দিনাজপুরের পুনর্ভবা নদীর উপর গৌরীপুর অংশে রাবার ড্রাম নির্মান করে নদীর পানি বৃদ্ধি ফলে ক্যানালের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচের সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলের বিল্পব ঘটাতে শুরু করেছে দিনাজপুর সদর ও বিরল উপজেলার চাষীরা।
রাবার ড্রাম উদ্ধোধন ও নদী খননের কাজ পরিসমাপ্ত না হলেও, নদীর পানি কৃষি জমিতে সেচের আওতায় চলে আসায় এর সুবিধা পেতে শুরু করেছে এই এলাকার চাষীরা ।
পূণর্ভবা নদী সদর উপজেলা ও বিরল উপজেলা বিভক্ত হওয়ায় গৌরীপুর অংশে এই রাবার ড্রাম অংশের পূর্বে সদর আর পশ্চিমে বিরল উপজেলার দুটি ইউনিয়নের নদীর সংলগ্নে ৩৫টি গ্রামে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের বাস। যাদের বেশীর ভাগেই কৃষির উপর নির্ভরশীল। যাতায়াত আর কৃষি জমিতে সেচের পানির সংকট ছিল তাদের প্রধান সমস্যা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের সেচের পানি পেয়ে খুশি কৃষকরা।
পুনর্ভবা নদীর উপর নির্মিত গৌরীপুর, সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা পরিরবর্তন হতে শুরু করেছে। এ প্রকল্পে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নদীর ১৩ কিলোমিটার পর্যন্ত শুস্ক মৌসুমে সেচ সুবিধা পাবেন এলাকার কৃষক। ইতোমধ্যে সদর ও বিরল দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্তা ও খরা মৌসুমে সম্পূরক সেচের লক্ষ্যে পূনর্ভবা নদীতে নির্মিত হয়েছে সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ও হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির প্রচেষ্টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সদর উপজেলার আস্করপুর ইউনিয়নের গৌরীপুর এলাকায় প্রকল্পটিতে নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৬৩ কোটি টাকা। নির্মাণ কাজ শেষে এখন এটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে এই রাবার ড্রামটি।
তবে এরই মধ্যে প্রকল্পটির সেতু স্থানীয় লোকজনের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়েছে। প্রকল্প এলাকার স্থানীয়রা জানান, পুনর্ভবা নদী পাড়ি দিতে দুই উপজেলার লোকজনদের নানান ভোগান্তিতে পড়তে হতো। কৃষক সময়মতো উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারতেন না। ভিন্ন পথে ১৬ কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা পাড়ি দিয়ে দিনাজপুর জেলা শহরে যেতে হতো। প্রকল্প দৃশ্যমান হওয়ায় এর সুফল পেতে শুরু করেছে এই এলাকার মানুষ ।
আবার শুস্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হত । এখন দেখা যায়, নদীর উভয় পাড়ে আলু, সরিষা, শিম, পিঁয়াজ, বেগুনসহ নানান ধরনের সবজির ক্ষেত রয়েছে। সেতু ও সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের দু’পাশে ছোট পরিসরে বানানো হয়েছে বিনোদনকেন্দ্রে রুপান্তরিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শুকনা মৌসুমে নদীর পানির স্তর নিচে নেমে যেত। তখন শত শত একর জমি অনাবাদি থাকত। গভীর নলকূপের মাধ্যমে ক্ষেতে সেচ দিতে কৃষকদের অনেক সমস্যায় পড়তে হতো। সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প হওয়ায় এখন সেই সমস্যার সমাধান হওয়ার পাশাপাশি মৎস্য চাষের সুযোগ হয়েছে।
এই অবকাঠামোর মাধ্যমে শুস্ক মৌসুমে এই অঞ্চলে কৃষি ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে এনেছে কৃষির বৈপ্লবিক পরিবর্তন বলে জানালেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দিনাজপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান। প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায়। নির্মিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে পানির লেভেল ৪ মিটার বৃদ্ধির ফলে সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। যার প্রভাব পড়েছে পুনর্ভবা নদীর ১৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে দুই উপজেলার ৩৫টি গ্রামে ৩ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা যাবে। ইতিমধ্যে ১ হাজার ৬শ’ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে। যার সুফল পাচ্ছেন কৃষক। এর বাহিরেও মৎস্য চাষ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই প্রকল্পে গৌরীপুর, ঘুঘুডাঙ্গা ও বসন্তপুর এলাকায় এলএলপি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা প্রদান করছে। সেচ কাজ পরিদর্শন করেন দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁও এর উপ প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রাফিউল বারী, দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর নয়ন, সেচ সুবিধাভোগী পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. জিয়াউর রহমান জিয়া প্রমুখ।