ঢাকা মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
ফল বিক্রেতা জিয়াউল হক হাজার কোটি টাকার মালিক
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • ২০২৩-০৩-৩১ ০৫:৫০:১৫

বাবা বেচতেন পান-বিড়ি। তারপর শুরু করেন ফল বিক্রি। এ ব্যবসায় বসতেন জিয়াউল হক। ফল ব্যবসার সঙ্গে সুদে টাকা লাগাতে শুরু করেন তিনি। সেই জিয়াউল হক আজ হাজার কোটি টাকার মালিক।

জিয়াউল হক সুনামগঞ্জের আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী। ভূমি দস্যু জিয়াউল হক সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদীর বালু পাথর অবৈধভাবে তুলে বিক্রি করছেন। দখল নিয়েছেন সব বিল।

এসব করে গড়ে তুলছেন শহরতলীর সার্কিট হাউজের সামনে সুইমিংপুল বিশিষ্ট বাড়ি। যার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ওয়েজখালিতে একটি বাগানবাড়ি রয়েছে-যার মূল্য আনুমানিক ৫ কোটি টাকা। 
মধ্যবাজারে হক আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, পানামা আবাসিক হোটেল, সাধনা বিপনি বিতান, সুনামগঞ্জ সদরে তেথুরিয়া লক্ষন সিড়ি মৌজায় ১০০ বিঘার উপরে জমি, সদরে নিশ্চিন্তপুর মৌজায় ১৫০ বিঘার উপরে জমি, ছাতক উপজেলার জাউয়া মৌজায় ১০০ বিঘা উপরে জমি সহ আরো বিপুল পরিমান নামে- বেনামে আরো সম্পদ রয়েছে তার।

*যেভাবে জিয়াউল হকের উত্থান

বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের সময়। ওই সময় সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটিতে স্থান করে নেন জিয়াউল হক। তার সদস্য নম্বর ছিল ১৫৮। একই কমিটিতে স্থান পান তার বড় ভাই রেজাউল হক স্বেচ্ছাসেবক বিষয় সম্পাদক, তার মামা কোষাধক্ষ শামছুল ইসলাম, ভগ্নিপতি অধ্যক্ষ শের গুল আহমদ সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক, ৭২নং সদস্য তার বাবা নুরুল হক। এই কমিটির সভাপতি সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি নাজির হোসেন।

বিএনপির পরিবার হওয়ার সুবাদে সে সময় জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য করা হয় নুরুল হকে। সে থেকেই হাওর-বিল থেকে বালু মহাল, শ্মশান থেকে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল ছাড়াও খাদ্য গুদামে ধানচাল সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য করে টাকা বানাতে শুরু করেন।
সরকার পাল্টালেও পাল্টেনা তার প্রভাব। ২০১৪ সালে সুনামগঞ্জ-১ আসনেরে এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সাথে পার্টনারশিপ ব্যবসা শুরু করেন জিয়াউল হক। এর পর থেকে জিয়াউল আর পেছনে ফিরে তাকান নি।
ধুপাজান ও ফাজিলপুর বালু মহালে চাঁদাবাজি, পুলিশ নিয়োগে দালালী, থানার দালালী সহ যায়গা দখল, খদ্যগুদামে সিন্ডিকেট করে পঁচা চাল সরবরাহ, কৃষকদের নামে বেনামে গুদামে ধান সরবরাহ করছেন জিয়াউল হক।

সুনামগঞ্জ শহরের তারেক, জোসেফ, সাকিল, হাসননগর এলাকার মিজানুল হক ডন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ভাদেরটেক গ্রামের তৈয়বুর ও তার ভাই মনির হোসেন, দিরাই উপজেলার পাথারিয়া গ্রামের নুর আলম সহ সুনামগঞ্জের সন্ত্রাসীদের নিয়ে জিয়াউল হক গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। এদের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পান না কেউ। 

এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বালুমহালে চাদাবাজী ও হিন্দুদের জায়গা দখল করে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজের নামে দলিল করিয়ে নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক ব্যক্তি দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবর অভিযোগ করেছেন। 

ফল বিক্রেতা থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক কি ভাবে হলেন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি করেছেন তিনি।

এর আগেও সিলেট দুর্নীতি দমন কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন শাহীন চৌধুরী নামের জনৈক ব্যক্তি। তিনিও একই দাবি করেছেন।

*যত অভিযোগ জিয়াউল হকের বিরুদ্ধে

জোয়াল ভাংগার হাওর, লাইয়া গজারিয়া গ্রুপ জল মহাল, করচা নদী গ্রুপও ছনুয়া বনুয়া বিল। এই বিলগুলোর অবস্থান সুনামগঞ্জ সদর থানায়। বগিয়াদী গ্রুপ জলমহাল ও সোনাতলা বিল দুটির অবস্থান তাহিরপুর উপজেলায়।
এ বিলগুলো স্থানীয় মৎস্যজীবী সংগঠনের মৎস্য শিকারীদের দিয়ে প্রথমে লিজের আবেদন করান জিয়াউল হক। লিজের পর নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি।

এদিকে, জিয়াউল হক কৌশল করে  কৃষকদের রক্ত শোষণ করে যাচ্ছেন। কৃষকদের জীবন মান উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়নে সহায়তা ও হাওরের প্রান্তীক কৃষকদের উৎপাদন এবং ভর্তুকির অংশ হিসাবে সরকার প্রতি বছর হাওরের প্রান্তীক কৃষকদের কাছ থেকে বাজার মূল্যের দিগুণ দামে ধান ও চাল ক্রয় করে থাকেন। কিন্তু সরকারের দিগুণ মূল্যে ক্রয় করা ধান চাল সংগ্রহের অভিযান বঞ্চিত হচ্ছে জিয়াউল হকের কারণে। আলোচ্য জিয়াউল প্রভাবশালী একটি মহলের আনুকুল্যে নিয়ে সিন্ডিকেট করে কৃষকদের নামে জেলার সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর,  তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর, দঃসুনামগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার খাদ্যগুদামে নামে বেনামে ধান ও চাল সরবরাহ করে যাচ্ছেন।

জিয়াউল হকের এসব অবৈধ কাজে বাঁধা দেওয়ায় প্রতিপক্ষ হন বাঁধা দানকারীরা। 

সম্প্রতি মসজিদের উন্নয়নের নামে বালু-পাথর চুরির উদ্দেশ্যে ভুমি মন্রণালয়ের সহকারী সচিব জসিমউদদীন পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি আনেন জিয়াউল হকের সিন্ডিকেট সদস্য বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ভাদেরটেক গ্রামের তৈয়বুর রহমান।

এ চিঠির বলে ধোপাজান নদী থেকে বালু-পাথর উত্তোলন করার জন্য সদর থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীকে চাপ দেন। 
ওসি এই চিঠির বৈধতার প্রশ্নে সুনামগঞ্জের ডিসির কাছ থেকে লিখিত অনুমতি আনতে বলেন। এতে জিয়াউল হক ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি ও তার এক এসআইয়ের নামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ করান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তথ্য দিয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেন, ভাই জিয়াউল হক শহরের প্রভাবশালী আমার বিষয়টা যেন গোপন থাকে।

পুলিশের অসাদাচরনের প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
 শিশু রুকাইয়া রহমান আনহাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন
নীলফামারীর চিলাহাটিতে পেকিন হাঁস  পালন বিষয়ক খামার দিবস অনুষ্ঠিত