন্ডা গোল্ড ফিশ, কমেট, কইবার্প, ফাইটার, মিক্সড গাপ্নি, স্নেক স্ক্রিন গাপ্নি, ব্লাক মলি, হোয়াইট মলি এবং গোল্ডেন মলি। আমাদের বাড়িতে এসেই অনেকে কিনে নিয়ে যান এই রঙিন মাছ। জাত ভেদে একজোড়া অর্থাৎ দুটি মাছ বিক্রি হয় ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৭ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে প্রচুর পরিমাণ লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে। পুরাতন বাজার এলাকার পিয়াস হোসেন জানালেন,'গলদা চিংড়ি. গুলশাসহ একুরিয়াম ফিস অর্থাৎ রঙিন মাছও ট্যাংকে চাষ করছেন তিনি। তার ট্যাংকে একুরিয়াম ফিস অর্থাৎ রঙিন জাতের মাছের মধ্যে রয়েছে, অরেন্ডা গোল্ড ফিস, কমেট, কইবার্প, ফাইটার, মিক্সড গাপ্নি,¯েœক স্ক্রিন গাপ্নি, ব্লাক মলি, হোয়াইট মলি, গোল্ডেন মলি রয়েছে। এসব মাছের চাহিদা বেশি হওয়ায় লাভও বেশি।' টাংক পদ্ধতিতে মাছ চাষে দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাছের গুণগত মান উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়। এতে মাছের মৃত্যুহার কম। প্রাাথমিক অবস্থায় খরচ একটু বেশি হলেও পর্বতীতে লাভ অনেকে বেশি। খাদ্য খরচ প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক কম। মাছের উৎপাদন হার পুকুর বা জলাশয়ের চেয়ে অনেক বেশি। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি উদ্বৃদ্ধ ও সহযোগিতা করছে গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র-জিবিকে এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন নামে দু’টি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান। জিবিকের মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহেদুল হক জানান, এ পদ্ধতিতে চাষের ফলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাছের গুণগত মান উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত হয় এবং মাছের মৃত্যুহার নেই বললেই চলে। প্রাথমিক অবস্থায় খরচটা একটু বেশি হলেও লাভজনক এই চাষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে বেশি ঘনত্বে মাছ চাষ করা সম্ভব। যেখানে খাদ্য খরচ প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক কম। মাছের উৎপাদন হার পুকুর বা জলাশয়ের চেয়ে অনেক বেশি। পার্বতীপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু জাফর মো. সায়েম জানান, পানির গুণাগুণ বৃদ্ধি ও রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে। এ ছাড়া দেশে আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। চাষের সময় খামারকে রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। এ পদ্ধতিতে পার্বতীপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম এখন ট্যাংকে উচ্চমূল্যের মাছ চাষ পল্লী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শতাধিক ট্যাংকে উচ্চমূল্যের মাছ চাষে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে সহস্রাধিক মানুষের। নতুন নতুন আরো কিছু ট্যাংক গড়ে উঠছে। অনেকে এই পার্বতীপুরকে উচ্চমুল্যের মাছ চাষে ' ট্যাংক পল্লী' হিসেবে অবহিত করছে। যা এলাকার মানুষের জন্য গর্বের বিষয়।' নিজেদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞদের পরামর্শেই এ এলাকার মানুষ ট্যাংকে উচ্চমূল্যের মাছ চাষ করছেন। মাছ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত আগ্রহী উদ্যোক্তা এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিজ্ঞানীরা প্রায়ই ট্যাংকে উচ্চমূল্যের মাছ চাষ পরিদর্শন করেন। তারা সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে প্রসারিত ঘটছে ট্যাংক পল্লীর।
শ্রমিকদের ধর্মঘটে অচল আশুগঞ্জ নদী বন্দর
ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গণপিটুনিতে  একজনের মৃত্যু
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে সকল সুবিধা দিত হাসিনা:  আলতাফ হোসেন চৌধুরী