দিনাজপুরের বীরগঞ্জে প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে ইউপি চেয়ারম্যনের নেতৃত্বে পীরের মেলায় চলছে জমজমাট লটারির নামে প্রতারনা, সর্বস্ব খোয়াচ্ছে গরিবরা, গ্রামে বেড়েছে গরু চুরির হিড়িক।
শামুকশাহ জিন্দাপীরের মাজারে ১৯ অগ্রহায়ন উরশ শুরু হয়। তারই সুত্র ধরে উরশ উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় বিভিন্ন পেশা ও ধর্মের মানুষ বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের শামুকশাহ জিন্দাপীরের মাজারে ৫ ডিসেম্বর হতে শুরু হয় মাজার প্রাঙ্গনে সিন্নীর মধ্য দিয়ে শামুকশাহ জিন্দাপীরের মেলার উদ্বোধন হয়। মেলায় আগত ভক্ত বৃন্দ মাজারে দেয়া অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা করে উপজেলা প্রশাসন। মেলার কারনে আসে পাশের মানুষের বাড়িতে শুরু হয় আত্বীয় স্বজনদের আনাগোনা। উরশ দেওয়ার জন্য সমাবেত হয়।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মোঃ জাকির হোসেন রাজা এবং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক মাহামুদুন নবী ওয়াড এই মেলাকে কেন্দ্র করে নিজস্ব জনবল নিয়ে গঠন করে একটি কমিটি। শামুকশাহ জিন্দাপীরের মেলা পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ায় ক্ষমতার দাপট অনেক বেশি। যার কারনে তিনি নিজে সকল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে মেলাটিকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে ৪ লক্ষ ২৯ হাজার ৫ শত টাকায় লিজ দেয় বিভিন্ন জনের কাছে। মেলায় বসা ছোট দোকান হতে প্রতিদিন ৫৫০ টাকা ও খাবারের হোটেল গুলো হতে ৮০০ টাকা করে আদায় করে। যা ইতি পূর্বের চেয়ে অনেক গুন বেশী। মেলায় কেউ ছবি উঠাতে চাইলে মেলায় থাকা ইউপি চেয়ারম্যানের ভোলান্টিয়ারদের বাধার মুখেও পড়তে হয় ।
এই মেলার মাঠে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রয়ে পাশাপাশি প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে মেলায় ৬ রঙের আকর্ষনিয় অফার দিয়ে ২০ টাকা টিকিটের ম‚ল্য নির্ধারন করে ”দৈনিক মায়ের দোয়া লাকী কুপন” নামে র্যাফেল ড্র নামে লটারি চালাচ্ছে। যদিও সরকারী ভাবে মেলা রাত্রি ৮টা পযর্ন্ত চলার অনুমতি থাকলেও রাত্রি ১২টা পযর্ন্ত চলছে জমজমাট ভাবে। আকর্ষনিয় ও লোভনীয় মটর সাইকেল সহ বিভিন্ন পুরস্কার অফার দিয়ে বীরগঞ্জ পৌর শহর সহ বিভিন্ন গ্রাম এলাকায়, হাটে-বাজারে ভ্যান, অটোরি·ায় করে প্রচার করে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার লটারির টিকিট বিক্রয় করছে প্রতিদিন । লটারির আয়োজকরা প্রতি রাতে কমিটিকে ৬০ হতে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে থাকে বলেও জানা গেছে। জনগনকে আকর্ষন করে প্রতি রাত সাড়ে ১০টা হতে রাত্রী ১২টা পযর্ন্ত ছোট একটি শিশুর চোখ বেঁধে লটারির কুপন তোলেন ইস্টেজে। যা টিভির ডিসের লাইনের মাধ্যমেও লটারীর পুরুস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান দেখানো হয়ে থাকে।
কিশোর-কিশোরি থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের সাধারন মানুষ কেনে এই লটারী। এমন অনেকেই আছে যারা ১০ থেকে ১৫ টা টিকিট কিনেও থাকেন, কিন্তু তারা এ পর্যন্ত কোন পুরস্কার পাইনি বলেও জানা গেছে। আর এই লটারি টিকিট কেনার জন্য এলাকার উঠতি বয়সের যুবকরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ম‚লক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে চুরি, ছিনতাই বেড়েই চলছে।
লটারি এক কর্মচারী জানায়, দৈনিক মায়ের দোয়া লাকী কুপন লটারি চালায় ঠাকুরগাও জেলার খোচাবাড়ীর কামাল ও পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ইসমাইল হোসেন।
শিবরামপুর ইউনিয়ন সদস্য সফিউল্লা জানায়, কিছুদিন হতে তাদের এলাকায় গরু চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক। যেমন মেলার পাশের গ্রাম মদনসাকোর রফিকুল মাষ্টার, ধনগাও এর আফসার আলী, গনপৈতের অমর ফারুক, সাহাডুবির নিমাই এর বাড়ি হতে গরু চুরি হয়েছে সম্প্রতি।
মেলা পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেন রাজা কে তার ব্যাক্তিগত মোবাইল নম্বারে ফোন করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথে মোবাইল ফোন বন্ধন করে দেয় । তাই তার কমেন্টস নেওয়া সম্ভব হল না ।
মেলা কমিটির অন্যতম অভিভাবক বিএনপি নেতা ওয়াড জানায়, সকলের সাথে যোগাযোগ রেখেই মেলায় লটারী চালানোর কথা সাধারন সম্পাদকের। তিনি কি করছেন তা আমি জানিনা।
এ ব্যাপারে শামুকশাহ জিন্দাপীরের ওয়াকফ স্টেডের সভাপতি, বীরগঞ্জ উপজেলা নিবাহী অফিসার জিনাত রেহানা জানায়, মেলায় র্যাফেল ড্র নামে কোন লটারীর অনুমোদন নেই ।