ঢাকা শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
নরসিংদীর হোগলা পাতা এনে দিয়েছে কর্মসংস্থান
  • হাজী জাহিদ, নরসিংদী
  • ২০২৩-০৯-২১ ০৬:২৪:০৫

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের জুজুরিয়া কান্দা গ্রামের হোগলা পাতার নতার কাড়া কারুশিল্প বদলে দিয়েছে হাজারো কর্মহীন নারী-পুরুষের জীবন। বেলাব থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়িতেই গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের হোগলা পাতার কারুশিল্প তৈরীর কারখানা।

জুহরিয়া কান্দা গ্রামের প্রায় প্রতি পরিবারেই কেউ না কেউ হোগলা শিল্পের সাথে জড়িত। ৫ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার এই পাতার রয়েছে নানা হোগল, জানালা পা ও ধারী পাড়া। ইংরেজিতেক্যটি টেইল বা বিড়ালের লেখা। রোদে শুকানো এ সকল পাতা বিশেষ কায়দায় পেচিয়ে প্রথমে দড়ি বানানো হয়। দড়ি পাকানোর কাজে পুরুষের চেয়ে মহিলারা অনেকটা এগিয়ে।

উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সরবরাহকৃত হোগলা পাতার দড়ি দিয়ে হরেকরকম কারুপণ্য তৈরি হয়। সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে এ কারুশিল্পের কাজ করার সুযোগ থাকায় জোহরিয়া কান্দা গ্রামের অধিকাংশ নারী ঐতিহ্যবাহী একুটির শিল্পের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে তারা আত্মা স্বাবলম্বী। হোগলা পাতার আড়াআড়ি ও পরিনের দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে পছন্দের কারুপণ্যের রুপ দেওয়া হয়।

এখানকার অধিকাংশ মহল্লা ও কারখানায় দলবেঁধে চলে কারুপণ্য তৈরির কাজ। মাথা, চোখ ও হাত একসাথে খাটিয়ে শৈল্পিক বিন্যাসের মাধ্যমে শিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন অসাধারণ শৈল্পিক প্রতিভা। এখানকার অধিকাংশ কারখানায় পেশাদার কারুশিল্পীদের দ্বারা মানসম্মত ও আধুনিক নকশায় হোগলা পাতার বড়ি, ফুলের টব, লড়ি বাস্কেট, কিচেন বাস্কেট ওয়ালমেট, ডাইনিং ও ফ্লোরমেট থেকে শুরু করে পাপসসহ নানা ধরনের কারুশিল্প তৈরি করা হয়।

মাপ ও সাইয়া ঠিক রাখার জন্য অধিকাংশ কারুপণ্য বানাতে লোহা ও জিআই তারের ডাইস ব্যাবহার করা হয়। প্রাকৃতিক। উপকরণ দিয়ে তৈরি এসকল কারুশিল্প পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বৈদেশিক বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। এখানের তৈরি কারুপণ্য

বায়ারদের হাত হয়ে আমেরিকা, কানাডা, চীন, জাপান, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়া সহ প্রায় ৩২টি দেশে রপ্তানি হয়। হোগলা পাতা খুব সহজেই পচনশীল হওয়ায় এতে পরিবেশ

দূষণের কোন সম্ভাবনা নেই। বিশ্বজুড়ে আরা পরিবেশ দূষনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সিগ্রাস বাস তীরের ঘাস অর্থাৎ হোগলা পাতা, তালপাতা, খেজুর পাতা ও গোলপাতা জাতীয় জিনিসের তৈরি পণ্য। পরিবেশবান্ধার পন্যের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় হোগলা পন্যের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলে স্থানীয়ভাবে সরকারী প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করলে শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি দেশের বেকার সমস্যার সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন

তরুণ শিল্পোদ্যোক্তা মাঈনুদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এ হোগলা শিল্পের সাথে জড়িত। গাজীপুরের ন্যাচারাল ক্রাফট এর অর্ডার অনুযায়ী আমার এখানে বিভিন্ন ধরনের কারুশিল্প তৈরি হয়। তার কারখানায় বর্তমানে ২থেকে আড়াই শত শ্রমিক কাজ বলেও জানান তিনি।

সুনিল চাকমা বলেন, আমি প্রায় ৭ বছর ধরে হোগলা পাতার কারুপণ্য তৈরির কাজ করছি। ওভারটাইম সহ মাসে আমি ১৭/১৮ হাজার টাকা আয় করতে পারি। এ দিয়ে আমার সংসার ভালোই চলছে।

বিনাবাইদ ইউপি চেয়ারম্যান সুলতানা রাজিয়া স্বপ্না আমার এলাকার কয়েক সহস্রাধিক নারী-পুরুষ হোগলা পাতা কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করে তারা আজ স্বাবলম্বী। এই এলাকায় কুটির শিল্প ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

বিসিক শিল্প নরসিংদীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. म রশিদ বলেন, আমরা বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলি। সেইসাথে বিনা জামানতে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকি। তাছাড়া ও তারা যেন পরিবারের বোঝা না হয় সে জন্য বিশেষ কিছু শর্ত সাপেক্ষে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋন সুবিধ দেওয়া হয়।

শ্রমিকদের ধর্মঘটে অচল আশুগঞ্জ নদী বন্দর
ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গণপিটুনিতে  একজনের মৃত্যু
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে সকল সুবিধা দিত হাসিনা:  আলতাফ হোসেন চৌধুরী