শিক্ষার্থীদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশে দিনাজপুরে আঞ্চলিক স্কিলস ও ইনোভেশন প্রতিযোগিতা
- শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
-
২০২৪-০৩-১৬ ১২:৩৫:৪৯
- Print
কারিগরি শিক্ষার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও প্রচারণাসহ শিক্ষার্থীদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশের লক্ষ্যে দিনাজপুরে হয়ে গেল রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক স্কিলস ও ইনোভেশন প্রতিযোগিতা।
আজ শনিবার (১৬ মার্চ) দিনাজপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনস্থ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অ্যাকসেলারেটিং অ্যানড স্ট্রেনদেনিং স্কিলস ফর ইকনোমিক ট্রান্সফরমেশন (ASSET) প্রকল্পের আওতায় এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা হয়। অ্যাসেট প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশের যুব, শ্রমিক, নারী, প্রতিবন্ধী, অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দেশের বেকারত্ব হ্রাস করে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।
দিনব্যাপী আয়োজিত এ উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় রংপুর অঞ্চলের ১৩টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে নির্বাচিত সর্বমোট ৩৭টি প্রকল্প প্রদর্শিত হয়। মূল্যায়ন কার্যক্রমের পর প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
প্রতিযোগিতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিতে প্রায় ১০০০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন, এসময় অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন প্লাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানারের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
পরবর্তীতে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বিষয়ক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রায় ৩৫০ জন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রধানগণ অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারে বক্তারা বলেন, সাধারণ শিক্ষায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি গ্রহণের দুই বছরের মধ্যে চাকুরি প্রাপ্তির হার প্রায় ২০ শতাংশ, অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষায় চাকুরি প্রাপ্তির হার ৭০ শতাংশ। বক্তারা আরও বলেন, এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশের কারিগরি শিক্ষার্থীদের মেধা ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটবে। একইসাথে স্থানীয় প্রশাসন, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীসহ তাদের অভিভাবক, শিক্ষক-কর্মকর্তা, শিল্পকারখানার মালিক, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝে এ আয়োজন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
আয়োজকদের মতে, সেমিনারের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব প্রচারিত হবে এবং শিক্ষক ও সুপারগণ ধারণা করতে পারবেন কেন শিক্ষার্থীদের কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করা উচিত।
উক্ত উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ফাতেমা জাহান, যুগ্মসচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মোঃ আব্দুর রহিম, অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক, ASSET প্রকল্প এবং শাকিল আহমেদ, জেলা প্রশাসক, দিনাজপুর। অনুষ্ঠানে সভপতিত্ব করেন মোঃ আজিজ তাহের খান, মহাপরিচালক, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। আরও উপস্থিত ছিলেন আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ, প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), অ্যাসেট প্রকল্প।
বক্তারা বলেন,একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং রূপকল্প ২০৪১ অর্জনে দেশের বিশাল জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধি ও জীবনভিত্তিক শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। দক্ষতা বৃদ্ধির অন্যতম হাতিয়ার কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা। এ শিক্ষার প্রসারে বিগত বছরগুলোতে কারিগরি শিক্ষাবিষয়ক ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি কার্যক্রম ছিল স্কিলস কম্পিটিশন। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় ভর্তির হার ৩০ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে অ্যাকসেলারেটিং অ্যানড স্ট্রেনদেনিং স্কিলস ফর ইকনমিক ট্রান্সফরমেশন (ASSET) প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। কারিগরি শিক্ষার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ও প্রচারণার অংশ হিসেবে কারিগরি শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা (Skills Competition) আয়োজিত হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় কারিগরি শিক্ষাঙ্গনের ১২০টি সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কিলস ও ইনোভেশন কম্পিটিশন ২০২৩ এর প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতা একযোগে সারাদেশে গত ১৭ জুন ২০২৩ খ্রি. অনুষ্ঠিত হয়। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রায় ১৮৫০টি উদ্ভাবনী প্রকল্প প্রদর্শিত হয় এবং ৩৬০ টি প্রকল্প আঞ্চলিক পর্বে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়।