দিনাজপুরের বিরামপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী আদিবাসী সম্প্রদায়ের জমজ তিন ভাই বোন এসএসসি পরীক্ষায় প্রত্যেকে এ প্লাস পাওয়ায় জেলা প্রশাসক তাদেরকে সংবর্ধনা ও আর্থিক অনুদান প্রদান করেছেন।
আজ রবিবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১ টারদিকে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জমজ তিন ভাই বোনকে এই সংবর্ধনা ও আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।
গত শুক্রবার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে যমজ ৩ ভাই বোন এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রত্যেকে এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
জমজ তিন ভাই-বোন লাসার সৌরভ মূর্মু, মেরি মৌমিতা মুর্মু, মার্থা জেনিভা মুরমু।
জমজ তিন ভাই বোন জেলার বিরামপুর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের জোহানেস মূর্মু ও সোহাগিনী হাজদা দম্পতির তিন জমজ ছেলে মেয়ে। জমজ ভাই বোনের মধ্যে একজন ভাই, দুজন বোন রয়েছে।
জমজ তিন ভাইবোন বিরামপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে লাসার সৌরভ মূর্মু এ প্লাস, মেরি মৌমিতা মুর্মু গোল্ডেন এ প্লাস এবং মার্থা সেনিভা মুরমু এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
লাসার সৌরভ মূর্মু বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়েছি এখন এইচএসসিতে ভর্তি হব। সেখানেও স্বপ্ন দেখছি ভালো রেজাল্ট করার। তবে বাবার আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনায় মাঝেমধ্যে নিজেদেরকে অসহায় মনে হয়। তারপরও প্রকৌশলী হয়ে দেশের সেবা করার স্বপ্ন দেখছি।
মেরি মৌমিতা মুর্মু ও মার্থা সেনিভা মূর্মু দুই বোনই বলেন তাদের স্বপ্ন হলো দেশের চিকিৎসক হয়ে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা। বাবা ছোট্ট পদে বেসরকারি এনজিও তে চাকরি করেন। তার সেই উপার্জন দিয়ে বাড়ির আর্থিক বা অন্যান্য ভরণ পোষণ ও লেখাপড়ার খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ছে। তারপরও স্বপ্ন দেখি চিকিৎসক হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চাই। আমরা আদিবাসী হলেও দেশের নাগরিক দেশের সরকার যদি আমাদের এই লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাহলে আমরা আমাদের লেখাপড়া শেষ করে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।
জমজ তিন ভাই বোনের বাবা জোহানেস মূর্মু বলেন আমাদের তিনটি জমজ ছেলে মেয়ে হয়েছে। আর আমাদের কোন সন্তান নেই। তারা প্রত্যেকেই অনেক মেধাবী, তাই তারা চলতি এসএসসি পরীক্ষায় তিনজনেই এ প্লাস ও একজন গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। তাদের স্বপ্ন অনেক বড় হতে চায় কিন্তু আমি যে একটি বেসরকারি এনজিও তে চাকরি করে সংসার কোনরকম চালাতে পারছি। তাদের লেখাপড়া খরচটা বহন করা অনেকটা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
আমার তিন সন্তানের এসএসসির যে গাইড বই সহ অন্যান্য কাপড়-চোপড় বা পকেট খরচ বহন করা কষ্ট হয়েছিল। এইচএসসি তে ভর্তি হবে সেখানেও ভর্তির অনেক টাকা প্রয়োজন এছাড়াও কলেজের বেতন এবং তাদের লেখাপড়ার খরচ অন্যান্য অভিভাবকের তুলনায় আমার তিনগুণ বহন করতে হয়। সেটি আমার পক্ষে অনেকটাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ঘুমের ঘরে দুশ্চিন্তার স্বপ্ন দেখি। এই বুঝি ফুরিয়ে যাচ্ছে আমার সন্তানদের স্বপ্ন। কারণ আর্থিক অবস্থা বাড়ির ভিটা ছাড়া আর কিছু নেই। আমার বাসায় আমার বৃদ্ধ মা আছেন। মোট ছয় জন সদস্য নিয়েই আমার পরিবার। এই জমজ ৩ সন্তানের লেখাপড়া নিয়েই দুশ্চিন্তায় মাঝেমধ্যে ঘুম আসেনা। একজন অসহায় পিতার মতন মাঝেমধ্যে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আক্ষেপে দুচোখে জল চলে আসে এই বুঝি সন্তানদের স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে জমজ তিন ভাইবোনের সাফল্যের গল্প শোনার পর তাদেরকে আজকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনা হয়েছে। তাদেরকে ফুলের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় তারা যেন তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে এরকম একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে। আদিবাসী সন্তানেরা এখন অনেক এগিয়ে আসতেছে। লেখাপড়ার দিকে এই মুহূর্তে তাদেরকে সহযোগিতা করতে পারলে তারা আগামীতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসে দেশ সেবার কাজে যুক্ত হতে পারবে বলে আশা করছি।