গাজীপুরের শ্রীপুরে হাসপাতালের সিজারিয়ান অপারেশনের বিল পরিশোধ করতে না পেরে দত্তক দেয়া নবজাতকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন এক ব্যবসায়ী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সন্তানকে বুকে পেয়ে যেন খুঁশির বাঁধ ভেঙ্গেছে মা শিরিন আক্তারের। জন্মের তিন দিন পর শিশুকে হারিয়ে তার বুকে যে শূণ্যতা ছিল তাও দুর হয়েছে এখন। এছাড়াও শিশুটির নানাকে একটি ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা কিনে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ী।
এ বিষয়ে গত ২৮ অক্টোবর “ হাসপাতালের বিলের বিনিময়ে নবজাতক দত্তক ” শিরোনামে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তা ওই ব্যবসায়ী ও শ্রীপুর উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। তাৎক্ষণিক ভাবে ওই নবজাতককে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নেন তারা।
শনিবার (৪ অক্টোবর) বেলা ১২টায় উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে নবজাতক দেখতে যান দেখতে যান ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বাদশা। তিনি গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজের বড় ভাই। এ কাজে তাকে সহায়তা করেন গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য হাজী ইসমাইল হোসেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম ও ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বাদশার উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইসমাইল হোসেন গত বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের মধুপুর এলাকা থেকে দত্তক নেয়া পরিবারকে বুঝিয়ে মা শিরিন আক্তারের কোলে ফিরিয়ে দেয়া হয় শিশুকে। এ পরিবারটির অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে এসময় হাসপাতালের বিল হিসেবে পরিশোধ করা টাকাও ওই পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হয়।
শিরিনের পরিবার জানান, শিরিন আক্তারের স্বামী আরিফুল ইসলাম বিভিন্ন পরিবহনে সহকারী (হেলপার) হিসেবে কাজ করে। সে মাদকাসক্ত, বিভিন্ন সময় তাকে মাদক ছাড়তে অনুরোধ করার পরও তিনি মাদক না ছাড়ায় ৪/৫মাস আগে তার সাথে তার সাথে পরিবারের দুরত্ব তৈরী হয়। এরপর থেকে তার সাথে কোন যোগাযোগ নেই।
গত ১৬ অক্টোবর সন্তান সম্ভবা মেয়ে শিরিন আক্তারকে নিয়ে ময়মনসিংহের চরপাড়া এলাকার স্বাধীন নার্সিং হোমে ভর্তি করান বাবা সিরাজুল ইসলাম। সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন শিরিন আক্তার। পরে হাসাপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পেরে শিশুটিকে স্থানীয় আল-আমিনের মাধ্যমে তার ময়মনসিংহের ইশ্বরগঞ্জের এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দিয়ে দেন। দত্তক নেয়া পরিবারটি তখন হাসপাতালের বিল পরিশোধ করে শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায়।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, একটি শিশু জন্মের পর নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার মায়ের কোলে থাকা তার অধিকার। তবে পরিবারটির অসহায়ত্বের জন্য এ শিশুকে অন্যের কোলে তুলে দিয়েছিল। আমাদের নজরে আসার পর আমরা উদ্যোগী হয়ে শিশুকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছি। আমাদের চাওয়া ছিল শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা। আমরা সমন্বিত ভাবে সেই চেষ্টায় করেছি।
ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বাদশা বলেন, আধুনিকতার চুড়ান্ত শিখরে এসেও এরকম বর্বরতার যে বাস্তব সাক্ষী হব সেটা কখনো ভাবিনি। বর্তমান সমাজে এখনো নবজাতককে দত্তক হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে হয়! বিষয়টি আমাকে কাঁদিয়েছে, আমাকে স্তব্ধ করেছে। তাৎক্ষণিক ভাবে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময়ের চেষ্টার পর আলোচনা করে হাসপাতালের বিলসহ যাবতীয় খরচ বহন করে নবজাতককে তার মায়ের কোলে ফেরত দিতে সক্ষম হয়েছি। আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকেই কাজটি করেছি।