ঢাকা বুধবার, জানুয়ারী ১৫, ২০২৫
রিফাত হত্যা: যুক্তি খণ্ডনের পরবর্তী তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর
  • নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • ২০২০-০৯-০৬ ০৮:৫৮:৪৫

বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য উপস্থাপন করা যুক্তি খণ্ডনে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

মিন্নির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ না হওয়ায় আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে উচ্চ আদালতের দেওয়া মিন্নির জামিনের মেয়াদ।

রোববার বিকেলে মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর আদালত মুলতবি ঘোষণা করায় আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর মিন্নির বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। ওইদিন মিন্নির আইনজীবীদের উপস্থাপন করা যুক্তি খণ্ডন করবেন তারা। এরপর আদালত এ মামলার রায়ের দিন ধার্য করবেন।

এ বিষয়ে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, 'আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম আজ মিন্নির পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হবে। এর ফলে উচ্চ আদালতের দেওয়া মিন্নির জামিনের মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে। তাই এ মামলার রায়ের আগ পর্যন্ত মিন্নিকে আমার জিম্মায় জামিনে নেওয়ার জন্য আবেদন করব। কিন্তু আমাদের উপস্থাপিত যুক্তি খণ্ডনের জন্য আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। যেহেতু মিন্নির পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিতর্ক এখনো শেষ হয়নি; তাই মিন্নির জামিন এখনো বহাল রয়েছে।'
রোববার আদালতে মিন্নি [সাদা পোশাক]। ছবি: টিবিএস

রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে ৯ আসামির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী রোববার সকাল দশটায় মিন্নির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন মিন্নির আইনজীবীরা।

মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণের যুক্তি তুলে ধরতে ঢাকা থেকে বরগুনা আসেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারুক আহমেদ। আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেন মিন্নির মনোনীত আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলামও। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন মিন্নি।

মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চার ঘণ্টারও অধিক সময় ধরে আদালতে যুক্তি উপস্থাপন শেষে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করে আদালত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

 
পরে আদালত প্রাঙ্গণে মিন্নির আইনজীবী ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, 'হামলার পর গুরুতর আহত রিফাত শরীফ একা একা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে এটা উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে মিন্নি নিজেই রিফাত শরীফকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। হাসপাতাল প্রাঙ্গণের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং এ মামলার বাদী ও তার মেয়েসহ মোট ১৩ জন সাক্ষী এই সাক্ষ্য আদালতে দিয়েছেন। এটা আমরা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।'

তিনি বলেন, 'রিফাতের ওপর হামলার সময় নয়ন বন্ডকে জাপটে ধরে মিন্নি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন হামলা থেকে রিফাতকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু এটাকে ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলার ১৩ জন সাক্ষী প্রত্যেককেই বলেছেন- মিন্নি রিফাতকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন এবং এজন্যই তিনি নয়ন বন্ডকে জাপটে ধরেছেন।'

আইনজীবী ফারুক আহমেদ বলেন, 'রিফাতের ওপর হামলার ঘটনাস্থলের যে ভিডিও ফুটেজ দেওয়া হয়েছে, সে ভিডিও ফুটেজটি ১১ টুকরো। টুকরো টুকরো ভিডিও ফুটেজ দেওয়ার কারণে রিফাতকে বাঁচানোর জন্য মিন্নি যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল, সেই ফুটেজ বাদ পড়েছে। এটা আমরা আদালতের দৃষ্টিগোচর করতে চেষ্টা করেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'এছাড়াও তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মিন্নির উপস্থিতিতে বরগুনা সরকারি কলেজ মাঠে পরিকল্পনার জন্য যে মিটিংয়ের কথা বলা হয়েছে, সে মিটিংয়ের কোনো ফুটেজ তদন্ত প্রতিবেদনে জমা দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ওই মিটিংয়ের কোনো প্রত্যক্ষদর্শীকে সাক্ষী রাখা হয়নি। সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত থাকার পরও দেওয়া হয়নি ওই মিটিংয়ের কোনো ফুটেজ।'

মিন্নির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'মিন্নিকে গ্রেপ্তারের পর যেদিন আদালতে উপস্থাপন করা হয়, সেদিন মিন্নির কোনো আইনজীবী না থাকায় আদালত তার কাছে এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চান। তখন তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে হত্যাকাণ্ডের বিচার চান। ঠিক এর দুইদিন পর ওই একই আদালত মিন্নির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এটা আসলে সন্দেহজনক।'

'পুলিশ মিন্নির ওপর নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে,' বলে সাংবাদিকদের জানান আইনজীবী ফারুক আহমেদ।

তিনি বলেন, 'মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে নয়ন বন্ডের বাসা থেকে মিন্নির ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র উদ্ধারের কথা বলা হলেও এগুলোতে ফরেনসিক রিপোর্টের কোন প্রতিবেদ নেই। এ ছাড়াও এর স্বপক্ষে তদন্ত প্রতিবেদনে কোনো সাক্ষী রাখা হয়নি। এ ছাড়াও মামলার পর মিন্নির বাবার বাসা থেকে রিফাতের রক্তমাখা মিন্নির জামা কাপড় উদ্ধার করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এ উদ্ধারের ভিডিও ফুটেজ থাকার পরও এগুলো তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ না করা মানেই আসামিকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা। তাই এটা আমরা আদালতে ভিডিও ফুটেজসহ উপস্থাপন করেছি।'

মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, 'প্রকৃতপক্ষে মিন্নিকে ফাঁসানোর জন্য পাঁয়তারা চলছে। আমরা মিন্নিকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য সকল যুক্তি আদালতে তুলে ধরেছি। আমরা প্রত্যাশা করছি- এ মামলায় মিন্নি নির্দোষ প্রমাণিত হবে।'

 

আমাদের প্রধান কাজ গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন: আসিফ নজরুল
দেশ সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সংকল্প থাকতে হবে: আলী রীয়াজ
পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই: প্রধান উপদেষ্টা