ঈদ আনন্দ নিজ এবং পরিবারের মাঝে আবদ্ধ না রেখে বিত্তবান এবং সামর্থ্যবানদের তা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতির মো. আবদুল হামিদ।
তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন: পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে আমি দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলিম ভাইবোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ।
ঈদ মুসলমানদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ বড় ধর্মীয় উৎসব। প্রতিটি মুসলমান এই দিনটির জন্য বছরব্যাপী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। ঈদে সে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড় নির্বিশেষে সবার মাঝে। ঈদ আমাদের জন্য আনন্দ আর উৎসবের বার্তার পাশাপাশি ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে বাস্তবায়নযোগ্য অনেক শিক্ষনীয় বার্তা নিয়ে আসে। কোরবানি আমাদেরকে ত্যাগ ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়।
আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। মহান আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) কে কোরবানি করতে উদ্যোগী হয়ে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালবাসা, আনুগত্য ও আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা অতুলনীয়। আল্লাহর প্রতি এই অকৃত্রিম ভালবাসা ও ত্যাগের আদর্শ আমাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিফলিত হলেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে সহমর্মিতা। কোরবানির আদর্শ ও মর্মার্থ অনুধাবন করে সমাজে শান্তি, সৌহার্দ্য ও কল্যাণের পথ রচনা করতে আমাদের সংযম ও ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতায় উজ্জীবিত হতে হবে। ত্যাগের মনোভাবকে প্রসারিত করতে হবে আমাদের কর্মে ও চিন্তায়।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় বানবাসী অনেক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। সরকার বানবাসী এসব মানুষের জন্য খাদ্য ও নগদ আর্থিক সহায়তাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। অসহায় মানুষরা যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয় সে দিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে। ঈদের আনন্দকে নিজের ও পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে বিত্তবান ও সামর্থ্যবান সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বন্যার্ত মানুষরাও যাতে ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে সে ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে সকলকে কাজ করতে হবে।
ধর্ম মানুষকে কল্যাণ ও আলোর পথ দেখায়। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা ও আচার-আচরণ সমাজে আলোকিত মানুষ তৈরি করে। সমাজ থেকে অন্ধকার ও কুসংস্কার দূর করে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মাঝে গড়ে তোলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য বন্ধন। তাই আসুন কুরবানির শিক্ষা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করি।
এ বছর এমন একটা সময়ে ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন মহামারি করোনার ছোবলে বিশ্ববাসী বিপর্যস্ত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কর্মহীন হয়ে অনেক মানুষই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মানবিকতাকে যেন আমরা ভুলে না যাই। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও পরিচর্যায় ডাক্তার-নার্সদের পাশাপাশি পরিবার ও আত্নীয়-স্বজনসহ সকলকে আন্তরিক হতে হবে।
করোনা মোকাবেলায় সকলকে সচেতন হতে হবে এবং জীবনযাপনে ও চলাফেরায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজে সুস্থ থাকি, অন্যকেও সুস্থ রাখি-এটাই হোক সকলের অঙ্গীকার।
মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির লাভের আশায় সকলেই কোরবানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু কোরবানি করতে গিয়ে আমরা যেন পরিবেশ ও প্রতিবেশীদের সমস্যার কারণ না হয়ে উঠি সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাই আমি আশা করব, আপনার সরকার নির্ধারিত স্থানে কুরবানি করবেন এবং কুরবানির বর্জ্য অপসারণসহ প্রতিটি কার্যক্রম করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্পন্ন করবেন।
পবিত্র ঈদ-উল-আযহা সবার জন্য বয়ে আনুক কল্যাণ, সবার মধ্যে জেগে উঠুক ত্যাগের আদর্শ – মহান আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি।