ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের বহুল আলোচিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় দায়েরকৃত আট মামলার মধ্যে একটির রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ নাসিরগর উপজেলা সদরের পশ্চিমপাড়া এলাকার পুরাতন দুর্গা মন্দিরে অগ্নিসংযোগের মামলায় ১৩ জনকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেন। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা করে জারিমানা করা হয়েছে।
জেলা আদালত পুলিশের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) দিদারুল আলম রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. মোখলেছ মিয়া, মো. মফিজুল হক, খসরু মিয়া, নাজির রহমান, মো. মাফুজ মিয়া, ইদু মিয়া, শেখ মো. আব্দুল আহাদ, সায়হাম রাব্বি শ্যাম, মীর কাশেম, আনিস মিয়া ও তাবারক রেজা, সজিব চৌধুরী এবং দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি। এদের মধ্যে পাঁচজন পলাতক রয়েছেন। বাকিরা রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্তদের সবার বাড়ি নাসিরনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
আদালত ও নাসিরনগর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের বাসিন্দা রসরাজ দাসের ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে একটি পোস্ট দেয়ার অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলা সদরের হিন্দু অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুস্কৃতিকারীরা। এসব ঘটনায় নাসিরনগর থানায় আটটি মামলা দায়ের করা হয়। পুরাতন দুর্গা মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে করা মামলাটির বাদী নাসিরনগর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাধন কান্তি চৌধুরী। দীর্ঘ তদন্তের পর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
তবে মামলার রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী কামরুজ্জামান মামুন বলেন, যে কোনো মামলার সাজা দিতে গেলে নূন্যতম সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রযোজন। কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণহীন এই মামলায় ১৩ জনকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনঙ্গণে এই ফরমায়েশি রায় এটিই প্রথম। আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে আমরা ন্যায় বিচার পাব বলে আশা করছি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর নাজমুল হোসেন বলেন, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাক্ষ্য-প্রমাণ বিচার বিশ্লেষণ করেই রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এটি অনুকরণীয় রায় হয়ে থাকবে।