বান্দরবানে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হলো ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব
- মিঠুন দাশ, বান্দরবান
-
২০২৩-০৪-১৩ ০০:৫৯:৪৫
- Print
বর্ণাঢ্য আয়োজনে পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে শুরু হয়েছে মারমা সম্প্রদায়ের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রধান উৎসব সাংগ্রাই। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, পার্বত্য জেলা পরিষদ ও বান্দরবান উৎসব উদযাপন পরিষদের যৌথ আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে তিনদিন ব্যাপী এই সাংগ্রাই উৎসবের সূচনা করা হয়। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি।
সাংগ্রাই উপলক্ষে 'আঁধারের পহাড় আলোকিত হয়ে উঠুক শিক্ষার আলোর গুণে, উৎসব পরিণত হোক সকলের কল্যাণে' এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বান্দরবানের ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠ থেকে পাহাড়ে বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষদের অংশগ্রহণে একটি সাংগ্রইং মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে এসে শেষ হয়। এ সময় শোভাযাত্রায় বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, সংস্কৃতির বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুন হাতে নিয়ে মারমা সম্প্রদায়, মুরুং (ম্রো) সম্প্রদায়, ত্রিপুরা সম্প্রদায়, খুমি সম্প্রদায়, চাকমা-তঞ্চঙ্গ্যা"সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। পরে বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের হলরুমে বয়োজ্যেষ্ঠ পূজায় অংশগ্রহন করে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা।
এসময় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লুৎফুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম, সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থোয়ইচা প্রু মাস্টার, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য সিয়ং ম্রো'সহ প্রমুখ।
সাংগ্রাই শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া পাহাড়ি তরুণ তরুণীরা জানান, পূরাতন বছরকে বিদায় ও নতুন বছর বরণেকে পাহাড়ি মারমা ভাষায় সাংগ্রাইং, চাকমা ভাষায় বিজু, তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায় বিষু, ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মুরুং ভাষায় সাংক্রান, সনাতনী ভাষায় বিয়ু"সহ পাহাড়ের এ ভাষাগুলোকে একসাথে বলা হয় বৈসাবি উৎসব। এই উৎসবে সবচেয়ে জনপ্রিয় মৈত্রি পানি বর্ষণ অনুষ্ঠান। এর পাশাপাশি নাচে-গানে পরস্পরকে ভালবাসা ও শুভেচ্ছায় সিক্ত হন পাহাড়ি যুবক যুবতীরা।
এবারের সাংগ্রাই উৎসবে সাঙ্গু নদীতে বুদ্ধ স্নান, সমবেত প্রার্থনা, জলকেলি, পিঠা তৈরি, হাজারো প্রদীপ প্রজ্জলন, বয়স্ক পূজা এবং সম্প্রদায়গুলোর নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-গান নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার শহরের উজানী পাড়া খেয়াঘাটে বুদ্ধমূর্তি স্নানের মাধ্যমে ধর্মীয় কাজ শেষে হয়ে রাতে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় রাত ৮টা থেকে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। আগামী শনিবার স্থানীয় রাজার মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে মারমা সম্প্রদায়ের এই প্রধান ধর্মীয় উৎসব সাংগ্রাই৷