বিএনপি"র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এর পিতা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মরহুম আবদুল মোমেন খান এর ১২ ডিসেম্বর ৩৯ তম মৃত্যু বার্ষিকী।
বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (বীরউত্তম) এর মন্ত্রীসভার সফল খাদ্যমন্ত্রী, সাবেক এমপি ও কেবিনেট সচিব এবং আধুনিক নরসিংদীর রূপকার আবদুল মোমেন খান। ১৯১৯ সালের তৎকালীন ঢাকা জেলার কালীগঞ্জ থানাধীন চরনগরদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন যা এখন নরসিংদী জেলার পলাশ থানার অন্তর্ভূক্ত। সত্তর ও আশির দশকে নরসিংদী মহকুমা জেলা ও পলাশ থানা প্রতিষ্ঠার জন্য তার অবদানই ছিল মূখ্য। স্বীকৃতি স্বরূপ এলাকাবাসীর কাছে তিনি আধুনিক নরসিংদীর রূপকার হিসেবে পরিচিত। খুব ছোট বেলা থেকেই তিনি মেধার পরিচয় দিয়ে আসছিলেন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুল জীবনে ২য় শ্রেণী ও পরে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে মেধা বৃত্তি লাভ করেন। তাঁর বাবা আবদুল বারী খান ছিলেন স্থানীয় মাইনর বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর একনিষ্ঠ অনুসারী এবং ইংরেজদের বিরুদ্ধে “ভারত ছাড়“ আন্দোলনে নিজ গ্রামের বর্ধিষ্ণু চরনগরদী ব্রিটিশ পণ্যের বর্জন উৎসবে নেতৃত্ব দেবার ফলশ্রুতিতে চাকরিচ্যুত হয়ে কারাবরণ করেন।
তিনি উন্নত শিক্ষার জন্য তার পুত্র আবদুল মোমেন খানকে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে কালীগঞ্জ রাজা কালী নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রেরণ করেন। এখন থেকে ১২০ বছরেরও আগে প্রতিষ্ঠিত রাজা কালী নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় তখন এ অঞ্চলের প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপরিচিত ছিল। মূলত পুরো গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকার মধ্যে এ বিদ্যালয়টি খ্যাতির শীর্ষে ছিল এবং সে সময়কার ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যের প্রখ্যাত শিক্ষক হিসেবে পরিচিত আর. কে নারায়ণ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরেন সেনই আবদুল মোমেন খানকে তাঁর প্রতিষ্ঠানে আকৃষ্ঠ করে নিয়ে যান। মাঝে মাঝেই প্রধান শিক্ষক তাঁর পরিবর্তে আবদুল মোমেন খানকে তাঁর নিজের ক্লাস নিতে বলতেন এবং পাশে দাঁড়িয়ে তা পর্যবেক্ষণ করতেন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনাবলী প্রদান করতেন। সে সময় মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্য বিশিষ্ট স্কুলসমূহে এ পদ্ধতির প্রচলন ছিল। সফলতার সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর আবদুল মোমেন খান ঢাকায় আসেন এবং ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের অধীনে অবিভক্ত বাংলায় পঞ্চম স্থান এবং মুসলিমদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি অর্থনীতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতোকত্তর ডিগ্রি অর্জন করে তৎকালীন উপাচার্য ঐতিহাসিক আর. সি মজুমদার প্রদত্ত প্রশংসাপত্র লাভ করেন এবং সফলতার সাথে পাবলিক সার্ভিস কমিশন এর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বেঙ্গল সার্ভিস-এ যোগ দেন।
১৯৪২ সালে তিনি মরহুমা খোরশেদা বানুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি পরবর্তীকালে খান ফাউন্ডেশন ও পরবর্তীতে খান ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত দি মিলেনিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ছিলেন। এ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠার জন্মলগ্ন থেকে তার পুত্রবধূ এডভোকেট রোখসানা খন্দকার কর্তৃক সাফল্যের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে আবদুল মোমেন খান ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের প্রথম স্পীকার নির্বাচিত হন। তিনি উপস্থিত বক্তৃতা, বিতর্ক ও অন্যান্য সহশিক্ষা কার্যক্রমে খুবই পারদর্শী ছিলেন যা তার পরবর্তী পেশা জীবনকেও সমৃদ্ধ করে। একজন সরকারী চাকুরীজীাব হিসেবে আবদুল মোমেন খান যথাযোগ্য সুনাম অর্জন করেন এবং লাহোরে সিনিয়র সিভিল সার্ভিস একাডেমীতে প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রথম স্থান অধিকার করে তৎকালীন রেক্টর ডিকে পাওয়ার (আই. সি. এস) প্রদত্ত প্রসংশাসূচক ভ্যালেডিকটরিয়ান সন্মান অর্জন করেন। যোগ্যতার নিরিখে আবদুল মোমেন খান বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ চাকুরীর পদ কেবিনেট সচিবের আসনে আসীন হন। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত চাকুরী জীবনে এর আগে তিনি খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, প্রাদেশিক সরকারের গণর্পূত, বিদ্যুত ও জ্বালানী এবং সেচ বিভাগের সচিব, এবং ১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা কাউন্সিলে আমন্ত্রিত হন বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে (১৯৭৭-১৯৮২) এবং মন্ত্রীপরিষদ সচিব (১৯৭৬-১৯৭৭) দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নরসিংদী সদর থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। উল্লেখ্য, এ নির্বাচনে তিনি সমস্ত বাংলাদেশ ৩০০ আসনে ২১৬৯ জন প্রাথীর মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট লাভ করে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি তৎকালীন নরসিংদী থানা প্রশাসনকে মহকুমা প্রশাসনে উন্নীত করেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মহকুমা ও থানা সদর দফতর রেল লাইনের উত্তর পাশে নরসিংদীর বর্তমান বিলাসদী মহল্লায় স্থাপিত হয়। তিনি বর্তমান তরোয়া মহল্লায় নরসিংদী স্টেডিয়াম স্থাপন করেন। ভেলানগরে স্থাপন করেন তৎকালীন মহকুমা ও বর্তমানে জেলা কারাগার। মরহুম আব্দুল মোমেন খানের প্রচেষ্টায়ই নরসিংদীর মানুষ ১৯৭৯ সালে তিতাস গ্যাসের সংযোগ লাভ করে।
শুধু তাই নয়, ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ঘোড়াশাল সার কারখানা স্থাপনে মরহুম আব্দুল মোমেন খানের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। এই মহান নেতা ১৯৮৪ সালের ১২ই ডিসেম্বর ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর প্রতি এলাকাবাসীর ছিল গভীর শ্রদ্ধাবোধ। গ্রামের বাড়ী চরনগরদীতে তাঁর নিজেরই মানুষের পাশে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত।