ঢাকা মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
যমুনায় নদী ভাঙ্গানে ঘর বাড়ি হারিয়ে নির্ঘুম রাত কাটে তাদের
  • নাজমুল হোসেন, সিরাজগঞ্জ
  • ২০২৩-০৮-০১ ০৮:৪০:১৪

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। কতদিন এই ভাঙন অব্যাহত থাকবে, তা কারও জানা নেই। তবে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের কষ্টের শেষ নেই। ইতোমধ্যে অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। আরও অনেকে ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন। এ অবস্থায় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে তাদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও চলতি বর্ষা মৌসুমে শুরু হয় যমুনায় ভাঙন। জেলার শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, চৌহালী কাজিপুর উপজেলায় চলছে ভাঙনের তীব্রতা। নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, ফসলি জমি, হাটবাজার ও বিভিন্ন স্থাপনা। এরই মধ্যে অনেকে ভিটামাটি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। কেউ কেউ ভিটামাটি হারিয়ে নদীর পাড়ে পলিথিন টানিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে ভিটামাটি হারিয়ে চলে গেছেন অন্যত্র।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দেড় মাসে ভাঙনের কবলে পড়ে শাহজাদপুরের জামালপুর, এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দিসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। ভিটামাটি ছাড়া হয়েছে হাজারো মানুষ। চৌহালী ও বেলকুচিতে যমুনার উভয় তীরে চলছে ভাঙন।

ইতোমধ্যে অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।
রবিবার (৩০ জুলাই) শাহজাদপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, যমুনা নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে ভাঙছে দুই পাড়। এতে নদী পাড়ের বাসিন্দারা বসতভিটা হারাচ্ছেন। অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়ে নদীর পাড়ে পলিথিন টানিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে জীবনযাপন করছেন। কেউ আবার ঘর তোলার জায়গা না পেয়ে নদীর পাড়েই বিছানা পেতেছেন। তীব্র রোদে উত্তপ্ত হয়ে যাওয়া বালুর ওপরে জীবনযাপন চলছে তাদের।  পরিবারগুলোর শুধু থাকার নয়, খাবারের কষ্ট রয়েছে। কেউ কেউ আশপাশে দিনমজুরের কাজ করেন, কেউ নদীতে বিলীন হওয়া গাছগুলো তোলার কাজ করছেন। সেগুলো বিক্রি করে চলে তাদের জীবিকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রাম-হাঁটপাচিল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় যমুনা নদীর ডানতীর সংরক্ষণ এবং বেতিল স্পার-১ ও এনায়েতপুর স্পার-২ শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের জুনে অনুমোদন হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৬৪৭ কোটি টাকা। যা ৩০ জুন ২০২৪-এ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পে ছয়টি অংশ আছে। তবে এর কাজ শুরু হয়েছে অনুমোদনের প্রায় এক বছর পর ২০২২ সালের এপ্রিল-মে মাসে। এর একটি অংশ হলো ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে হাটপাঁচিল গ্রাম পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণকাজ। এটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭০ কোটি টাকা। ৬৪৭ কোটি টাকার প্রকল্পের বিপরীতে এখন পর্যন্ত বরাদ্দ এসেছে ১৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বরাদ্দ এসেছে ৭৮ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসে বরাদ্দ এসেছে ৬০ কোটি টাকা। বরাদ্দ আসতে দেরি হওয়ায় প্রকল্পটির এখনও দৃশ্যমান কোনও কাজ হয়নি। এখন পর্যন্ত ব্লক বানানো, জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও প্লেসিংয়ের কাজ চলছে। ১৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এই প্রকল্পে। অনেকে ঘরবাড়ি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন।

জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের সালাম শেখ বলেন, ‘যমুনার ভাঙনে ছয় বার ঘরবাড়ি হারিয়েছি। বাড়ি পরিবর্তন করে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি। এবারও ঘরের পাশে নদী চলে এসেছে। যেকোনো সময় বসতবাড়ি নদীতে চলে যাবে। নদীর ডানতীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুষ্ক মৌসুমে শুরু হলে নদী ভাঙতো না। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সঠিক সময়ে কাজ না করায় ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের।’

জালালপুর ইউনিয়নের কুটিপাড়া গ্রামের অটোরিকাশাচলক মো. স্বপন বলেন, ‘তিন বছর আগে যমুনায় বাড়িঘর চলে গেছে। তারপর এখানে এসেছিলাম, সেটাও ভেঙে গেছে। পরিবারের ১৩ জন সদস্য এখন কে কোথায় আছে, তা বলার মতো না। তবু যদি ভাঙন বন্ধ করা যেতো, তাহলেও বেঁচে যেতো অনেক পরিবার।’

ব্রাহ্মণগ্রামের বাসিন্দা ফজল আলী বলেন, ‘এখানে আমার বাড়ি ছিল। ২৫ বছর সেই বাড়িতে বসবাস করেছি। দুই বিঘা জমি, চারটি ঘরসহ সব এখন নদীর পেটে। কোথায় যাবো, কী করবো, কোনও উপায় খুঁজে না পেয়ে গ্রামের এক মাদ্রাসার জমিতে বসবাস করছি। প্রতিদিন নদী ভাঙছে। আতঙ্কে ঘুম আসে না কারও।’

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষগুলোকে সার্বিক সহায়তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। অল্প কিছু অনুদান এসেছিল, সেগুলো ভুক্তভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তবে অনুদানের তুলনায় ঘরবাড়ি হারা মানুষের সংখ্যা বেশি।’ প্রতি বছরের মতো এবারও চলতি বর্ষা মৌসুমে শুরু হয় যমুনায় ভাঙন।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন  বলেন, ‘আসলে আমাদের অনুদান খুব কম। তারপরও ওই এলাকাসহ তিন ইউনিয়নের মানুষের জন্য কিছু টিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। আমি ওই এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখবো। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে সহায়তার আবেদন করবো।’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘চলতি বর্ষা মৌসুমে সিরাজগঞ্জের কয়েক উপজেলায় যমুনা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনরোধে জরুরি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে জিও ব্যাগ ডাম্পিং অব্যাহত আছে। শাহজাদপুরে আমাদের একটি প্রকল্প অব্যাহত রয়েছে। যেটি জুন ২০২৪-এ শেষ হবে। এই প্রকল্পে সাড়ে ছয় কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ কাজ চলছে। যেটি এনায়েতপুর স্পার থেকে হাটপাঁচিল গ্রাম পর্যন্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার পরে ওই এলাকার ভাঙনরোধ হবে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো।

পুলিশের অসাদাচরনের প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
 শিশু রুকাইয়া রহমান আনহাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন
নীলফামারীর চিলাহাটিতে পেকিন হাঁস  পালন বিষয়ক খামার দিবস অনুষ্ঠিত