দিনাজপুরে বিএনপি - জামাতের ডাকা দ্বিতীয় দফা ৪৮ ঘন্টা অবরোধের দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় টার্মিনাল থেকে স্বল্প সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস চলঅচল করলেও দূরপাল্লাবাস চলাচল ছিল সম্পন্ন বন্ধ । তবে শহরের হালকা যান বহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক।
আজ সোমবার (৬ নভেম্বর) অবরোধের দ্বিতীয় দিনে জামায়াত বিএনপির বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনের উল্লেখ করে ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
দিনাজপুর কোর্ট ইনস্পেক্টর এ কে এম লিয়াকত আলী বিভিন্ন থানা থেকে আটকের পর জেলা কারাগারে প্রেরনের সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন ।
বিশেষ ক্ষমতা আইনের কথা উল্লেখ করে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে দিনাজপুরের জেলার বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল সহ প্রায় দেড়শ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে বিএনপির একটি সুত্র জানিয়েছেন । এ ছাড়াও জামায়াত শিবিরের শতাধিক নেতাকমী আটক হয়েছেন ।
অবরোধ ঘোষনার পর থেকেই বিএনপি ও জামাতের নেতাকর্মীরা রাজপথে নেই । জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ও বন্ধ থাকায় নেতাকর্মীদের তেমন উপস্থিতি একেবারেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না । তবে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয় পুলিশের পাহারায় রয়েছে।
দিনাজপুরের বিভিন্ন থানার সূত্রে জানা গেছে সন্ধ্যা হওয়ার পর থেকেই নির্ধারিত একটি ইউনিয়নে পুলিশ সদস্যরা বিএনপি এবং জামায়াতের নেতাকর্মীদের আটক করার জন্য তাদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানের সময় বিএনপি ও জামায়াতের পথ পদবী ধারী নেতাকর্মীরা বাড়িতে না থাকলেও তাদের পরিবার পরিজনকে বিভিন্ন রকমের হুমকি দামকি এবং গালিগালাজ পর্যন্ত করা হয় বলেও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে বিএনপি ও জামাতের সাধারন কমী কিংবা পদবী ধারী নেতাকর্মীরা একেবারেই বাড়িতে নেই । তারা গ্রেফতার এড়াতে মাঠে-ঘাটে এমনকি ধান ক্ষেতের আইলে কিংবা জঙ্গলে রাত্রি যাপন করছেন । এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলাতেও তারা থাকতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে ।
অনেক নেতাকর্মীকে দেখা গিয়েছে ধানক্ষেতের আড়ালে বা বাড়ির পাশে ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এবং কিছু কিছু নেতা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে লিয়াজু করে কিছু নেতাকর্মীদের বাড়িতেও রাত্রি যাপন করছে বলেও খবর পাওয়া গিয়েছে।
বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা গিয়েছে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকেই মনে হচ্ছে দেশে একটি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সদস্যরা । বিএনপি জামাত শিবির কিংবা গণতন্ত্র পূর্ণপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকারী সমমানের দলগুলো নেতা কর্মীরাও আজ বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অবরোধের প্রথম দিন দিনাজপুরের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বাস ও দূরপাল্লাযান একেবারেই বন্ধ রয়েছে । তবে শহরে ছোট ছোট হালকা যানবাহন চললেও যাত্রী সংকটে রয়েছে বলেও কয়েকজন অটোচালকের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে। তারা বলেছে এই অবস্থার মধ্যে চললে পরিবার পরিজন নিয়ে একেবারেই পথে বসতে হবে । কারন অটোচালকদেরকে নির্ধারিত একটি টাকা অটো মালিকদের কাছে জমা দিতে হয়।
অটোচালক আব্দুল মোমিন বলেন, কিছুদিন আগে তার বাবা অটো এক্সিডেন্টে পা ভেঙ্গে গেলে। তিনি এখন নিজেই অটো চালক হয়ে গিয়েছেন । মাদ্রাসায় পড়াশোনা করলেও এখন তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে পরিবারের কথা চিন্তা করে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছেন । সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১০০ টাকা আয় হয়েছে । এদিকে অটো চার্জ আর এক ঘন্টার মত চালানো সম্ভব হবে এরপর তাকে বাড়িতে ফিরে যেতে হবে।
একই কথা বলেন অটোচালক মোতালেব হোসেন, তিনি বলেন অবরোধের কারণে আয় রোজগার একেবারেই কমে গিয়েছে। পরিবারের তিন সদস্য নিয়ে তার সংসার চলতে পারছেন না। এ অবস্থার মধ্যে চলতে থাকলে দিশারা হয়ে পড়ে চলতে হবে তাকে।