এটি কেমন শত্রুতা আর কেমনই বা প্রতিশোধ। পারিবারিক পূর্বশত্রুতার জের ধরে রাঙ্গামাটি কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চেলাছড়া এলাকায় কাঁঠাল,আম, বেল, লিচু, জাম্বুরা, সুপারি, তুলা সহ বিভিন্ন প্রজাতির ১৪টি ফলজ গাছ কর্তন করেছে আপন চাচাতো ভাইয়েরা। এতে তাদের প্রায় ১ লক্ষ টাকারও অধিক ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী পরিবার। রবিবার সকালে চাচাতো ভাই সুজিত চাকমা এবং মিন্টু চাকমার নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন লোক ধারালো কুড়াল, দা, ছুরি নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় এ ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
সোমবার (১৭ জুলাই) সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির চারিপাশে কাঁঠাল গাছ,আম গাছ, বেলগাছ, লিচুগাছ,জাম্বুরা গাছ এবং সুপারি গাছ,তুলাগাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির বিক্রয় যোগ্য ১৪টি ফলজ গাছ নির্বিচারে কেটে দেয়া হয়েছে। তুলাগাছ,জাম্বরা গাছ এবং সুপারি গাছে থোকায় থোকায় ফুল-ফল সহ মাটিতে পড়ে আছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, ২০০০ সাল থেকে জায়গা-সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল নিয়ে জেঠাতো ভাই মিন্টু চাকমা (কার্বারী), খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ইউএনও অফিসে চাকরিরত আনসার সদস্য চাচাতো ভাই সুজিত চাকমা, দিপংকর চাকমা এবং তবলা চাকমা সহ তাদের পরিবারের সাথে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বিজয় চাকমা এবং সুহিত চাকমা সাথে বিরোধ চলছে। এরপর মামলা এবং বিচার-শালিসের মাধ্যমে বিজয় চাকমা এবং সুহিত চাকমা তাদের জায়গা-সম্পত্তি ফিরে পান। জায়গা-সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করতে না পেরে প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি সহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে, সুজিত চাকমা এবং মিন্টু চাকমা। এতেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বিজয় চাকমা এবং সুহিত চাকমার পরিবার।
তারা জানান, এক পর্যায়ে কিছুই করতে না পেরে রবিবার সকালে ধারালো অস্ত্র নিয়ে এসে তাদের নিজনামীয় জায়গা থেকে সন্ত্রাসী কায়দায় ১৪টি ফলজ কর্তন করা হয়। এতেই তাদের ১লক্ষ টাকারও অধিক ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে বিজয় চাকমা ও সুহিত চাকমা কাউখালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য বিজয় চাকমা এবং সুহিত চাকমা জানান, যখন গাছগুলো কাটা হচ্ছে,তখন তারা বাড়িতে ছিলেন না। তাঁরা না থাকায় নির্বিচারে জোরপূর্বক গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। তাদের পরিবারের অন্যন্যা সদস্যরা যখন বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে,তখন সন্ত্রাসীরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এতেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তাদের পরিবার। তাই তাদের আইনের আওয়তায় এনে শাস্তির দাবি জানান তারা।
অভিযুক্ত মিন্টু চাকমা কার্বারী ও আনসার সদস্য সুজিত চাকমা জানান, এই গাছগুলো সুহিত চাকমার জায়গায় রোপন করা হয়েছে। গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়েছে এই গাছগুলো কাটার। তাই কারো অনুমতি ছাড়া গাছগুলো কেটে ফেলেছেন তারা। ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকির ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা অস্বীকার করেন।
ভূক্তভোগী বিজয় চাকমা ও সুহিত চাকমা জানান, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ইউএনও অফিসে চাকরিরত আনসার সদস্য সুজিত চাকমা যখন ছুটিতে বাড়ীতে আসে তখন অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এর ভয়ে আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এদিকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা ইউএনও অফিসে চাকরিরত আনসার সদস্য সুজিত চাকমা জানান, জায়গাটা তার নয় বলে দাবি করে বলেন আমি কেন গাছ কাটতে যাব, ভয়ভীাত ও কেন দেখাব।
৩নং ঘাগড়া ইউনিয়নের সদস্য মন্টু রঞ্জন চাকমা জানান, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তারা কাউকে তোয়াক্কা না করে ফলজ গাছগুলো নির্বিচারে কেটে ফেলেছে। তিনি আরো জানান, একবার শালিসে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কিছু গাছ কাটার। সেই গাছগুলো কাটা হয়েছে। এরপরও পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই ফলজ গাছগুলো জোরপূর্বক কেটে ফেলছে তারা।
এবিষয়ে কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ পারভেজ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়েছে। থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।