ঢাকা শনিবার, মে ৪, ২০২৪
দিনাজপুরে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্প ১৮ মার্চ উদ্বোধন করবেন দু'দেশের প্রধানমন্ত্রী
  • শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
  • ২০২৩-০৩-১০ ০৭:৫৫:৫২
দিনাজপুরে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পটি আগামী ১৮ মার্চ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ডিজেল আমদানির কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এতে দেশের জ্বালানি সেক্টরে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে।ভারত থেকে সরাসরি পাইপলাইনে জ্বালানি তেল বিশেষ করে ডিজেল আমদানি করা যাবে। দেশে ডিজেলের সরবরাহ স্থিতিশীল থাকার পাশাপাশি এ অঞ্চলের কৃষিতেও অবদান রাখবে।বর্তমানে ভারতের শিলিগুড়িতে চলছে ডিজেল সরবরাহের প্রস্তুতি, আর বাংলাদেশের পার্বতীপুরে প্রস্তুত হচ্ছে ডিজেল সংরক্ষণ ও সরবরাহব্যবস্থা। আজ শুক্রবার ( ১০ মার্চ) সকালে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের রিসিপ্ট টার্মিনাল পরিদর্শন কালে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এসব জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ জ্বালানি তেলের পাইপলাইন স্থাপন হয়েছে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে ডিজেল আমদানি করা হবে।দু'দেশের প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনিং করবেন। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানান, এই পাইপলাইন চালু হলে দেশের উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল পরিবহন নিয়ে আর বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি)। 'ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন' কমিশনিংয়ের পর প্রথম বছর আড়াই লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত ডিজেল আমদানি করা হবে। পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর ডিজেল আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হবে। ১০ ইঞ্চি ব্যাসের এই পাইপলাইন দিয়ে বছরে সর্বোচ্চ ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহ করা সম্ভব হবে। পার্বতীপুরে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের রিসিপ্ট টার্মিনাল পরিদর্শনে এসে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আগামী ১৮ মার্চ 'ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন' আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনিং করবেন। তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার এই পাইপলাইনের অবকাঠামো নির্মাণ করে দিয়েছে। আর আমরা পাইপলাইনের জন্য ভূমি বরাদ্দ এবং রিসিভ ট্যাংক নির্মাণ করেছি ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার পাইপলাইনের মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং ভারত অংশে ৫ কিলোমিটার পাইপ স্থাপন করা হয়েছে। পথিমধ্যে ৫টি এসভি স্টেশন এবং পার্বতীপুরে রিসিপট টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহ ও পরিচালন ব্যবস্থা আধুনিক, যুগোপযোগী এবং সহজতর হবে। জ্বালানি তেল পরিবহণ ব্যয় ও সময় সাশ্রয় হবে। প্রতিকূল পরিবেশেও সরবরাহ ও পরিচালন ব্যবস্থা নিশ্চিত ও নির্বিঘ্ন হবে। খুলনা ও চট্টগ্রাম থেকে রেল ওয়াগনের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলে তেল পরিবহণের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাজনিত কারণে ওয়াগন থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ায় পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিশ্চিত হলে পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে এবং ক্ষতির পরিমাণ কমবে। পাইপলাইন স্থাপনে ভারতের বিনিয়োগ প্রায় ৩৪৬ কোটি রুপি এবং জমি অধিগ্রহণ ও রিসিভ ট্যাংক নির্মাণে বিপিসি বিনিয়োগ করেছে প্রায় ৩০৬ কোটি টাকা। ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনে যুক্ত পার্বতীপুরের তিনটি তেল বিপণন কোম্পানির স্থাপনা থেকে প্রতিদিন এক হাজার মেট্রিক টন ডিজেল উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ইন্দো-বাংলা ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনটি ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় রিফাইনারির শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর হয়ে পার্বতীপুর ডিপোতে সংযুক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে 'ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন' প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক টিপু সুলতান জানান, এই পাইপলাইন দিয়ে জ্বালানি তেল পরিবহণের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষা। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ভারতের আসাম রাজ্যের নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ শুভেচ্ছা নিদর্শন হিসেবে দুই হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন ডিজেল পাঠানো হয় পার্বতীপুর ডিপোতে। এরপর থেকে রেল ওয়াগনে করে নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত ডিজেল আমদানি হচ্ছে। পাইপলাইনটি শিলিগুড়ির নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে পঞ্চগড়, নীলফামারী হয়ে পার্বতীপুরে আসবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম-খুলনা বন্দর থেকে সড়কপথে পার্বতীপুরে তেল আনতে প্রতি ব্যারেলের পরিবহন ব্যয় হয় প্রায় ৮ ডলার। পাইপলাইনে ডিজেল আনতে এ ব্যয় নেমে দাঁড়াবে ৫ ডলার। প্রকল্পের ৮টি অয়েল ট্যাংকার, বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন, পাম্প হাউসসহ ২৪টি ট্রান্সফর্মার স্থাপনের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়েছে। যৌথ এ প্রকল্পে জ্বালানি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর মুক্তি পাবে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার মানুষ। সেচ ব্যবস্থায় গতি বাড়বে বলে আশা দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ শাহ আলম সরকাররের। বাংলাদেশ মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, পাইপলাইন দিয়ে বছরে ১০ লাখ টন ডিজেল ভারত থেকে আমদানি করা হবে। ১৮ মার্চ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ডিজেল আমদানির কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ‘চলতি মাসের ১৮ তারিখ ভারত থেকে ডিজেল আসা শুরু হচ্ছে। প্রথম দিকে এক হাজার টন করে ডিজেল আমদানি করা হলেও ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ানো হবে। উদ্বোধনের এক সপ্তাহ আগে থেকে পরীক্ষামূলকভাবে পাইপলাইনে ডিজেল আসা শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ‘পার্বতীপুরের পুরনো ডিপোতে যথেষ্ট জায়গা থাকায় সেখানেই আমদানি করা ডিজেল সংরক্ষণ করা হবে। পার্বতীপুর ডিপোর সক্ষমতা রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টন। নতুন ডিপোর কাজ চলমান। এর আগে এখানেই ডিজেল সংরক্ষণ করা হবে। পাইপলাইনে ডিজেল আসা শুরুর পর আমাদের অনেক সময় সাশ্রয় এবং পরিবহন ব্যয় কমবে। এতে খুব সহজে উত্তরবঙ্গে ডিজেল সরবরাহ করা যাবে।’ বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে ৭০ থেকে ৭২ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদা ৪৮ থেকে ৪৯ লাখ মেট্রিক টন, যার ৮০ শতাংশ সরকার আমদানি করে। বর্তমানে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হচ্ছে। আর পরিশোধিত তেল আমদানি করা হয় সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আরব আমিরাত, কুয়েত, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে কম খরচে নতুন উৎস থেকে ডিজেল আমদানির পথ খুঁজছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে রাশিয়া ও ব্রুনেইর সঙ্গেও আলোচনা করছে সরকার। বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ব্যারেলে (১৫৯ লিটার) জাহাজভাড়াসহ অন্য খরচ দিতে হয় গড়ে ১০ ডলার। ভারত থেকে আমদানির ফলে এটি আট ডলার হতে পারে। প্রতি ব্যারেলে দুই ডলার সাশ্রয় করা গেলে এক লাখ টনে সাশ্রয় করা সম্ভব প্রায় ১৫ লাখ ডলার। এর সুবিধা ভোগ করবে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মানুষ। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে বাংলাদেশের জন্য বিকল্প উৎস তৈরি হচ্ছে। সামনে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে সংকট তৈরি হয়, তাহলে আমরা ভারত থেকে বাড়তি ডিজেল আমদানি করতে পারব।’ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পের রিসিপ্ট টার্মিনাল পরিদর্শনকালে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী,পার্বতীপুর পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন সহ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু জন্মেছিল বলেই জন্মেছে এ দেশ -হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি
অপ্রতিরোধ্য বাজার সিন্ডিকেট: মজুতের শাস্তি আটকে আছে বিধিতে
ডাইফ সেবা সপ্তাহ শুরু আজ
সর্বশেষ সংবাদ