গাজীপুরে চাঁদার দাবিতে শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ
- হাসিব খান, গাজীপুর
-
২০২৩-০১-১৬ ০৯:৩৬:০৯
- Print
গাজীপুরে চাঁদার দাবিতে শিল্প প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মোশারফ হোসেন শুকুর (৫০) কালিগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এবং বাঘারপাড়া ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তিনি বাঘপাড়া এলাকার মৃত মোবারক হোসেনের ছেলে।
গত বুধবার (১১ জানুয়ারি) সকালে ভিআইপি ডোর এন্ড ফার্নিচার নামের প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে প্রবেশের সময় শুকুর এবং তার লোকজন এই বাধা প্রদান করেন। একইসাথে তারা প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকদেরও কাজে প্রবেশে বাধা দেন।
সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। ফ্যাক্টরীর অদূরে দাঁড়িয়েথাকা বালু ভর্তি ট্রাক ড্রাইবার প্রতিবেদককে জানান, সকাল ৯টায় বালু নিয়ে ফ্যাক্টরীতে প্রবেশ করতে গেলে স্থানীয় শুকুরের লোকজন তাকে বাধা দেন এবং ট্রাক ঘুরিয়ে দেয়া হয়। সেই সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ট্রাকড্রাইবার সেখানে বালু নিয়ে অপেক্ষা করছেন ট্রাক আনলোড করার জন্যে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় সেই ট্রাকটিকে ফিরে যেতে হয়। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, সকালে শুকুরের লোকজন প্রতিষ্ঠানের সামনে হাজির হয়ে ট্রাক প্রবেশে বাধা প্রদান করে এবং ফ্যাক্টেরীতে শ্রমিকদের ঢুকতে বাধা দেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই পৌর আওয়ামীলীগের এই নেতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানটি মালিক এবং কর্মচারীরা। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দেয়ার পাশাপাশি নির্মাণ কাজেও বাধা প্রদানা করে আসছেন স্থানীয় এই আ’লীগ নেতা। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১০মাস আগে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজের জন্যে আনা এক হাজার বস্তা সিমেন্ট সঠিক সময়ে কাজ না করতে পারার কারণে পাথরে রুপান্তরিত হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫ লক্ষ টাকা। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটি ভিতরে নষ্ট হচ্ছে কয়েক লক্ষ টাকার লোহার সেডের অংশ।
ভিআইপি ডোর এন্ড ফার্নিচারের সত্বাধিকারী মাহবুব হোসেন(৪৬) জানান, অভিযুক্তরা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের ক্ষতি করার চেষ্টা শুরু করলে আমি এক প্রকার বাধ্য হয়েই ২০২১ সালের অক্টোবরের ১৯ তারিখে কালিগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছিলাম। তারপরও রেহাই পাইনি মোশারফ হোসেন গংদের হাত থেকে। মাহবুব আরও বলেন, প্রতিষ্ঠাটি থেকে নিয়মিত চাঁদা পেতে তার হুমকি ধমকি অব্যাহত রেখেছেন শুকুর। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমি গত ৫ জানুয়ারি গাজীপুরে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৫জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা করেছি।
ভুক্তভোগী মাহবুব জানান, স্থানীয় এমপি একজন শিল্প বান্ধব মানুষ। তার নেতৃত্বে কালিগঞ্জে শিল্প পরিবেশ হওয়ার কারণেই এই এলাকায় বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর তাই আমিও এই এলাকায় আমার এই প্রতিষ্ঠানটি চালু করি। তবে শুরু থেকেই শুকুরের কুদৃষ্টি পড়ে আমার প্রতিষ্ঠানে। যার কারণে ব্যাংক লোন করে প্রতিষ্ঠা করা আমার এই প্রতিষ্ঠানটি হুমকির মুখে পড়ছে।
মামলা সূত্রে জানাযায়, গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন বাঘেরপাড়া এলাকায় ২০১০ সালে ৩৫০শতাংশ জমি কিনে ভুক্তভোগী ভিআইপি ডোর এন্ড ফার্নিচারের নামের প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটি চালুর পর থেকেই বিভিন্ন সময় এলাকার চিন্হিত মোশারফ হোসেন শুকুর প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং কর্মচারীদের বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রর্দশন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ সকাল ১০টায় ভুক্তভোগী মাহবুব তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে শুকুর তার সঙ্গীয় লোকজন নিয়ে আক্রমন করেন। এবং শুকুরের সঙ্গীয় পরাগ ভূইয়া ভুক্তভোগীকে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হলে তাদের ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে কাজ করতে হবে জানান। টাকা দেয়া কথা অস্বীকার করলে ভুক্তভোগীকে গলা চেপে ধরেন বলে মামলায় উল্লেখ আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, সকালে বালি ভর্তি ট্রাক প্রবেশ করার সময় শুকুরের লোকজন বাধা প্রদান করেন এবং প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের প্রবেশ করতে দেয়নি। তিনি বলেন, বহুদিন ধরেই শুকুর এই প্রতিষ্ঠানের সাথে ঝামেলা করছে। শুকুর দলীয় পদে থাকায় তার এই কর্মকান্ড দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। তিনি বলেন এদের জন্যেই দলের বদনাম হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে ভিআইপি ডোর এন্ড ফার্নিচারের সামনে অবস্থিত মোশারফ হোসেন শুকুরের অফিসে গেলে তার দেখা পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে তিনি এ সকল ঘটনার কথা অস্বীকার করেন। স্থানীয়রা বলেছে আপনার লোকজনই প্রতিষ্ঠানটিতে পরিবহন প্রবেশে বাধা দিয়েছে এমনটা জানালে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীকে থানায় পাঠিয়ে দিন আমরা ব্যবস্থা নিব। তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা, যেসময়ে মুঠোফোনে ওসির সাথে কথা হয় তার ঘন্টা দুই পরও প্রতিষ্ঠানের বালু ভর্তি ট্রাক প্রবেশে বাধা দিচ্ছিলেন শুকুরের লোকজন। ঘটনার দিন ভুক্তভোগীকে থানায় যেতে বললেও আজকের দিন পর্যন্ত কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন না করায় প্রশাসনের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।