রূপগঞ্জে সাংবাদিক হত্যা চেষ্টা মামলায় সন্ত্রাসী আফজাসহ গ্রেফতার দুই
- সাইফুল ইসলাম, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
-
২০২৩-০৪-১০ ১১:০৯:২৫
- Print
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সাংবাদিক সোহেল কিরণ হত্যার চেষ্টায় দায়ের করা মামলার আসামি কলি বাহিনীর সন্ত্রাসী আফজাল ও তার সহযোগী সাজুকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সকালে জেলা সদরের ফতুল্লা থানাধীন চাঁদমারি এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ জানিয়েছে।
সোমবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের গ্রেফতারের পর সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে, আদালত শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল)।
গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকি আসামীদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত বিচারের দাবি করেন এলাকাবাসী।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের "গ" জোনের ওসি পরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, মামলার পর থেকেই ডিবি পুলিশ আসামীদের গ্রেফতারে তৎপর ছিল। তবে আসামীরা আত্মগোপন করে থাকায় আমাদের কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামীদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে আমরা শনিবার সকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের চাঁদমারি এলাকায় অভিযান চালাই। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলি। এরপর মামলার মূল আসামী আফজাল ও তার সহযোগী সাজুকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারের পর আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা রিমান্ড শুনানির অপেক্ষায় আছি। রিমান্ড মঞ্জুর হলে আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। হামলার ঘটনার পেছনে আরও কেউ জড়িত থাকলে আমরা তাদেরকেও আইনের আওতায় আনব। এছাড়া মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান জেলা ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলা টিভির রূপগঞ্জ প্রতিনিধি সোহেল কিরণকে গত ৩ এপ্রিল রাতে উপজেলার কাঞ্চন বাজারে কুপিয়ে আহত করে স্থানীয় কলি বাহিনীর সদস্য সন্ত্রাসী আফজাল ও তার সহযোগীরা। পরে গুরুতর অবস্থায় সাংবাদিক সোহেলকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় এখন পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সোহেল। এই হামলার ঘটনার পরদিন সোহেলের ছোট ভাই সাংবাদিক সাহেল মাহমুদ রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
আহত সোহেল কিরণ ও তার পরিবারের অভিযোগ, মামলার পর থেকে আসামীপক্ষের লোকজন মামলা তুলে নিতে পর্যায়ক্রমে সোহেলের বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। ফলে বাধ্য জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শুক্রবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ভ্যান গাড়িতে শুয়ে থানায় আশ্রয় নেন আহত সাংবাদিক সোহেল কিরণ। এসময় সাথে ছিলেন সোহেলের বাবা মা, ভাই, স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা।
সোহেল কিরনের ভাই সাহেল মাহমুদ জানান, সোহেল তার বন্ধু সাইফুল ইসলামকে নিয়ে মঙ্গলবার তারাবি নামাজের পর রাত পৌনে ১০টার দিকে কাঞ্চন বাজারে একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় গোলাম রসুল কলির হুকুমে কলি বাহিনীর সন্ত্রাসী আফজালসহ কয়েকজন মিলে তার ও তার বন্ধু সাইফুল ইসলামের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। সাইফুল ইসলামকে এলোপাতাড়িভাবে পেটাতে থাকলে সোহেল সন্ত্রাসীদের বাধা দেন। একপর্যায়ে সন্ত্রাসী আফজালসহ হামলাকারীরা সোহেল কিরণকে চর থাপ্পর মারতে থাকে। পরে আফজালের হাতে থাকা ধারালো ধারালো ভাঙ্গা গ্লাস দিয়ে সোহেলকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
সাহেল মাহমুদ আরও জানান, আফজালসহ কলি বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল থেকে শুরু করে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে আসছে। আর আফজালসহ কলি বাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বাংলা টিভিতে একাধিকবার সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। আর ওই সংবাদ পরিবেশনকে কেন্দ্র করেই তার ভাই সোহেলকে ওই সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়।
এদিকে, "আমরা বাঁচতে চাই, আমাদের বাঁচতে দিন, নয়তো থানা হযরত আশ্রয় দিন" এই দাবি নিয়ে সোহেল কিরণসহ তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তা চেয়ে রূপগঞ্জ থানায় অবস্থান নেন । রোববার (০৯ এপ্রিল) দুপুরে দুই ঘন্টা অবস্থান নেয়ার পর এএসপি (গ-সার্কেল) আবির হোসেন এসে নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে পরিবার অবস্থান তুলে নেন।
রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি লায়ন মীর আব্দুল আলিম বলেন, সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের মধ্য দুজনকে গ্রেফতার করায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই । তবে, বাকি আসামিদের গ্রেফতার ও হামলাকারীদের উপযুক্ত বিচার না হলে সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে বৃহৎ আন্দোলন ঘোষণা দেওয়া হবে।