ঢাকা মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
দুপুরের খাবার সাথে নিয়েই এখন স্কুলে আসে জান্নাতুল, লামিয়া, জুনায়েদরা
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
  • ২০২৩-০৯-২০ ০৮:৫৩:৪১

দুপুরের খাবার সাথে করেই স্কুল আসে জান্নাতুল ফেরদৌস, লামিয়া আক্তার, জুনায়েদ আহমেদ, আবদুল্লাহ আহমেদ। ৪র্থ শ্রেনীর এই শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময়টাতে এখন আর বাড়ি ছুটছেনা। তাদের সবাইকে দেয়া হয়েছে টিফিন বক্স এছাড়াও  দরিদ্র শিক্ষার্থী পেয়েছে পোশাক। ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে জ্যামিতি বক্স। ১ লাখ গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের মাঝে। এমন নানা পদক্ষেপ সেখানকার শিক্ষা ব্যবস্থায়  পরিবর্তনের ছাপ ফেলতে শুরু করেছে। সবচেয়ে আলোচিত হয়ে উঠেছে স্মার্ট অভিযোগ বক্স। সুবিধে-অসুবিধে, সমস্যা- কর্তৃপক্ষকে সব কিছু জানানোর সহজ উপায় এখন শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের হাতের মুঠোয়। সম্প্রতি উদ্ধোধন হওয়া এই এ্যাপসের ব্যবহারেও অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। 

আশুগঞ্জ উপজেলার ৪৯টি প্রাথমিক, ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৫টি মাদরাসায় শিক্ষার মানোন্নয়নে এমন নানা পদক্ষেপ আলোচিত হয়ে উঠেছে।
 
খোলাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা ইয়াসমিন বলেন- টিফিন বক্স পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা মিডডে মিল বাড়ি থেকে নিয়ে আসছে। ফলে টিফিনের জন্যে এখন তাদের বাড়িতে যেতে হচ্ছেনা।  পঞ্চম শ্রেনীর সব শিক্ষার্থী পেয়েছে জ্যামিতি বক্স এছাড়া তার স্কুলের ১৬ জন দরিদ্র শিক্ষার্থী ড্রেস পেয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ বাড়ছে। তার বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী তৌহিদ স্কুলের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্যে ড্রেস ও টিফিন বক্স দেয়ার আবেদন করেছে স্মার্ট অভিযোগ বক্স নামীয় এ্যাপসে। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক পরিবেশ সৃষ্টি, শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রকৃতি ও নিসর্গের প্রতি সংবেদনশীলতা আর ভালোবাসা তৈরির লক্ষণ। উপজেলার ৭৫টি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে ১লাখ গাছের চারা বিতরণ করা হয়। এই কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত হন উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি ও কমিউনিটি লিডারগণও। আশা করা হচ্ছে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে এক লক্ষ গাছের চারায় পুরো উপজেলা সবুজাভ হয়ে উঠবে। তাছাড়া স্কুলের আঙ্গিনায় গাছের পরিচর্যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছ রোপণের আগ্রহ এবং পরিচর্যার দক্ষতা বাড়বে।
 
প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই তুলে দেয়া, উপবৃত্তি কার্যক্রম, অনগ্রসর এলাকায় স্কুল ফিডিং চালু, সরকারি বিদ্যালয়ে দপ্তরি-কাম-প্রহরী নিয়োগ, স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠন, শিক্ষকদের নতুন পদ সৃষ্টিসহ লক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগ, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু,  ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম ছাড়াও শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও খেলাধুলার প্রতি আকৃষ্ট করতে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। সরকারের এই উন্নয়ন কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রাথমিক শিক্ষা মনোন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহন ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে আশুগঞ্জে। শিক্ষার্থীদের আরো আগ্রহী করতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ ও ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় অভাবগ্রস্থ শিশুদের মাঝে নতুন স্কুল ড্রেস দেয়া হয়। 

তাছাড়া  গ্রামের স্কুলগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার নিয়ে আসে না। দীর্ঘ সময় উপোস থাকায় পড়াশুনায় অনাগ্রহ চলে আসে। কেউ কেউ দোকানের জাঙ্ক ফুড খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেকে আবার দুপুরের খাবারের অযুহাতে বিরতির সময় বাড়িতে গিয়ে বিকেলের ক্লাশে ফিরে আসে না। এ সমস্যার সমাধানে শিক্ষার্থীদের মাঝে টিফিন বক্স বিতরণ ও মিড ডে মিল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যাতে এখন থেকে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের স্কুলে বসেই মায়ের হাতে রান্না করা খাবার খেতে পারবে।  বিদ্যালয়ে গমনোপযোগী প্রায় শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি, শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সমতা আনা, ঝরে পরা রোধ ও শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোযোগি করার লক্ষে মা সমাবেশ করা হচ্ছে। যাতে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও এলাকার সুশীল শ্রেণীকেও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। উপজেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫জন করে শিক্ষার্থী ও ১জন করে শিক্ষ নিয়ে পাঁচদিন ব্যাপি শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার বিশেষ প্রশিক্ষকণ কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। 

বখাটেদের উত্যক্তের কারণে অনেক মেয়েরা স্কুল থেকে ঝরে পরে। বাল্য বিয়ে ও ছাত্রীদের উত্যক্তরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইউএনও, এসি ল্যান্ড ও মহিলা বিষয়ক অফিসারের মোবাইল নম্বর সম্বলিত বিলবোর্ড বা ব্যানার স্থাপন করা হয়েছে। তবে নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার কারনে ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকরা নির্বিঘ্নে  সংশ্লিষ্ট যেকোন মতামত বা অভিযোগ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রকাশ করতে পারে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যপদ্ধতির সঠিকতা যাচাই এবং ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দের মতামত গ্রহণের জন্য বর্তমানে যে পদ্ধতিগুলি প্রচলিত তার মধ্যে রয়েছে অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ ও প্রতিষ্ঠানে ম্যানুয়েল অভিযোগ বক্স স্থাপন প্রভৃতি। কিন্তু বর্তমানের এসকল পদ্ধতিগুলির কার্যকারিতা অনেকটাই অপ্রতুল এবং শিথিল বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সম্পর্কে সঠিক ধারনা পাওয়া অনেক ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব হয় না। এসব বিবেচনায় একটি বিশেষ এ্যাপস চালুর উদ্যোগ গ্রহন করে উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  শ্যামল চন্দ্র বসাক জানান- উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের অভিযোগ,মতামত,পরামর্শ গ্রহণের দ্রুততম এবং স্মার্ট মাধ্যম হিসেবে "স্মার্ট অভিযোগ বক্স" নামে একটি ডিজিটাল মাধ্যম চালু করা হয়েছে। অনলাইনভিত্তিক এই এপ্লিকেশনটি ব্যবহার করে উপজেলার যেকোনো অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রী সরাসরি তার অভিযোগ,মতামত,পরামর্শ যেকোন সময় যেকোন স্থান থেকে উপজেলা প্রশাসন বরাবর প্রেরণ করতে পারবে। যাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার সেগুলো আমলে নিয়ে দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

পুলিশের অসাদাচরনের প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
 শিশু রুকাইয়া রহমান আনহাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন
নীলফামারীর চিলাহাটিতে পেকিন হাঁস  পালন বিষয়ক খামার দিবস অনুষ্ঠিত