ঢাকা শুক্রবার, ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
গণমাধ্যমে নারীর উপস্থাপন আর জেন্ডার সমতা ভিন্ন বিষয়
  • জসিম উদ্দিন বিজয়, সাভার
  • ২০২২-১২-০২ ১০:১১:২১
গণমাধ্যমসমূহ সংবাদ পরিবেশন ও নিজ প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গভিত্তিক অবস্থানের ক্ষেত্রে অনেক সচেতন হয়েছে। তবে ভাষা প্রয়োগ, ছবি ও ভিডিও ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনও অনেকটা পিছিয়ে আছে। যেখান থেকে উত্তোরণের জন্য সচেতনতার পাশাপাশি,মানসিকতা পরিবর্তন জরুরী বলে মত দেন বক্তারা। আমরা সাধারণত জেন্ডার বলতে নারী-পুরুষের জৈবিক পরিচয়কে বুঝলেও আপেক্ষিকভাবে নারী ও পুরুষের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে নির্দেশ করে। মূলত জেন্ডার বলতে নারী পুরুষের কাঙ্খিত আচরন যা পরিবার, সমাজ ও সংস্কৃতি থেকে বিকশিত হয়। তেমনি জেন্ডার সংবেদনশীল বলতে নারী -পুরুষ কিংবা বিশেষ লিঙ্গের প্রতি সমাজের বিদ্যমান বৈষম্য হ্রাস পাওয়া। নারী ও পুরুষের সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হলেই জেন্ডার বৈষম্যের পরিসমাপ্তি অনেকটা দূর করা যাবে। এছাড়া সামজিক দায়বদ্ধতা ও গণমাধ্যম হাউজসমূহের ইতিবাচক পদক্ষেপেরই মাধ্যমে জেন্ডার বৈষম্য বিলোপ করা সম্ভব। আর জেন্ডার সংবেদনশীল হতে সরকারি ও বসেরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সমন্বতিভাবে কাজ করা জরুরী। গণমাধ্যমে নারীকে উপস্থাপন করা আর জেন্ডার সমতা কিংবা জেন্ডার সংবেদনশীল শব্দ প্রয়োগ করা ভিন্ন বিষয়। আজ বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) ‘গণমাধ্যমে জেন্ডারভিত্তিক সংবাদ উপস্থাপন পর্যবেক্ষণের ফলাফল’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকের আলোচকরা এসব কথা বলেন। South Asia Center for Media in Development (SACMID) ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর যৌথ আয়োজনে ও Free Press Unlimited (FPU) and Protecting Independent Media for Effective Media (PRIMED) এর সহযোগীতায় এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর সেমিনার কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। South Asia Center for Media in Development (SACMID) এর উপ-পরিচালক সৈয়দ কামরুল হাসান ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর প্রশিক্ষণ বিভাগের কনিষ্ঠ প্রশিক্ষক মো. শাহ আলমের সমন্বয়ে এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গোলটেবিল বৈঠকের মডারেটর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, নারীরা পূর্বের চেয়ে আরো বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। তারা শুধু রান্না-বান্না, সন্তান প্রতিপালন করা থেকে বের হয়ে সমাজে ও দেশের জন্য কাজ করছে। নারীরা উদ্যোক্তা ও অগ্রগামী হওয়ার কারনে সমাজ থেকে অনেক বৈষম্য দূর করা সম্ভব হয়েছ। এখনও অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো কিভাবে উত্তোরণ করা যায় তার উপর আলোকপাত করেন।তিনি জেন্ডারভিত্তিক সংবাদ উপস্থাপন করার পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। সম্প্রচার মাধ্যমসমূহ সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে জেন্ডারভিত্তিক সংবাদ গুরুত্বের সাথে প্রচার করলেও জেন্ডারভিত্তিক অসমতা অনেকাংশে বিলোপ করা সম্ভব হবে। এছাড়া সংবাদ প্রচারে পাঠক,দর্শক ও শ্রোতার বিষয়টা মাথায় রেখে সংবাদ প্রস্তুত করার কথাও বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড.গীতি আরা নাসরিন এর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) থেকে ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘‘জেন্ডার ও গণমাধ্যম নির্দেশক’’ বইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোকপাত করেন। আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন বলেন, বৈশ্বিক গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ বা গেøাবাল মিডিয়া মনিটরিং ১৯৯৫ সালে শুরু হলেও বাংলাদেশে এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালে। যদিও বাংলাদেশে গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ খুব একটা ফলপ্রসূ নয়,তারপরও কিছু নীতিমালার বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন,সংবাদ উপস্থাপনে পাঠক,দর্শক বা শ্রোতাকে যেমন জেন্ডার সহিংসতায় উসকে দিতে পারে, তেমনি নতুন কিছু ইতিবাচক ধারণাও সৃষ্টি করতে পারে। গীতি আরা নাসরিন বলেন, গণমাধ্যমে জেন্ডার মূলত নারীর অংশগ্রহণ ও নারীকে চিহ্নিতকরণ এই দুইটি ভাবে উপস্থাপন করা হয়। তিনি নারীর সংখ্যা বা অংশগ্রহণ দিয়ে বিচার না করে সামগ্রিকভাবে নারীর অবস্থান কেমন সেটা বিচেচনার উপর জোর দেন। এছাড়া তিনি দর্শক,শ্রোতা ও পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। ড. গীতি আরা নাসরিন আরো বলেন, বর্তমান ক্লিক বেজ নিউজের সময় নারীপাতা বা নারীমঞ্চ নয় বরং নারীর প্রতি সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সংবাদে শব্দ চয়ন,ছবি ও ভিডিও কিভাবে উপস্থাপন করা হবে সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গোলটেবিল বৈঠকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন অংশগ্রহণ করেন। তিনি মূলত সংবাদে নারীর উপস্থাপন ও কিভাবে সামাজে সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা যায় তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। জেন্ডারভিত্তিক সংবাদ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি পাঠক ও দর্শকের বিষয়টি মাথায় রেখে সংবাদ প্রস্তুত করার কথা বলেন। বাংলাভিশন টেলিভিশনের সিনিয়র বার্তা সম্পাদক রুহুল আমিন রুশদ কর্মক্ষেত্রে নারীর অবস্থা বলতে গিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে নারীর জন্য উপযুক্ত কর্মক্ষেত্রের বিষয়টি আলোকপাত করেন। তিনি তার টেলিভিশনে জেন্ডার সংবেদনশীল শব্দ পরিহারের বিষয়ে সচেতনতার বিষয়টি বলেন। রুহুল আমিন রুশদ বলেন,জেন্ডারভিত্তিক সংবাদ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি দর্শকের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করেন বলে জানান। গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র নিউজ এডিটর মীর মাশরুর জামান। তিনি বলেন,গণমাধ্যমে নারীর উন্নয়ন,উপস্থাপন এমনকি সবল -দূর্বল,কুটিল চরিত্র ইত্যাদি বিষয় প্রচার করা হয়। যা মূলত সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মীর মাশরুর জামান গণমাধ্যমে জেন্ডারভিত্তিক উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী কিভাবে টিকে থাকে কর্মক্ষেত্রে তার ভূমিকা ও পদবী এমনকি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া নারীর অধিকারভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ,ক্ষমতায়ন ও জাগরনের বিষয় তুলে ধরেন।
শ্রমিকদের ধর্মঘটে অচল আশুগঞ্জ নদী বন্দর
ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গণপিটুনিতে  একজনের মৃত্যু
ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতকে সকল সুবিধা দিত হাসিনা:  আলতাফ হোসেন চৌধুরী