২৫ বছর পর ফিরলেন এক সন্তান, আরেকজনের অপেক্ষায় বাবা
- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
-
২০২৩-০৯-১৭ ১০:০৭:২৫
- Print
দুই ভাই হারিয়ে গিয়েছিলেন প্রায় ২৫ বছর আগে। অবশেষে, তাদের মধ্যে একজন বাবার কাছে ফিরেছেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এ মিলনে আবেগাপ্লুত বাবা-ছেলে। খুশি এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজন। এখন আরেক সন্তানের অপেক্ষায় দিন গুনছেন বাবা।
দুই যুগের বেশি সময় পর বাবার কাছে ফিরে আসা সেই যুবকের নাম মো. মাইদুল ইসলাম (৩০)। তিনি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের গোপালপুরের উত্তর সরকারটারি গ্রামের মো. আব্দুস সামাদের ছেলে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আব্দুস সামাদের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, ২৫ বছর আগে মায়ের সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে হারিয়ে যান দুই ভাই। প্রায় ২৫ বছর পর শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে ছোট ভাই মাইদুল ইসলাম ফিরে এসেছেন। তবে, বড় ভাই মতিয়ার রহমান (৩৫) এখনো নিখোঁজ। মাইদুল ইসলামের ফিরে আসার খবরে তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন গ্রামবাসী।
এলাকাবাসী জানান, আব্দুস সামাদ ও বানেছা বেগম দম্পতির দুই ছেলে মতিয়ার রহমান ও মাইদুল ইসলাম। তাদের বয়স যখন ৫-১০ বছর তখন পারিবারিক দ্বন্দ্বে মাইদুল ইসলামের বাবার সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। অন্যত্র বিয়ে করেন বানেছা বেগম। বানেছা বেগম মাইদুল ও মতিয়ারকে নিয়ে প্রথমে রংপুরে যান। পরে গাইবান্ধায় কিছু দিন থেকে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় বানেছা বেগম দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে সংসার পাতলে দুই ছেলের ঠাঁই হয় অন্যের বাড়িতে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে চুরির অপবাদে তাদের তাড়িয়ে দেন বাড়ির মালিক। তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন দুই ভাই। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর ছেলেদেরকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন মা। তবে, বাবার পরিবারের লোকজন আশা ছাড়েননি। একপর্যায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আপন ঠিকানা’র সহযোগিতায় মাইদুল ইসলামকে খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার। মাইদুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমানের বাবা মো. আব্দুস সামাদের আশা, নিশ্চয়ই একদিন বড় ছেলেকেও খুঁজে পাবেন তিনি।
মাইদুল ইসলামের চাচা মো. বদিউজ্জামাল বলেন, মাইদুল ও মতিয়ার আমার ভাতিজা। ওরা দুজন প্রায় ২৫ বছর আগে ১০-১৫ দিনের ব্যবধানে হারিয়ে যায়। আল্লাহর অশেষ রহমতে মাইদুলকে ফিরে পেলাম। আশা করি, একদিন মতিয়ারকেও খুঁজে পাব।
প্রতিবেশী মো. নুর হোসেন বলেন, মাইদুল ও মতিয়ার ৫-১০ বছর বয়সে ওর মায়ের সঙ্গে ঢাকায় যায়। কিছু দিন পর শুনি, ওরা দুই ভাই হারিয়ে গেছে। প্রায় ২৫ বছর পর মাইদুল ফিরে এলো। এখন মতিয়ারকে পাওয়ার আশায় আছে তার পরিবার।
মাইদুল ইসলাম বলেন, মা আমাদের দুই ভাইকে অন্যের বাসায় রেখেছিল। সেখানে চুরির অপবাদ দিয়ে বাড়ির মালিক আমাদের দুই ভাইকে মারপিট করে বেঁধে রেখেছিলেন। ওই বাড়ির মেয়ে আমাদের ছেড়ে দিয়ে বলেন, তোমরা দুজন চলে যাও। ভাইসহ আমি ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে মাকে অনেক খুঁজেছি। মা কোথায় থাকত, মনে পড়ছিল না। ভাই আমাকে রেখে মাকে খুঁজতে যাওয়ায় তাকেও হারিয়ে ফেলি।
তিনি আরও বলেন, আমার বড় আশা ছিল, বাবা-মাকে ফিরে পাওয়ার সাথে বড় ভাইকেও দেখতে পাব। বড় ভাইকে জড়িয়ে ধরব। বাবা-মাকে পেলাম। কিন্তু, ভাই কোথায় আছে, জানি না। বাবা-মাকে ফিরে পেয়ে কী শান্তি পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
মো. আব্দুস সামাদ বলেন, আমার দুই ছেলেকে হারিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ওর মায়ের কাছে লোক পাঠিয়েছিলাম। একবার বলে, ছেলে দুটো হারিয়ে গেছে; আবার বলে, মারা গেছে। আমি প্রতিদিন তাহাজ্জুদের নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছি। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। ছোট ছেলে মাইদুল, বউমা মাহমুদা ও নাতিদের খুঁজে পেয়েছি। মনে একটু শান্তি পেয়েছি। আল্লাহ যদি বড় ছেলে মতিয়ারকে ফিরিয়ে দেয়, আমার আর কোনো চাওয়া থাকবে না।
নাগেশ্বরী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহাম্মেদ বলেন, সন্তোষপুর ইউনিয়নে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার খবর জানতে পেয়েছি। সেখানে আব্দুস সামাদ নামের এক ব্যক্তির দুই সন্তান হারিয়ে গেছে। দীর্ঘ ২৫ বছর পর এক ছেলে বাড়িতে ফিরে এসেছে। মাইদুল ইসলাম যদি চায়, তাহলে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনাসহ পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে।