বিতর্কিত কর্মকান্ড করে বিএনপির কাছে ক্ষমা চাইলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ
- শাহাদাত হোসেন শান্ত, চাঁদপুর
-
২০২২-১২-০৬ ০৩:১৬:৫১
- Print
বিতর্কিত কর্মকান্ড করে বিএনপির ও ছাত্রদলের কাছে ক্ষমা চাইলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ। ' ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে চাঁদপুরে শহীদ হওয়া জিয়াউর রহমান রাজুর শাহাদাত বার্ষিকীতে শপথ বাক্য পাঠ করতে গিয়ে বিএনপি ছাত্রদল ও এর অঙ্গ সংগঠনের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন নানাহ অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্ম দেওয়া এই অধ্যক্ষ। বিএনপি-জামায়াত জেলাটির সরকারের সময় তাল মিলিয়ে চলা এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নেওয়া অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশের অতি দালালিতে খোদ আওয়ামী লীগও বিব্রতবোধ করেছে।
বিএনপি-জামায়াত মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী উল্লেখ করে তাদের জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি রুখে দেওয়ার জন্য জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মী ও শহীদ রাজু স্মৃতি সংসদের নেতৃবৃন্দকে শপথবাক্য পড়িয়েছেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাস। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সর্ব দলীয় ছাত্র ঐক্যের মিছিলে পুলিশের। গুলিতে প্রাণ দেওয়া শহীদ রাজুর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার (৩ ডিসেম্বর) তার সমাধিতে এই তিনি এই শপথবাক্য পড়ান।
শপথবাক্যে অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাস বলেন, ‘৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান রাজু যেভাবে বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে প্রয়োজনে মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও আবারও বুকের তাজা রক্ত দিয়ে রুখতে হবে।’
তার এই শপথ বাক্য পাঠ বিষয়টি রীতিমতো ভাইরাল হওয়ার পর নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠে। কলেজ অধ্যক্ষের এই শপথবাক্য পাঠ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করছেন বিএনপি ঘরানার লোকজন। জেলা ছাত্রদল নেতা জিয়া সোহাগ লিখেছেন, ‘চাঁদপুর জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ নাকি কোনও দলের অধ্যক্ষ? আপনি বিএনপিকে রুখতে আসবেন না। তার পরিমাণ ভালো হবে না। বিএনপিকে জড়িয়ে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়ায় চাঁদপুর জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
সাবেক ছাত্রদল ও বর্তমান বিএনপি নেতা মো: মোস্তফা কামাল লিখেছেন, 'এই সমস্ত জানোয়ার এবং দালালেরা সমাজে শিক্ষক নামে কলঙ্ক। এই লোকটি হলো রয়ের এজেন্ট ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তীব্র নিন্দা জানাই এবং ধিক্কার জানাই। প্রতিবাদের ভাষায় বলে দিতে চাই এখনো সময় আছে সাবধান হয়ে যান। '
৪ ডিসেম্বর গণমাধ্যমে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাবেক ভিপি, জিএস ও চাঁদপুর ছাত্র নেতৃবিন্দ জানান, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরন দাস চাঁদপুর সরকারি কলেজে সেচ্ছাচারিতা এবং রাজনৈতিক দলবাজিতে সকল সীমা লংঘন করে ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ধূলায় মিসিয়ে দিচ্ছে। অধ্যক্ষ হিসেবে সে সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সমস্ত বিধি- বিধান ভঙ্গ করে একটি সংগঠনের পক্ষ নিয়ে নির্লজ্জ দলবাজী করে চলছেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নেতৃবিন্দ বিগত দিনে কলেজে তার অনৈতিক কর্মকান্ডের সমালোচনা করেন এবং এসবের তীব্র প্রতিবাদ ও চরম ঘৃনা প্রকাশ করে অভিলম্বে অসিত বরন দাসের পদত্যাগের দাবি জানান।
এহেন অবস্থায় অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাশ তার কলেজ পেইজবুক আইডি থেকে বিএনপি ও ছাত্রদলের কাছে ক্ষমা চেয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ৪ ডিসেম্বর অসিত বরণ দাশ তার ফেইসবুক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমার এ বক্তব্য কিংবা শপথ বাক্যে বিএনপি বা ছাত্রদলকে দোষারোপ করে বলাটা ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, '৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি ও ছাত্রদলের ভূমিকা ছিলো অনেক। আসলেই আমার শপথে তাদের এমনটা বলা কোনভাবেই ঠিক হয়নি। তাই আমি আমার এ বলার জন্য দু:খ প্রকাশ করছি। আমার এ বক্তব্যে বিএনপি, ছাত্রদল ও এই দলের সমর্থকরা আমার এ কর্মে আহত হয়েছেন, তাই আমি আপনাদের কাছেও দুঃখ প্রকাশ করছি। অধ্যক্ষ বলেন, আমাকে তা পড়তে দেয়া হয়ছে এবং শপথ বাক্য পাঠ করাতে বলা হয়ছিলো, কিন্তু এর মধ্যে যে কী লিখা ছিলো, তা আমি তাড়াহুড়োর মধ্যে দেখতে পারিনি।
অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাশের এই ভিডিও বার্তাটিও ভাইরাল হয়।
এদিকে, অধ্যক্ষের এ ফেইজবুক ভিডিও বার্তায় এবং বিএনপির পক্ষ নিয়ে জোরালো বক্তব্য দেয়ায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বর্তমান নেতারাও বিব্রত হয়েছেন। তারা অনেকেই বলছেন, সরকার ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এদের এহেন তেলবাজি আর দলবাজির কারণে।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি - জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরদিন বিএনপি ও ছাত্রদলকে আমরা শেরেবাংলা হল থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি শেরেবাংলা হল থেকে নামাতে দেইনি। তখন এই অসিত বরণ দাশ নিজে গিয়ে শেরেবাংলা হল থেকে জাতির পিতার ছবি নামিয়েছেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি রাতারাতি আওয়ামী লীগ সেজে একই কলেজ প্রায় পুরো চাকুরি জীবন পার করার অভিলাষে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দিয়ে সরকার, দল এবং চাঁদপুরবাসীকে বিব্রত করছেন। অসিত বরণ দাশ সুযোগ সুন্ধানী এবং সুবিধাবাদী এজন্যই তিনি এসব বিতর্কিত ও অনৈতিক কাজ করছেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমাদের সরকার আমলে এই অধ্যক্ষ সহকারি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, ভাইস প্রিন্সিপাল, অধ্যাপক এবং শেষ প্রিন্সিপাল হিসাবে একনাগারে দায়িত্ব পালন করছেন! আবার তিনি এই কলেজের ছাত্র এবং চাঁদপুরেই ছেলে। হয়তো একই জায়গায় থেকে এতোসব প্রাপ্তিতে তিনি বেপরোয়া হয়ে গেছেন। তার এই ফেইজবুক বার্তাই দরকার কী ছিলো আর শপথ পাঠে এমন বক্তব্য উপস্থাপনই দরকার কি ছিলো। সে তো আমাদের আওয়ামী লীগকেই খাটো করলো।