দিনাজপুর লিচুর জেলা হিসাবে দেশজুড়ে সুনাম রয়েছে। তাই এই জেলার ব্রান্ডিং নাম হচ্ছে আম লিচুতে ভরপুর, জেলার নাম দিনাজপুর। বছর ঘুরে আবার এসেছে লিচুর মৌসুম। এখন জেলার হাজার হাজার লিচু গাছে শোভা পেতে শুরু করেছে মুকুল। প্রতিটি লিচু গাছে মুকুলে মুকুলে ছেড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় হাজার হাজার লিচুর গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। দুর থেকে মুকুলসহ লিচু গাছ বাতাসে দোল খাওয়ায় মনে হয় যেন সুমদ্রের ঢেউ লেগেছে।
লিচু গাছ ভরা মুকুল দেখে বাগানি, কৃষক ও মৌ ব· স্থাপনকারী মৌয়ালীরা বুকভরা আশা নিয়ে ব্যস্ত সময় পর করছেন । লিচু গাছে গাছে প্রচুর মকুল আসায় মধু সংগ্রহের আশায় মৌ বক্স স্থাপন করতে শুরু করেছেন মৌয়ালীরা। লিচু গাছে গাছে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে । লিচু বাগানে মৌ বক্স স্থাপন করায় মৌমাছিরা পরাগায়ন ঘাটাতে ব্যস্ত সময় পার করছে । মৌমাছির মাধ্যমে পারাগায়ন ঘটার কারনে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লিচুর ফলন বৃদ্ধি পায় ।
লিচু গাছে গাছে অধীক পরিমানে মুকুল আসায় এ বছর লিচু’র বাম্পার ফলনের আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। দিনাজপুরের লিচুর খ্যাতি ও চাহিদা অনেক বেশি। মাদ্রাজি ,বোম্বাই, চায়না-থ্রি ও বেদেনা প্রতিটি লিচুর গাছে মুকুলে এসেছে । ইতোমধ্যে প্রতিটি লিচু গাছে গোড়ায় পানির সেচ ও স্প্রে করতে ব্যস্ত রয়েছে লিচু চাষীদের। গাছের গোড়ায় সেচ দেয়ার পাশাপাশি মুকুল রক্ষায় ভিটামিন ও কিটনাশক প্রয়োগ করছেন। পর্যায়ক্রমে ফল রক্ষা, দানা বড় করাসহ প্রয়োজনীয় স্প্রে করা হবে।
দিনাজপুর লালবাগ এলাকার লিচু চাষী আকরাম হোসেন বলেন, এ বছর প্রতিটি লিচুর গাছে মুকুল দেখে মনটা ভরে যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবছর মুকুল দেখে লাভবান হওয়ার আশা করছি । প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ না হলে বেশি পরিমানে অর্থ ঘওে তোলা যাবে।
একই এলাকার লিচু চাষী বেলাল উদ্দীন বলেন , আমার লিচুর দুটি বাগান রয়েছে । ঠিকমত সেচ প্রদান করায় এবছর ভালই মুকুল দেখা যাচ্ছে । প্রাকৃতিক পরিবেশ যদি অনুকুলে থাকে এবছর ভাল ফলন পাওয়ার আশা করছি।
মাশিমপুর গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার জানালেন, বাড়ির পাশেই তার ছোট বাগানে ১৬টি গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি বেদেনার গাছ। তার মতে গত বছর ৫টি গাছে ভাল মুকুল এসেছিল আর এবার ৯টি গাছেই মুকুল এসেছে। গত বছর প্রখর রৌদ্র তাপের কারণে লিচুর দানা বড় না হতেই পাক ধরে গিয়েছিল। কিন্তু এবার এখনও শীতের ভাব রয়েছে। আশা করছেন এবার ভাল ফলন হবে।
এখানকার বাগান মালিক ইসমাইল হোসেন জানালেন, তার বাগানে ৩শ গাছ রয়েছে। গাছের পূরো ফল বিক্রি করে দিয়েছে তিন বছরের জন্য। ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় । এই তিন বছর ফল ক্রেতা ফড়িয়াই বাগান পরিচর্যা করবেন। সার ভিটামিন ও বিষ প্রয়োগ করবেন। প্রতিবছর তাকে ৭ হাজার লিচু খাওয়ার জন্য দিবে। তার মতে লিচুর গাছ পাহারা, পরিচর্যাসহ লিচু’র দানা গঠন থেকে ফল র¶ায় প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও বিষ প্রয়োগের বিষয়টি গুর“ত্বপূর্ণ।
মৌখামারী রাকিব হোসেন বলেন এ বছর দিনাজপুরের লিচুর বাগান গুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মৌ খামারারা এসে মৌ ব· স্থাপন করেছে । একদিকে লিচুর পরাগায়নের মাধমে লিচুর ফলন বৃদ্ধি পাবে অন্য দিকে এই মৌসুমে ২৫ মেট্রিক টন মধু সংগ্রহ করা যাবে । এতে করে দেশের বিরাট অংশের মধুর যোগান প্রদান সম্ভব।
মাসুম বিল্লাহ বলেন , লিচুর ফুলে ফুলে মৌ মাছির পরাগায়রেনর ফলে লিচুর ফলন প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায় । এই লিচুর মৌসৈুমে অনেক বেকার যুবক মধু সংগ্রহের কাজ কওে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্ভি হওয়ার পাশাপাশি বেকার সমস্যার সমাধান করতে পারছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ খালেদুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে দিনাজপুরে ৫ হাজার ৪ শত ৯০ হেক্টরে জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। জেলায় এবছর নতুন করে আরোও ১০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান তৈরী হয়েছে । এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লিচুর বাম্পার ফলন হবে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয়েছে।