ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অর্থায়নকৃত ‘বাংলাদেশ: সাসটেইনেবল রিইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড ইম্প্রুভড মাইগ্রেশন গভর্ন্যান্স (প্রত্যাশা)’ প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ঢাকায় “প্রত্যশা: প্রবাসীদের আশা’’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আজ। অনুষ্ঠানে নিরাপদ অভিবাসন এবং টেকসই পুনরেকত্রীকরণ বাস্তবায়নে এই ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পের নানা চ্যালেঞ্জ এবং সাফল্যের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
টেকসই পুনরেকত্রীকরণ ও অভিবাসনে সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং নিরাপদ অভিবাসন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে ব্র্যাকের সাথে অংশিদারীত্বে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) প্রত্যাশা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। ব্যক্তি, সম্প্রদায় এবং কাঠামোগত পর্যায়ে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মনোসামাজিক তথা বহুমাত্রিক এবং সামগ্রিক পুনরেকত্রীকরণ নিশ্চিতে প্রকল্পটি বাংলাদেশে আইওএম-এর গ্লোবাল ইন্টিগ্রেটেড এপ্রোচ টু রিইন্টিগ্রেশন (আইএআর) প্রয়োগ করে থাকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী মো. ইমরান আহমদ, এমপি বলেন, “সরকার অভিবাসী ও তাঁদের পরিবারের সমৃদ্ধির জন্য নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ পুনরেকত্রীকরণ প্রোগ্রামিং গড়ে তোলার ভিত্তি স্থাপনে প্রত্যাশা প্রকল্পটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।”
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন বলেন, বাংলাদেশ সরকার দেশের উন্নয়নে অভিবাসী শ্রমিক এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসনে উল্লেখযোগ্য অবদানকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকৃতি দেয়। নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসনের প্রচার ও ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্য আমরা অসংখ্য পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রত্যাশা প্রকল্পটি টেকসই পুনরেকত্রীকরণ, অভিবাসনে সুশাসন এবং নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণে সরকারকে যেভাবে সহযোগিতা করেছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে।
বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ডেলিগেশনের চার্জ’ ডি অ্যাফেয়ার্স ডঃ বার্ন্ড স্পেনিয়ার্ড উল্লেখ করেন, “প্রত্যাশা প্রকল্পের প্রয়োগ এবং এর থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলো অভিবাসন ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনায় একটি সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপনে অবদান রাখবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভবিষ্যতে এর যেকোন পদক্ষেপে পাশে থেকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”
আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান আবদু সাত্তর এসয়েভ তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, “আজকের মানব অভূতপূর্ব গতিশীলতার পাশাপাশি বৈশ্বিক করোনা মহামারী, সংঘাত এবং বর্তমানে চলমান অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনা করে একটি অভিবাসন ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে প্রয়োজন আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস। বাংলাদেশ সরকার ও অভিবাসন সংক্রান্ত অন্যান্য অংশীজনদের অভিবাসন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নানা জটিলতা নিয়ে সার্বিকভাবে ভাবতে ও চিহ্নিত করতে প্রত্যাশা প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।”
ব্র্যাকের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও অভিবাসনের পরিচালক সাফি রহমান খান যোগ করেন, “অভিবাসন বেকারত্ব হ্রাস করে কাজের সুযোগ বাড়ায়। প্রত্যাশা বাংলাদেশে টেকসই পুনরেকত্রীকরণ প্রোগ্রামিংয়ে একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। প্রকল্পটি একটি সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যমে প্রত্যাবর্তনকারীদের মনোসামাজিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পুনরেকত্রীকরণে সহায়তা দিয়েছে।”
অনুষ্ঠানে আইওএম- এর ঊর্ধ্বতন নীতিনির্ধারণী উপদেষ্টা অধ্যাপক শহীদুল হকের সঞ্চালনায় ‘অভিবাসন প্রোগ্রামিং: বাংলাদেশে অভিবাসন সুসাশন এবং পুনরেকত্রীকরণে অভিজ্ঞতা ও সামনের পথ বিষয়ক একটি প্যানেল আলোচনায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এবং বাংলাদেশ বৈদেশিক কর্মসংস্থান সেবা লিমিটেডের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ডেলিগেশনের প্রতিনিধিগণ, আইওএম ও ব্র্যাকের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অভিবাসীরাও এই আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে অনিরাপদ উপায়ে অভিবাসনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসী ও সম্প্রদায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম ও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পকে তুলে ধরে এমন একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।