দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের প্রেস ব্রিফিং কান্তনগর গ্রামে মসজিদ পুনঃনির্মান বন্ধ
- শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর:
-
২০২৪-০৩-২৪ ১৩:০৩:০৯
- Print
দিনাজপুর কাহারোল উপজেলায় মসজিদ পুনঃনির্মানকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মালম্বী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা ও ক্ষোভের নিরসন হয়েছে।দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। জেলা প্রশাসক এলাকা পরিদর্শন করে মসজিদ কমিটিকে কাজ বন্ধ রাখতে নিদের্শ দিয়েছেন।
আজ রবিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষ্যে জেলা প্রশাসক ও রাজ দেবোত্তর এষ্টেটের ট্রাষ্টি শাকিল আহমেদ এনিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছেন। বিষয়টি তুলে ধরে গনমাধ্যম কর্মীদের ঘটনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়ে জানান, 'সিদ্বান্ত না হওয়া পর্যন্ত মসজিদ পুনঃনির্মান কাজ বন্ধ থাকবে। যেহেতু জায়গাটি রাজদেবোত্তর এষ্টেটের । এখানে কোন নির্মান কাজ করতে হলে অনুমতি লাগবে।'
জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, ১৩ মার্চ রাজদেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রনজিৎ কুমার সিংহ জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন, 'কাহারোল উপজেলার কান্তনগর মৌজায় মহারাজা জগদিশ নাথ রায়ের নামীয় সম্পতিতে মসজিদ পুননির্মান করা হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়ার পরেই তাক্ষনিকভাবে কাহারোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে কাজ বন্ধসহ প্রতিবেদন দিতে বলেন। '
জেলা প্রশাসক আরো জানান, 'আজ সকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের নিয়ে কান্তনগর এলাকা পরিদর্শন গিয়েছিলাম। সেখানে মসজিদ কমিটির সঙ্গে কথা হয়েছে। এছাড়া রাজদেবোত্তর এস্টেট কমিটির সঙ্গেও সভা করেছি। দু'পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে, আপাতত সেখানে কোন নির্মান কাজ হবে না। এ নিয়ে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নিবেন।'
শাকিল আহমেদ বলেন 'দিনাজপুর সাম্প্রতায়িক সম্প্রীতির জেলা এখানে সবাই শান্তিপূর্নভাবে বসবাস করে আসছে। আমরা চাই-যেভাবে ছিলেন,সেভাবেই সবাই থাকবেন। শান্তি বজায় রাখবেন।'
এসময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) দেবাশীশ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ জানে আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহাগ চন্দ্র সাহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নুরে এ আলম এবং কাহারোল উপজেলা নির্বাহী আমিনুল ইসলামসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
প্রসঙ্গত : কয়েকদিন ধরে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কান্তনগর গ্রামে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জমিতে মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে সনাতন ধর্মলম্বী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে চাপ ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয় ।
সুমলমানদের দাবি, মামলা এবং আপোষ নামামূলে এই জামর মালিক কান্তনগর গ্রামের মুসল্লি জামে মসজিদ কমিটি।
অপরদিকে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রনজিৎ কুমার সিংহ দেবোত্তর এস্টেটের নিজস্ব জমিতে অবৈধ ভাবে সমজিদ নির্শাণ বন্ধের জন্য আবেদন করেন।
গত ১৩ মার্চ রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট রনজিৎ কুমার সিংহ জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করেছেন যে, কাহারোল উপজেলার কান্তনগর মৌজায় সি,এস ২নং খতিয়ানটি শ্রী শ্রী কান্তজিউ বিগ্রহ সেবাইত অনারেবল মহাজার জগদিশ নাথ রায় নামে প্রচারিত।ওই খতিয়ানে ৯৪.০৭ একর ও এস,এ ০৫ নং খতিয়ানে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের পক্ষে জিম্মাদার জেলা প্রশাসক ১৯টি দাগে ৬২.৪৬ একর জমি রয়েছে। বাংলা ১৪৩০ পর্যন্ত কাজনা হালনাগাদ রয়েছে। গত ১০মার্চ জানতে পারেন যে, কান্তনগর মৌজার ০৫ ও ১৬নং দাগের রাজ দেবোত্তর এস্টেটের সম্পত্তির উপর একটি পাকা মসজিদ তৈরি করা হচ্ছে। এটা শুনে গত ১১ মার্চ তিনি নির্মানাধিন মসজিদের জায়গাটি পরিদর্শন করেন। সেখানে উপস্থিত মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি মোজাম্মেল হককে তিনি জিজ্ঞাসা করেন কি ভাবে রাজ দেবোত্তর এস্টেটের জায়গায় মসজিদ নির্মাণ করছেন। তিনি জানান যে, ১৯৭৬ সালে ডিসি দিনাজপুর উক্ত জমি তাদেরকে দিয়েছেন। তার নিকট দলিল দেখরেত চাইলে তিনি একটি তিন পৃষ্ঠার আপোষনামার ফটো কপি প্রদান করেন। কপিটি তিনি যাচাই করেন, যা কোন বরাদ্দ নয়, রেষ্ট্রিকৃত দলিল নয়,মালিকানা হস্তান্তরের কোন কথা উল্রেখ নাই। আপোষ নামাটি ভূয়া ও বানোয়াট মনে হয়। তা চাড়া ১৯৯৯ সালের ৫১উখজ এ বলা হয়েছে দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তর যোগ্য নয়, উহা সকল সময়ের জন্য দেবোত্তর সম্পত্তি। রাজ দেবোত্তর এস্টেটের সম্পত্তিতে অবৈধ ভাবে মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করায় এলাকায় সনাতন র্শালম্বীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাই অবিলম্বে কাজ বন্ধ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করছি।'
এই আবেদন পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক কাহারোল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে কাজ বন্ধসহ তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, 'এখানে আগে থেকেই সেমি কাঁচা মসজিদ ছিল। এখন ২৫লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে তিন তলার ভিক্তি দিয়ে সমজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছে।১মার্চ মসজিদের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জাকারিয়া জাকা। এই জায়গাটি নিয়ে আদালতে মামলা হয়। সে সময় মামলার আদেশে উভয় পক্ষকে আপোষ করে নেয়ার জন্য বলা হয়। সেই সুত্রে গত ১৩.০৬.১৯৭৬ ইং তারিখে একটি আপোষ নামা মূলে ৮শতক জমির মালিক মসজিদ'
দিনাজপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রতন সিং বলেন, 'রাজ দেবোত্তর এস্টেটের এজেন্ট জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করার পর সব ধরণের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।'