দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোলার চারটি আসনে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ভোলা জেলা প্রশাসন।
জেলার চারটি আসনে ৫২৬ টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। তাঁর মধ্যে ২৬ টি কেন্দ্র দুর্গম চরাঞ্চলে। এই ২৬ টি কেন্দ্রকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এই ২৬ টি কেন্দ্রে আজ ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সব সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে।
বাকি ৫০০ কেন্দ্রের ব্যালট পেপার যাবে আগামীকাল ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন সকালে।
তবে দুর্গম চরাঞ্চলের কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট পেপারের সাথে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ ওই সব এলাকার দায়িত্বরত সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। ব্যালট পেপারগুলো ম্যাজিস্ট্রেটের জিম্মায় সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন ভোলা জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান।
ভোলা জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৩ হাজার। জেলার চারটি আসনে মোট ৫২৬ টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ভোলা-১ (সদর) আসনে ১১৪টি, ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) আসনে ১৩৮টি, ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনে ১১৯টি ও ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে ১৫৫টি।
এই চার আসনে মোট ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে ভোলা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ (নৌকা), জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়া (লাঙল), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) প্রার্থী মো. ছিদ্দিকুর রহমান (মশাল)। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৭৪ হাজার ৮১৪ জন।
ভোলা-২ (দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আলী আজম মুকুল (নৌকা), জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রার্থী মো.গজনবী (বাইসাইকেল), বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান (ডাব) ও তরিকত ফেডারেশন প্রার্থী শাহেনশাহ মো. শামসুদ্দিন মিয়া (ফুলের মালা)। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৬৫ হাজার ৪৪০ জন।
ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন (নৌকা), জাতীয় পার্টি (জাপা) প্রার্থী মো. কামাল উদ্দিন (লাঙল), বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী মো. আলমগীর (ডাব) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন (ঈগল)। এ আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৫৯ হাজার ৮১৭ জন।
ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব (নৌকা), জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান (লাঙল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী মো. আলাউদ্দিন (আম), তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. হানিফ (সোনালী আঁশ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল ফয়েজ (মাথাল)। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৫৩ হাজার ৬৮১ জন।
ভোলা জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান জানান ৬ জানুয়ারী সকালে গতকাল সকাল ৮টা থেকে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়েছে। অবাদ, সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। জেলার চারটি আসনে ৫২৬ টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ২৬ টিকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দুইজন পুলিশ ও ১২ জন আনসার সদস্য থাকবেন। অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশের সংখ্যা তিনজন করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন সে জন্য ৬ স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এর মধ্যে ভোলা ১ আসনে ২ প্লাটুন র্যাব,বিজিবি ২ প্লাটুন,নৌবাহিনী ১৫২ জন,আনসার ব্যাটলিয়ান ২ প্লাটুন,জেলা পুলিশ,জেলা গোয়েন্দা,জেলা গোয়েন্দা সহ ১০ টীম রয়েছে।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২ জন,নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৪ জন এবং একজন যুগ্ম জজ দায়িত্বরত রয়েছে।
ভোলা ২ আসনে ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট,৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট,একজন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ও ১ জন সহকারি জজ,২ প্লাটুন র্যাব,২ প্লাটুন আনসার ব্যাটলিয়ান,২ প্লাটুন বিজিবি,নৌবাহিনী ২০৫ জন,কোষ্ট গার্ডের ৪ টি টিম,পুলিশের ৮ টিম রয়েছে।
ভোলা ৩ আসনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ জন,নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৭ জন,১ জন সিনিয়র সহকারী জজ,র্যাব ২ প্লাটুন,বিজিবি ২ প্লাটুন,আনসার ১৬০০,নৌ বাহিনীর ২০০ জন সদস্য,পুলিশের ৮ টিম রয়েছে।
ভোলা ৪ আসনে ৪ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট,৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট,১ জন সিনিয়র সহকারি জজ,র্যাব ২ প্লাটুন,বিজিবি ২ প্লাটুন,নৌবাহিনী ২২৫,আনসার ব্যাটলিয়ান ২ প্লাটুন রয়েছেন।
এছাড়া ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী মাঠে টহল দিবে।
তিনি বলেন,ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে সুষ্ঠু ভাবে ভোট প্রদান করতে পারে সে জন্য ভোলা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
নির্বাচনে জেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা সার্বক্ষনিক ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন এবং জেলার ৪ টি আসনে ৮০৩ জন নৌবাহিনীর সদস্য,১৮৩ জন বিজিবি সদস্য,১৭০৫ জন পুলিশ সদস্য,৪০ জন ব্যাটলিয়ান আনসার,১০০ জন র্যাব সদস্য এবং ৩৪০ জন কোষ্ট গার্ড সদস্য ভোট শুরু থেকে শেষ হওয়া এবং ফলাফল ঘোষনা পর্যন্ত নিরাপত্তার রক্ষার্থে নিয়োজিত থাকবে।