ঢাকা শনিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
“সবার জন্য সুস্থ ফুসফুস”
  • অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান
  • ২০২৩-০৯-২৪ ০৮:৪০:২৩

জীবন চলমান রাখার জন্য, জীবনকে সুস্থ রাখার জন্য, জীবনকে উদ্যাপনের জন্য চাই সুস্থ ফুসফুস, সুস্থ নিঃশ্বাস আর বিশুদ্ধ বাতাস। একটি সুস্থ ফুসফুসের গুরুত্ব যে কত ব্যাপক সেই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতি বছর ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে পালিত হয় “বিশ্ব ফুসফুস দিবস”। ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ, ফুসফুসের যত্ন বিভিন্ন ধরণের রোগ থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করার উপায়, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও ফুসফুসের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে সবাইকে বিস্তারিতভাবে জানানো এবং নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এই বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলার জন্য এই দিবসটি পালিত হয়।

ফুসফুসের যতেœর শুরু মাতৃজঠরে থাকায় সময় হতেই। গর্ভাবস্থায় মায়ের অপুষ্টি, বিভিন্ন সংক্রামক রোগের সংক্রমণ, সময়ের পূর্বে অপরিণত অবস্থায় স্বল্প ওজনের শিশুর জন্মগ্রহণ শিশুর ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের কারন হতে পারে। আবার জন্মের পর মাতৃদুগ্ধ পান নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমায়। তাই হবু মা এবং নতুন মায়ের যতœ শিশুর সুস্থ ফুসফুসের পূর্বশর্ত। অন্যদিকে ধূমপায়ী বাবা শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যদের জন্যই নয় এমনকি যে শিশুটি এখনও ভূমিষ্ট হয়নি তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। ধূমপায়ীমায়েদের জন্য এ কথাটি আরও বেশি সত্য। প্রকৃতপক্ষে, ধূমপান এমন একটি সামাজিক ব্যাধি যা শুধু ফুসফুসের মারাত্মক রোগ যেমন সিওপিডি, ক্যান্সার ইত্যাদিরই প্রধান কারণ নয় বরং ধূমপানের জন্য হৃদরোগ, মস্তিষ্কে স্ট্রোক, উচ্চরক্তচাপসহ আরও বহু রোগের সৃষ্টি করে। তাই সামাজিকভাবে ধূমপানবিরোধী আন্দোলনকে আরও বেগবান করা এবং ধূমপানবিরোধী আইনের কার্যকরী প্রয়োগ এখন অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফুসফুস বিভিন্ন সংক্রামক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হবার একটি প্রধান অঙ্গ। করোনামহামারী আমাদেরকে এই সত্যের সম্যকভাবে সম্মুখীন করেছে। সারা পৃথিবী এই ছোট্ট করোনাভাইরাসের কাছে অসহায় হয়ে স্তব্ধ অবস্থায় ছিল। একই ভাবে নিউমোনিয়া, যক্ষা, ইনফ্লুয়েঞ্জা এমনকি বিভিন্ন ছত্রাকজনিত রোগের ও আকর এই ফুসফুস। আশ্চর্য হলেও সত্য; সামান্য স্বাস্থ্যবিধি যেমন- নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার ইত্যাদির মাধ্যমে এই রোগগুলো অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। অন্যদিকে এই রোগগুলোর যে কোনোটি যেমন- “যক্ষা” রোগ আক্রান্ত হলে রোগটির পূর্ণ চিকিৎসা পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করতে হবে। নতুবা এই রোগগুলো শুধু জটিলতর হয়ে ওঠে তাই নয় বরং সঠিকমাত্রায় জীবাণুবিরোধী ঔষধপূর্ণ সময় পর্যন্ত গ্রহণ না করলে এই ঔষধগুলোর রেজিষ্ট্যান্স তৈরি হয়, ফলে ঔষধগুলো ঐ রোগের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

বর্তমান সময়ে পরিবেশ দূষণ এবং বায়ু দূষণ একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। বায়ু দূষণের সরাসরি আঘাত হয় ফুসফুসে। অ্যাজমা, সিওপিডিসহ বিভিন্ন ফুসফুসের শ^াসনালীর বাধাজনিত রোগের সৃষ্টি এই বায়ু দূষণেরজন্য। অতএব পৃথিবীর সজীব নির্মল বায়ু নিশ্চিতকরণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা ফুসফুসের যতেœর একটি অংশ।

জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরণের পেশা আমরা বেছে নেই। তার মধ্যে এমন কিছু পেশা আছে যা ফুসফুসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন- পাথরভাঙা, জাহাজভাঙা, ওয়েলডিং, আঁশ ও তুষজাতীয় উপাদানের সংস্পর্শে থাকা ইত্যাদি। এই পেশার কারনে তৈরি ছোট ছোট ধূলিকণা বা সূক্ষতন্তু আমাদের ফুসফুসে আটকে বিভিন্ন ধরণের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে কাজের সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করলে এই বিপর্যয় হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব- যে ব্যাপারে আমরা মোটেও সচেতন নই। তাই “অকুপেশানাল হেলথ্” বা জীবিকাসংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে, শ্বাস নিয়েই জীবনের শুরু আর নিঃশ্বাস ত্যাগেই জীবনের সমাপ্তি। মধ্যবর্তী সময়ের এই জীবনকালকে সুস্থ-সুন্দরভাবে সাজানো আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য। এ জন্য শুধুমাত্র নিজের জন্য নয়, দেশ ও দশের জন্য আমাদের সময়, শ্রম, মেধা ব্যয় করা উচিত।

ছোট, ছোট কিছু পদক্ষেপে সম্মিলিতভাবে সকলে উপকৃত হতে পারে। বিশেষত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ফুসফুসের তথা সঠিক স্বাস্থ্য রক্ষায় আরও মনোযোগী হতে হবে। শুধু চিকিৎসা নয়, প্রতিরোধে উদ্যোগী হবার এখনই সময়। করোনামহামারী আমাদের সেই শিক্ষাটাই দিয়েছে।

প্রতি বছরেরমতো এই বছরও ২৫ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে বিশ ফুসফুস দিবস। এবারের বিশ্ব ফুসফুস দিবসের প্রতিপাদ্য “সকলের জন্য ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা, কাউকে পেছনে ফেলে নয় (Access to prevention of treatment for all leave no one behind)।”

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান
অধ্যাপক, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ ও
কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬৭ জন হাসপাতালে
ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৮৮২
বন্যা পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যা করা উচিত