নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামের সরবরাহকৃত নিম্নমানের ১৮০মেক্ট্রিক টন চাল বগুড়া জেলার কেন্দ্রীয় সান্তাহার খাদ্য বিভাগ থেকে নানা নাটকিয়তার পরে ঘটনাটি ঝড়িয়ে পড়লে চাল ফেরৎ দেয়ার সংবাদ প্রচার করেছে সময় টিভি, বিভিন্ন মিডিয়াসহ একাধিক অভিযোগও উঠেছে।
নাগেশ্বরী খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা গেছে, নাগেশ্বরী সরকারি খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান চলতি অর্থ বছর "চাল সংগ্রহ অভিযানে" পরিচিত মিলারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কম দামে অতি নিম্নমানের চাল কিনে গুদামে রাখছেন। গত (২৪জুলাই) সোমবার নাগেশ্বরী খাদ্যগুদাম থেকে ৯টি ট্রাক যোগে ১৮০মেক্ট্রিক টন নিম্নমানের চাল কেন্দ্রীয় সান্তাহার খাদ্য বিভাগে (২৫জুলাই) মঙ্গলবার সকালে পৌছায়। পরে কেন্দ্রীয় সান্তাহার খাদ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক হারুনুর রশিদ ট্রাকে থাকা বস্তার চালের চালান খালাস করতে গিয়ে দেখে চাল পচাঁ ও নিম্নমানের এতে আটকে দেয়া হয় খালাস কার্যক্রম। মঙ্গলবার সকাল থেকে চাল ভর্তি ৯টি ট্রাক কেন্দ্রীয় সান্তাহার খাদ্য বিভাগের সামনে দাড়িয়ে আছে। নানা নাটকিয়তার পরে ঘটনাটি দ্রুত ঝড়িয়ে পড়লে মিডিয়াকর্মীরা উপস্থিত হয়ে সংবাদ প্রচার করেন এবং বৃহস্পতিবার নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান সাকেন্দ্রীয় সান্তাহার খাদ্য বিভাগে উপস্থিত হয়ে ৯ট্রাক চাল ফিরিয়ে আনার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি কুড়িগ্রামে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে।
বগুড়া সান্তাহার এলএসডির ব্যবস্থাপক হারুনুর রশিদ বলেন, নাগেশ্বরী খাদ্যগুদাম থেকে আসা ৯ট্রাকে চালের বস্তা ছেড়াফাটা, ওজনে কম, চালগুলো পচাঁ, ফেকাসী ও নিম্নমানের হওয়ায় চাল খালাস না করা হয়নি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন হয়েছে এবং তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
অপরদিকে নাগেশ্বরী সরকারি খাদ্যগুদামে কৃষকের পরিবর্তে বহির্ভূতভাবে ১৫-১৬মিটারের ধান সংগ্রহ করছেন সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে গুদামের কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান। কৃষক সেকেন্দার আলী ও সৈফুর রহমানের অভিযোগ ও টিভি, বিভিন্ন পত্রিকায় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের পেক্ষিতে খাদ্য বিভাগের তদন্ত টিমের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম চলছে জানালেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনার।
চলতি বছর নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্যগুদামে ৬৮৯জন কৃষকের ধান সংগ্রহ অভিযান চলছে। কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলায় ১০হাজার ২১৭মেক্ট্রিক টান ধান ক্রয় চলমান রয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আওরঙ্গজেব অভিযোগ করে বলেন, খাদ্যগুদামের ওসিলিডি সাজেদুর রহমান ধান সিন্ডিকেট চক্র ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান মাস্টার ও নাগেশ্বরী পৌরসভা ভাসানী বাজারের সাবু হাজি, বাবলু মিয়ার সাথে চুক্তিভিত্তিক প্রতি ৩মেক্ট্রিক টন ধান বাবদ ২হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে গুদাম প্রাঙ্গনে ১৩-১৪মিটারের স্থানে বিধি অমান্য করে ১৫-১৬মিটার ধান আজ পর্যন্ত ৩৫০মেক্ট্রিক টন ক্রয় করেছেন।
অভিযোগকারী কৃষক সেকেন্দার আলী ও সৈফুর রহমান বলেন, খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে ৫দিন হয়রানি শেষে দুইজন ১হাজার টাকা দিয়ে গুদামে ধান দেই। ধানের চেক নিতে গেলে গুদামের কর্মচারী মাহাবুর রহমান ও জোবায়ের রহমান বলেন ওসিলিডি স্যারের নির্দেশ ৩মেক্ট্রিক টন ধানের চেক নিতে ২হাজার টাকা দিতে হবে। কৃষক নয়, গুদামে ধান যাচ্ছে সিন্ডিকেট চক্রের। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামের ওসিলিডি সাজেদুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের সাহস কোথায় পেলেন। কর্মচারী মাহাবুর রহমান প্রকাশ্য বলেন, আমার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা। আপনাকে যেখানে পাবো মারধর সহ হত্যার হুমকি দেয়।
রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুল আলম বলেন, কৃষকের তালিকা কৃষি বিভাগ তৈরি করে। অভিযোগ পেয়েছি ও সংবাদও প্রচার হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, সংবাদকর্মীরা সর্বদা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করবে। যে কেউ হুমকিসহ বাধাঁ প্রদান করলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, উল্লেখিত বিষয়ে খাদ্য বিভাগ থেকে তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, লিখিত অভিযোগ ও টিভি, বিভিন্ন পত্রিকায় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের পেক্ষিতে খাদ্য বিভাগের তদন্ত টিমের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, খাদ্য বিভাগ অভিযোগ তদন্ত করছে। অনিয়ম পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।