ঢাকা মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৬, ২০২৪
বিএনপিতে জোরদার জামায়াত ছাড়ার দাবি
  • নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • ২০২০-০৭-২৩ ০২:৫৪:২১

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দলকে বিদায় করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে ঈদের পরই।

জামায়াতের সঙ্গে দু'দশকের গাঁটছড়া ছাড়ছে বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি বিরোধীতাকারী দলটিকে জোট থেকে বিদায় করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে ঈদের পরই। দীর্ঘ সময় একসঙ্গে থাকার পর বিএনপি এখন বলছে জোটে জামায়াত থাকায় তাদের গায়েও লেগেছে যুদ্ধাপরাধীর তকমা। বিপর্যয়ে পড়েছে দলের রাজনীতি।

২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছিল একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে। তবে, আমলে নেয়নি বিএনপি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচেন অংশগ্রহণ এবং সর্বোপরি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে ঘিরে বিএনপির সঙ্গে  জামায়াতের দূরত্ব বাড়তে থাকে। সবশেষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল জামায়াতে ইসলামী।

এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কাজী খায়রুজ্জামান শিপন বলেন, 'আমরা গাছ লাগাই আর তারা এসে ফল খায়। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে জামায়াতের যে দুর্নাম আছে বিএনপি কেন এটা বয়ে বেড়াবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের ধারায় রাজনীতি করতে চাই।'

স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী জামায়াতকে নিয়ে ১৯৯৯ সালে চারদলীয় জোট করে বিএনপি। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরও দলটির সঙ্গে গাঁটছড়া ঠিকই রেখে চলেছে বিএনপি।

এ ব্যাপারে বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল বলেন, 'বিএনপি মুক্তিযোদ্ধার দল। আমি বিএনপি করি আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কিন্তু যখন কোনো স্থানে যাই তখন আমাদের এমনভাবে দেখা হয় যেন আমরাই রাজাকারের সন্তান। জামায়াত আমাদের সাথে আছে বলেই এমন হচ্ছে। আর জামায়াত সাথে আছে বলেই আমাদের মাথার ওপর যুদ্ধাপরাধীর সাইনবোর্ড লেগে আছে।'

জামায়াতকে সাথে নিয়ে রাজনীতি করার বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, 'স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি স্বাধীনতার বিরোধীপক্ষের সঙ্গে রাজনীতি করতে পারে না, অনেক ভুলের সমাহারের মধ্যে এটাও একটা ভুল জামায়াতের সাথে রাজনীতি করা।'

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি জামাতের প্রার্থীদের ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয় বিএনপি। এতে দলের কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হলেও দলে এর কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি। পদত্যাগী হন বিএনপি নেতা মুনির খান। জামায়াতকে ছাড়ার দাবি ওঠে দল ও জোটের ভেতর।

এই দাবি এখন আরো জোরদার হয়েছে দলের ভেতর।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, 'দল যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সে সিদ্ধান্তের সঙ্গেই আছি। কিন্তু, এই মুহূর্তে জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত। কারণ নতুন প্রজন্ম যারা আসছে তাদের কাছে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে এবং বিএনপি শক্তিশালী হবে।'

এমনিতেই রাজনীতির মাঠে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বিপাকে বিএনপি। তারওপর দলের ভেতর-বাইরে এমন প্রশ্ন ওঠায়  দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গীকে ছেড়ে দেয়ার কথাই উঠে এসেছে বিএনপির সবশেষ স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, 'এটা একটা কঠিন সিদ্ধান্ত, এখনই বা এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না।'

অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, এটা দলগত সিদ্ধান্ত, দলই সিদ্ধান্ত নেবে।

তবে, পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে অংশ নেয়া নেতারা জানিয়েছেন জামায়াতের কারণে রাজনীতির মাঠে বিএনপি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটা অধিকাংশ নেতাই স্বীকার করেছেন। তাই মত দিয়েছেন জামায়াতকে ছেড়ে দেয়ার। আসছে শনিবারে বৈঠকেও দলের শীর্ষ নেতার সাথে এ নিয়ে আলোচনা হবে। দলীয় চেয়াপার্সনের অনুমোদন পেলেই ঈদের পর ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বিদায় দেয়ার ঘোষণা আসতে পারে বলে জানান তিনি।

 

সংবিধানের ৬২ জায়গায় সংশোধনী চায় বিএনপি
নির্লজ্জ দলাদলির পরিণতি দেশবাসী দেখেছে: তারেক রহমান
বিএনপির সংস্কার প্রস্তাবে যা যা থাকছে