হোটেলে বসে খাওয়া নিষেধ হরিজনদের : তদন্তের নির্দেশ মানবাধিকার কমিশনের
- আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট
-
২০২৩-০১-০৬ ০৩:২৫:৪৯
- Print
আব্দুল আলিম নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন অধ্যাপকের একটি ফেসবুক পোস্ট ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দুটি ছবি দিয়ে গত মঙ্গলবার তিনি লিখেছেন, এখনও কৌলাসদের (স্টোরপাড়া, লালমনিরহাট) রেস্টুরেন্টের বাইরে বসে খেতে হয়।
বিষয়টি আমলেও নিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন । একই সঙ্গে একে অনভিপ্রেত ও মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন উল্লেখ করে তিনি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে তদন্ত করে আগামী ২২ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশও দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, কমিশনের আদেশের কপি এখনও পাননি তিনি। পেলে দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
সংবিধানের ২৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না। কিন্তু লালমনিরহাটের বিষয়টি মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করছে কমিশন।
জানা গেছে, লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে শহর হওয়ায় বেশি হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। জেলার পাঁচ উপজেলায় এ সম্প্রদায়ের প্রায় ১২ হাজার মানুষ রয়েছেন। সমাজে তাঁরা নানা বৈষম্যের শিকার।
অধ্যাপক আব্দুল আলিম জানান, তীব্র শীতে হোটেলের পাশে খোলা আকাশের নিচে কৈলাস বাঁশপো তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খাবার খাচ্ছেন। পত্রিকার কাগজের ওপর রুটি-ভাজি; সামনে ভাঙা গ্লাস। বিষয়টি তাঁকে নাড়া দিয়েছে। মর্মাহত হয়ে মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন বলে জানান তিনি।
লালমনিরহাট জেলা হরিজন বাঁশপো সম্প্রদায়ের সভাপতি শ্রী রংলাল বলেন, ভোট এলে নেতারা আমাদের সঙ্গে চা খান। ভোট গেলে গা ঘেঁষতেও দেন না। হোটেলে বসে খেতে দেন না। ভাঙা ও পরিত্যক্ত বাসনে খাবার দেওয়া হয়, তাও আবার উঁচু থেকে হোটেল কর্মীরা ঢেলে দেন। এটি অপমানজনক হলেও দীর্ঘদিনে সবাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া সজল বাঁশপো বলেন, স্কুল-কলেজে পড়ার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু এখনও হোটেলে চেয়ার-টেবিলে বসে খেতে পারি না।