দিনাজপুর সদরের র্কনাই এ তিন ফসলি জমির মুকুলসহ আমের বাগান কেটে উজার করে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মানের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের নারী পুরুষ ও শিশুরা। এ সময় ক্ষতিগ্রস্থরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আর্তনাদ করতে থাকেন।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্নাই কাটা পাড়ায় মুকুলসহ আমের বাগান কেটে ফেলা বাগানের সামনে শত শত নারী, পুরুষ, শিশু, আবাল বৃদ্ধ বনিতারা এই মানববন্ধনে অংশ গ্রহন করেন ও অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রতিবাদ করেন।
মানববন্ধনের অংশ গ্রহনকারীরা বলেন, পৈত্রিক সুত্রে জমি জায়গা প্রাপ্ত হয়ে কনাই মৌজা গ্রামে আমরা বসবাস করে আসছে। এই গ্রাম সংলগ্ন তিল ফসলি জমি আমরা চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা পরিচালনা করে আসছি । স্বাধীনতার পর থেকে এই জমির দলিল মুলে আমরাই জমির মালিক হয়ে ভোগ দখল করে আসছি । আমাদের দলিল ও দখল সুত্রে জমি হওয়ায় সর্ব শেষ মাঠ জরিপে আমাদের নামে ২৯ ধারা ,৩০ ধারায় আমাদের নামে জমির পর্চাও কেটে দেওয়া হয়েছে । ৩১ ধারায় গিয়ে আমাদের গ্রামসহ প্রায় ২০ একর ৫১ শতক তিল ফসলি জমি সরকার খাস খতিয়ানে অর্ন্তভুক্ত করে নিয়েছে । এ বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছি , বর্তমানে মামলটি চলমান রয়েছে।
সম্প্রতি সময়ে দিনাজপুর সদর নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভুমি আমাদের কোন প্রকার লিখিত নোটিশ না দিয়ে আমাদের বসত বাড়ী সংলগ্ন জমিতে জোড় পূর্বক আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মানের জন্য আমাদের তিন ফসলি জমির ফসল মুকুলসহ আমের বাগান, কলার বাগান, ভুট্টার ক্ষেত নষ্ট করে ঘর নির্মান করছেন। আমাদের জমির কোন কাগজপত্র পর্যালোচনা না করেই তিল ফসলি জমির নষ্ট করে দিচ্ছে। প্রতিবাদ করলে মামলা দিয়ে হয়রানী করবেন বলে হুমকি প্রদান করছেন। আমাদের গ্রামের একজন প্রতিবাদ করেছিল তাকে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে চেয়েছিল।
ক্ষতিগ্রস্থ আব্দুল করিম বলেন, আমি পৈত্রিক সুত্রে প্রাপ্ত আমি এক একক জমিতে আমের বাগান করেছি। প্রতিটি আমের গাছে মুকুল ছেয়ে গেছে। কত আশা ! কত স্বপ্ন! দেখছি । আজ সেই মুকুলসহ আমের বাগান কেটে দিচ্ছে। কিছু করতে পারছিনা । কত আকুতি মিনতি করে বলেছি তিনটি মাস সময় চেয়েছিলাম। কোন ভাবে তারা আমার কথা শুনছেনা। কার কাছে যাব, কার কাছে বিচার চাব।
একই ভাবে কথা বলেন হুমায়ুন কবীর, তিনি বলেন আমার ২ একক জমির আমের বাগান ও ভুট্টার ক্ষেত নষ্ট করে দিয়েছে। আমার ভুট্টা নষ্ট করে ফেলায় আমি পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাব। কি খাব, ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ চলাব কিভাবে।
ক্ষতিগ্রস্থ হযরত আলী বলেন, আমাদের গ্রামের ২০ একর ৫১ শতক জমি সরকার খাস খতিয়াতে ফেলেছে। সরকার যতি এক পার্শ্বে এই আশ্রয়ন প্রকল্প গড়ে তুলেন। তাহলে আমাদের এই গোত্রের মানুষের সাথে আশ্রয়ন প্রকল্পের বসবাসকারী মানুষের মতবিরোধ থাকবে। তা না করে জোড় পূর্বক আমাদের এই গোত্রের মানুষের বসত বাড়ীর পার্শ্ববর্তী স্থানে আশ্রয়ন প্রকল্প তৈরী অন্য স্থানের মানুষের বসবাস করলে আমাদের গোত্রের মানুষের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হবে।
এই গ্রামের হাসান আলী বলেন বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে আমরা এই কর্নাই কাটাপাড়ায় প্রায় ৪ শত ঘর পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে আসছি। এই গ্রামের ২০ একর ৫১ শতক জমি ২৯ ধারা ৩০ ধারা , রেকর্ড পেয়েছি, ভিপি ও পেয়েছে। সরকার প্রয়োজনে জমি নিতেই পারেন। কিন্তু আলাপ আলোচনা করে নিতে পারতেন। এখানে এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে আমার তিন ফসলি জমির ফসল নষ্ট করে এই আশ্রয়ন প্রকল্প তৈরী করতে হবে।
সখিনা বেগম বলেন , প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন কোন তিন ফসলি জমি নষ্ট করে কোন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে না । আমাদের মত অসহায় হত দরিদ্র পরিবারগুলির মুখের খাবার নষ্ট করে কোন ভুমিহীনদের ঘর নির্মান করে দিচ্ছেন ।
দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ আলম, বলেন প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে ৮০টি ঘর নির্মানের জন্য ৩ একর জমির প্রয়োজন। এখানে ২০ একর ৫১ শতক জায়গা খাস খতিয়াতে আছে। তাই এই জায়গাটি নির্বাচন করা হয়েছে। তিন ফসলি জমির ফসল নষ্ট করে এই আশ্রয়ন প্রকল্প কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছু আমের বাগান নষ্ট হচ্ছে সত্যি তবে জেলা প্রশাসক সব কিছু জানেন। আমরা সরকারী ঘাস জায়গায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মান করছি। তবে এই জমি ভোগ দখলকারীদেরকে মৌখিক ভাবে বলা হয়েছে কিন্তু লিখিত নোটিশ তাদেরকে দেওয়া হয়নি।