স্বাভাবিকের চাইতে অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তি যারা মুটিয়ে যাওয়ার শিকার হয়েছেন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ। নর্থ ক্যারলোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএনসি) সাম্প্রতিক এক গবেষণা পর্যালোচনা বলছে, এর ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৮ শতাংশ বাড়ে। পাশাপাশি দুর্বল হয়ে পরে রোগ প্রতিরোধী টিকার প্রভাব।
গবেষণার ফলাফল সম্পর্কিত নিবন্ধটি সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে, জার্নাল ওবিসিটি রিভ্যিউস- এ। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের সঙ্গে জড়িত প্রধান গবেষক একে 'অত্যন্ত ভীতিকর' ফলাফল বলে মন্তব্য করেছেন।
ইউএনসি গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চার লাখ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর ওপর পরিচালিত ৭৫টি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে শুধু যে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে তা নয়, বাড়ে সংক্রমিত হওয়ারও ঝুঁকি। ইউএনসি গবেষক দল জানিয়েছে, মোটা নন এমন ব্যক্তিদের তুলনায়- অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তিদের জন্য এই হুমকি ৪৬ শতাংশ বাড়ে। আর কোভিড-১৯ এ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার মতো অবস্থার ঝুঁকি বাড়ে ১১৩ শতাংশ। এছাড়া, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকার হার বাড়ে ৭৪ শতাংশ।
মুটিয়ে যাওয়া স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় তা দীর্ঘদিন ঘরেই জানা। অজানা নয় একারণে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা তৈরি হওয়া বা তার অবনতির বিষয়টি। পাশাপাশি দুরারোগ্য রোগেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে স্থূলদেহের মানুষের। এর ফলে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, কিডনির এবং লিভারের রোগ বাড়ে।
ইতোপূর্বে নিউইয়র্ক শহরের নানা হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের উদাহরণ দেন ইউএনসি গবেষক দল। তারা জানান, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল এমন রোগীদের ৪২ শতাংশই স্থূলতাজনিত সমস্যায় ভুগেছেন। অথচ শহরটির মোট মেদবহুল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ২২ শতাংশ।
ইউএনসি'র গিলিংস গ্লোবাল স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অধ্যাপক এবং গবেষণা নিবন্ধের সহ-লেখক ড. মেলিন্ডা বেক এক বিবৃতিতে জানান, ''স্থূলতায় ভোগা বেশিরভাগ মানুষ এমন কিছু শারীরিক সমস্যায় ভোগেন, যার ফলে তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। প্রতিরোধ ব্যবস্থার এ দুর্বলতার সুযোগেই মানবদেহে আসন গেড়ে বসে কোভিড-১৯। স্থূলকায় ব্যক্তিরা ঘুমের সমস্যা, অতিরিক্ত উদ্বেগজনিত সমস্যায় বেশি প্রভাবিত। তাছাড়া, অতিরিক্ত ওজন হাসপাতালের ভর্তির পর নলের সাহায্যে তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সাহায্য করার প্রক্রিয়াতেও সমস্যা সৃষ্টি করে।''
ইতোপূর্বের আরেক অনুসন্ধানে বেক এবং তার সহকর্মী বিজ্ঞানীরা ফ্লু ভ্যাকসিন মুটিয়ে যাওয়া প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে খুব একটা কার্যকর হয় না, তা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন। করোনাভাইরাসও ফ্লু গোত্রের জীবাণু হওয়ায়, এর প্রতিরোধী টিকাও স্থূলকায় ব্যক্তির দেহে আশাপ্রদ প্রভাব ফেলবে না।
''অবশ্য, স্থূল ব্যক্তির দেহে ভ্যাকসিন একেবারেই কাজ করবে না এমনটা আমরা দাবি করছি না। কিন্তু, ভ্যাকসিনের ফলপ্রসূ প্রভাব হ্রাসে মুটিয়ে যাওয়া যে প্রভাব ফেলছে, আমরা সেদিকে ইঙ্গিত করেছি। এই বিষয়টি একটি পরিবর্তক ধরনের প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে কোভিড-১৯ টিকার কার্যকারিতার ব্যাপারে'' বেক যোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, ''কিছুটা কম সক্রিয় টিকাও কিছু মাত্রায় (মোটা) ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেবে।''
চলমান বিশ্বমারির কারণে লকডাউন আর শাটডাউনের প্রক্রিয়ায় গৃহবন্দি থাকেন কোটি কোটি মানুষ। বাড়িতে অবস্থানে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানতে গিয়ে ঘরের বাইরে হাঁটাচলা এবং ব্যায়ামের সুযোগ কমেছে অনেকের। কমেছে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন-যাপনের আরও অন্যান্য সুযোগ।