দিনাজপুরের পার্বতীপুরে একটি প্রভাবশালী পরিবারের দখলে থাকা ৪.৪২ একর সম্পত্তির মালিকানার বৈধতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী রেকর্ডীয় মালিকের উত্তরাধিকারদের অভিযোগ, ওই প্রভাবশালীরা জাল নিলামের কাগজ পত্র ও পেশিশক্তির বলে ৮০ বছর যাবত বিবাদমান সম্পত্তিটি জবর দখলে রেখেছে। ভূক্তভোগীরা অতি দরিদ্র হওয়ায় অর্থ ও লোকবলের অভাবে আদালতে মামলা দায়েরসহ সম্পত্তিটি উদ্ধার করতে পারছেনা। তারা মামলা পরিচালনায় আর্থিক সহায়তা দিতে মানবাধিকার সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
ঘটনাস্থল উপজেলার বেলাইচন্ডি ইউনিয়নের উত্তর হরিরামপুর গ্রাম। গ্রামের ধরেয়া শেখ, সলেয়া শেখ ও ঝেচু শেখ এর উত্তরাধিকারী শমশের ও মামুন জানায়, তাদের তিন দাদা ১৯৪৩ সালে উত্তর হরিরামপুর মৌজার ১৩৮৪, ১৩৮৫, ১৪০৫, ১৪০৬, ১৪৮৭, ১৪০৮ নং দাগের ৩.৮৬ একর সম্পত্তি গ্রামের বাফাজ উদ্দিন সরকারের নিকট কয়েক বছর মেয়াদী সুদ বন্ধক রাখেন। পরবর্তীতে মেয়াদ উত্তীর্ন হলে তাদের দাদা ও বাবারা উক্ত সম্পত্তিটি ফিরে পেতে অনেক চেষ্টা করেও সফল হয়নি।
সম্প্রতি শমসের ও মামুন দিনাজপুর রেকর্ড রুমে কাগজপত্র তল্লাশী করে জানতে পারে এই খতিয়ান ও দাগসমুহের কোন জমিই বাফাজ উদ্দিন সরকারের নামে রেকর্ড নাই। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী রেকর্ডে শমসের ও মামুনের তিন দাদা ধরেয়া শেখ, সলেয়া শেখ ও ঝেচু শেখ এর নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। এছাড়াও একই মৌজার ১৩৫৪, ১৩৫৫, ১৩৫৬, ১৩৬০, ১৩৬৬, ১৩৬৯, ১৩৭৩, ১৩৮৩, ১৩৮৭ নং দাগের মোট ২.১৭ একর সম্পত্তিও ধরেয়া শেখ, সলেয়া শেখ ও ঝেচু শেখ এর নামে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী রেকর্ডে অন্তভূক্ত হয়। এর মধ্যে ১.২ একর বাফাজ উদ্দিনের নিকট বিক্রি করা হলেও তার পুত্র নজরুল ইসলাম সরকার ও শহিদুল সরকারের জবর দখলে রয়েছে ৫৬ সতক সম্পত্তি। এ নিয়ে সর্বমোট ৪.৪২ একর সম্পত্তি নজরুল ও শহিদুল সরকারের জবর দখলে রয়েছে বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। শমসের ও মামুন তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির দালিলিক প্রমানাদি পাওয়ার পর প্রভাবশালীদের ভোগ দখল ও হালচাষ বন্ধ রাখতে পার্বতীপুর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ দুইপক্ষের লোকদেরকে নিয়ে থানায় সমঝোতা বৈঠক বসায়। বৈঠকে শহিদুল সরকার গং বলেন, ৩.৮৬ একর জমি ১৯৪৭ সালে নিলাম ক্রয়ের মাধ্যমে তার বাবা বাফাজ উদ্দিন প্রাপ্ত হন।
এদিকে নিলামের কাগজের সত্যতা যাচাইকারী দিনাজপুরের আইনজীবি সাথী দাসের সাথে তার মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, দিনাজপুরের রেকর্ড রুমে তল্লাশী করে বাফাজ উদ্দিনের নামে নিলাম ক্রয়ের কোন প্রমানাদি পাওয়া যায়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, উক্ত নিলামের কাগজের কোনই বৈধতা নাই। আইনজীবি সাথী দাস আরও বলেন, নিলামের কাগজের বৈধতা থাকলে ৬২ সালের রেকর্ডে তারা তাদের নাম অন্তভূক্ত করতে পারতেন। কিন্তু সেখানেও তাদের নামের কোনই হদিস নাই।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় পার্বতীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম প্রামানিক ও পার্বতীপুর মডেল থানার অফিসার ইন্চার্জ আবুল হাসনাত এর সাথে কথা হলে তারা বলেন, আদালত থেকে বিষয়টি নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সব পক্ষকেই শান্ত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত শহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার পিতার নামের নিলামের কাগজ বৈধ। আমার পিতা ভূলক্রমে ৩.৮৬ একর সম্পত্তি ৬২ এর রেকর্ড ধরাতে পারেননি। বাংলাদেশ রেকর্ডে বিবাদমান সকল জমি আমাদের নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং খারিজ খাজনাও আমাদের নামে করা হয়েছে। অন্যদিকে ভূক্তভোগী শমসের ও মামুন জানায়, শহিদুল ইসলাম গং প্রভাব খাটিয়ে সেটেলমেন্ট অফিসারগনকে তাদের নিজ বাড়িতে বসিয়ে ভূমি রেকর্ড সম্পাদন করেন। সেখানে আমাদের পরিবারের কারও মতামত বা কাগজপত্রাদি উপস্থাপন করার সুযোগ দেয়া হয়নি। এছাড়াও খারিজ খাজনাও অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে করে নেয়া হয়। তারা বলেন, জমি উদ্ধারে মামলা দায়ের করার মত অর্থ ও লোকবল আমাদের নেই।