ভুরুঙ্গামারীতে শংকোষ নদী খননে তদন্ত
- কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
-
২০২৩-০৬-১৯ ১০:৫৫:১৯
- Print
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ইআইআর প্রকল্প) আওতায় আসন্ন বন্যা আর বৃষ্টি মৌসুমে ৬টি প্যাকেজে ১কোটি ৫৯লাখ টাকা ব্যয়ে মরা শংকোষ খাল খননের নামে অর্থ হরিলুটের পায়তারা করাসহ খাস জমি ছাড়াও কৃষকের নিজ নামীয় ও ক্রয়কৃত জমি জোরপুর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে খনন করায় ভুক্তভোগীরা কৃষি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মরা শংকোষ খাল পুনঃ খননে অনিয়মের সংবাদ দেশ টিভি ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সংবাদ ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশে বিএমডিএর রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী গত ১২জুন ২০২৩ তারিখের স্মারক নং-বিএমডিএ/প্রঃপঃওতঃপ্রঃ/রং:সাঃ/২০২২-২৩/১৩২২ এর তত্ত্বাবধানে সাত কর্ম দিবসের মধ্য বিএমডিএর কুড়িগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলীকে সরেজমিনে তদন্ত পুর্বক প্রতিবেদনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। এদিকে নাগেশ্বরী বিএমডিএ জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাহবুব আলম তার অনিয়ম ও দুর্নীতি চাপা দিতে তদন্তের বিরুদ্ধে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এবং মাহবুব আলমের অত্যাচারে অসহায় কৃষকরা অতিষ্ঠ।
তাজ উদ্দিন, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল লতিফসহ একাধিক কৃষকের অভিযোগে জানা যায়, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ইআইআর প্রকল্প) রংপুর সাকের্লের আওতায় নাগেশ্বরী বিএমডিএ জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাহবুব আলম ও সহকারী মেকানিক শরিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে আসন্ন বন্যা আর বৃষ্টি মৌসুমে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের মরা শংকোষ নদী পুনঃ খনন ভেল্লিকুড়ি থেকে হুচারবালা ত্রিমোহনী পর্যন্ত ৬হাজার ৯শ মিটার এলাকা মেসার্স খান ট্রেডার্স ৫টি ও মোসলেম উদ্দিন ট্রেডার্স ১টি প্যাকেজে ১কোটি ৫৯লাখ টাকা বরাদ্দে মরা শংকোষ নদী পুনঃ খনন শুরু হলেও প্রকল্পের কাজে নানা অনিয়ম ও অর্থ হরিলুটের অভিযোগ। নাগেশ্বরী বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলী মাহবুব আলমের মাস্টার প্লানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও চর ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক উদ্দিনের যোগসাজশে মরা শংকোষ নদী খাল খননের নামে খাস জমি ছাড়াও শতাধিক কৃষকের নিজ নামীয় ও ক্রয়কৃত সম্পত্তি প্রায় ৬শত একর ফসলি জমিতে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপুর্বক নামমাত্র খাল খনন করে অর্থ আত্মসাত করছেন ঠিকাদার। ফসলী জমি হারিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পথে বসেছেন অনেক কৃষক। ভুক্তভোগীরা কৃষি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশে বিএমডিএর কুড়িগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিনে তদন্ত করার কথা রয়েছে।
তাজ উদ্দিন, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ এবং আঃ জলিল, হাসেন আলী, মজিবর রহমান, নজর আলী, সমসের আলী, মাইদুল ইসলাম, ময়নাল হকসহ অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে বন্যা আর বৃষ্টি মৌসুম। শংকোষ নদীতে পানিতে ভরে গেছে। খাষ জমি ছাড়াও আমাদের বৈধ দুই ফসলি জমিতে খাল খনন করছে বিএমডিএর ঠিকাদার। বাধাঁ প্রদান করতে গেলে নাগেশ্বরী বিএমডিএ জোনের সহকারী প্রকৌশলী মাহবুব আলমের তত্ত্বাবধানে সহকারী মেকানিক শরিফুল ইসলাম এবং চর ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক উদ্দিন, সাইদুর রহমানসহ কয়েকজন নেতা উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপুর্বক নামমাত্র খাল খনন করে অর্থ আত্মসাত করছে। আমরা ফসলি জমি হারিয়ে পথে বসেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার হয় নাই। আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের মহোদয়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার আশা করছি।
ঠিকাদার মোসলেম উদ্দিন বলেন, বিএমডিএ অফিসের নির্দেশনা দেরিতে পাওয়ায় বন্যা আর বর্ষা মৌসুমে কাজ শুরু করেছি। বিএমডিএ ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে খাল খনন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে নাগেশ্বরী বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মাহবুব আলমের কাছ থেকে জেনে নিন।
নাগেশ্বরী বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মাহবুব আলম বলেন, সম্পত্তি নিজের বলে দাবি করলে কি নিজের হয়। অনলাইনে জমির কাগজপত্র যদি বাইবেল কুরআন হতো তাহলে দেশটা অনলাইনে চলতো।
বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী কুড়িগ্রাম মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশে বিএমডিএর রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তত্ত্বাবধানে আমি সরেজমিনে তদন্ত পুর্বক অভিযোগের আলোকে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের খাল খননের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে সত্যত্যা পেলে খাল খনন বন্ধসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।