কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী মিত্র সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে তিক্ততা বাড়ছে। এর মূল কারণ কাশ্মীরীদেরে পক্ষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনমনীয় অবস্থান।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এখন উঠেপড়ে লেগেছে রিয়াদ। এক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ পাকিস্তানের সাবেক সেনা প্রধান রাহিল শরীফ। ইমরানের বিকল্প হিসেবে তাকে তৈরিও করছে সৌদি আরব।
পাকিস্তানি ও ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, রাহিল শরীফ সৌদি নেতৃত্বাধীন ইসলামি মিলিটারি অ্যালায়েন্সের কমান্ডার। পাকিস্তানের সঙ্গে পুরানো সম্পর্ক অটুট রাখতে তার ওপরই নির্ভর করতে চায় রিয়াদ।
রিয়াদ ও ইসলামাবাদ বহু পুরানো মিত্র। সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যুতে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। পাকিস্তানের অভিযোগ, কাশ্মীর ইস্যুতে নিষ্ক্রীয় ভূমিকা পালন করছে সৌদি আরব।
১৯৪৭ সালে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান আলাদা হয়। স্বায়ত্তশায়ন ও বিশেষ মর্যাদা দেয়ার শর্তে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয় কাশ্মীর। ভারতীয় সংবিধানে সংযুক্ত হয় ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫ এর এ ধারা। যদিও পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন বা বিশেষ মর্যাদা কখনোই ভোগ করতে পারেনি কাশ্মীরীরা। গেলো বছরের আগস্টে অবৈধভাবে সেই স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে ভারতের মোদি সরকার।
এরপর থেকেই ভারতের অবৈধ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) ওপর চাপ বাড়ায় পাকিস্তান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে সুস্পষ্ঠভাবে বৈঠকের আহ্বান জানায় ইসলামাবাদ। কিন্তু ফায়দা হয়নি খুব একটা।
সম্পর্কের আরও অবনতি হয়, যখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি গেলো মাসে হুঁশিয়ার করে বলেন, সৌদি আরব কাশ্মীর ইস্যুকে গুরুত্ব না দিলে সমমনাদের নিয়ে ইসলামাবাদ পদক্ষেপ নেবে।
সমালোচনায় ক্ষুব্ধ হয়ে, পাকিস্তানকে প্রতিশ্রুত ৬০০ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ এবং তেল দেয়া বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব। ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পরিশোধে ইসলামাবাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে বলেও অভিযোগ রিয়াদের বিরুদ্ধে। পরে চীন থেকে ধার নিয়ে ওই ঋণ পরিশোধ করে পাকিস্তান।
সম্পর্ক উন্নয়নে ১৭ আগস্ট পাকিস্তানের সেনা প্রধান কামার জাভেদ বাজওয়াকে রিয়াদে পাঠায় ইমরান খান প্রশাসন। যদিও এটিকে নিয়মিত সফর আখ্যা দেয়া হয়। বাজওয়ার রিয়াদ সফরের কয়েকদিন পর এক বিবৃতিতে কাশ্মীর ইস্যুতে ওআইসির ভূমিকায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ইসলামাবাদ।
গেলো সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি অস্বীকার করেন। ওইসব তথ্যকে সম্পূর্ণ ভুয়া বলে উড়িয়ে দেন তিনি। ইমরান খান বলেন, আমাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক। প্রতিনিয়ত আমাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে।
এছাড়া কাশ্মীর ইস্যুতে তিনি বলেন, ওআইসির উচিত পদক্ষেপ নেয়া। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের ভূমিকা নিয়ে ইমরান খান বলেন, রিয়াদের নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে। আমাদের এটা ভাবা কখনোই উচিত নয় যে, আমরা চাইব আর সৌদি আরব সেটা করবে।