দোকানপাট নেই, ক্রেতা বিক্রেতার তেমন ভীর নেই, তবুও যে হাট দেশ ব্যাপি পরিচিত নাম তা হল দিনাজপুরের বাঁশেরহাট । সে হাটে শুধু বাঁশ বিক্রি হয় তাই এই হাটে দোকানপাঠ নেই । তবে বাঁশের হাটের পাশেই হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠায় এখন দেশ ব্যাপি পরিচিত নাম হয়ে উঠেছে বাঁশের হাটের নাম । বাঁশের হাটের নাম এখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রিয় একটি নাম । কারন একটাই বিশ্ববিদ্যালয় আসলেই এই নামটি মনে পড়ে যায় ।
দিনাজপুর টু দশ মাইল যাওয়ার পথে জেলা সদরের চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর সাদিপুর মহাসড়কের দুই পার্শ্বেই সারি সারি বাঁশের পিল করা আছে । শত বছর পূর্ব থেকে এই বাঁশের হাট এখানে বসে । এ জন্যেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের নিকট এই বাঁশের হাট ব্যাপক পরিচিত নাম । সেই বিখ্যাত বাঁশের হাটে মাত্র ১০ থেকে ১২ জন বাঁশের ব্যবসায়ী বাঁশের কারবার করে থাকেন।
পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুর থেকে আসা যানবাহন গুলি দিনাজপুর শহর মুখি একমাত্র মহাসড়ক হওয়ায় প্রতিনিয়ত শত শত বাস, ট্রাক, পিকআপ, মোটর সাইকেল, অটোরিকশাসহ এই বাশেঁর হাটের উপর দিয়ে চলাচল করতে হয়। এই হাটে বাঁশ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চল থেকে বাঁশ ক্রয় করে নিয়ে এসে এই মহাসড়কের উপরেই বাঁশ বেচা বিক্রি করে থাকেন। এই বাঁশেরহাট থেকে প্রতিবছর সরকার ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকেন। বাঁশেরহাটে প্রতিদিন পঞ্চাশ থেকে এক ল¶ টাকার বাঁশ বেচা বিক্রি হয়ে থাকে। দিনাজপুর সহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা বাঁশ ক্রেতারা বাঁশ ক্রয় করে নিজেদের ঘর গৃহস্থলী কাজের জন্য বাঁশ ক্রয় করে নিয়ে ভ্যান যোগে বাড়ীতে নিয়ে যান ।
বাঁশের হাটে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠায় দিনাজপুরসহ সার দেশের মানুষ এক নামেই চিনে দিনাজপুরের বাঁশের হাট চিনেন । বাঁশেরহাটের মহাসড়কের দুই পাশে রাস্তার দুই পাশে বিভিন্ন প্রকার বাঁশ পাওয়া যায় । প্রয়োজন মত বাঁশ ক্রেতারা দেখে শুনে ইচ্ছামতো বাঁশ ক্রয় করতে পারেন । বাঁশ ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে দরকষাকষির পরই বাঁশ ক্রয় করে ক্রেতারা বিভিন্ন যান যোগে স্থানে নিয়ে যেতে পারেন । তবে ইদানিং বাঁশের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও বেড়েছে ।
বাঁশের হাটে আসা বাঁশ ক্রেতা মকবুল ইসলাম, তিনি বলেন, আমার মিল চাতাল সংস্কার করার জন্যই ৫০ টি বাঁশের প্রয়োজন । তাই ৫০টি বাঁশ ক্রয় করেছি । প্রতি বাঁেশর দাম পড়েছে ২০০ টাকা ।
বাঁশ ক্রেতা মহিবুল ইসলাম বলেন, আমি বিরলের কাজীপাড়া থেকে এসেছি । বাঁশ হাটে ভাল বাঁশ পাওয়া যায় । কোন প্রকার হয়রানী হতে হয় না এই হাটে । তাই ২শত টি বাঁশ ক্রয় করেছি ।
বাঁশ বিক্রেতা সাকিল আহমেদ বলেন , এই বাশের হাটে এক সময় আবার বাবা ব্যবসা করতেন এখন আমি এই ব্যবসা দেখাশুনা করছি । তবে এখন শ্রমিকের মজুরী , যানবাহন ভাড়াসহ বাঁেশরও দাম বেড়ে যাওয়ায় বাঁশের দাম একটু বেড়েছে । তবে আগের তুলনায় বাঁশ বিক্রয় অনেক কমেছে।
বাঁশ বিক্রেতা মজিবুর রহমান বলেন আগের তুলনায় বাঁশ বিক্রি অনেক কমে গেছে । কারন আমাদেও বাঁশের হাট থেকে বাঁশ ক্রয় করে অনেকে স্থানীয় ভাবে বাঁশের হাট বসিয়েছেন । ফলে আমরা প্রতিদিন এথন ২ শত থেকে ৪ শত বাঁশ বিক্রি করতে পারি।
বাঁশের হাটটি মহাসড়কের পাশ্বেই হওয়ায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে । এই বাঁশের হাটটি যদি সরকার এটি নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতো তাহলে এই অঞ্চল সহ মহাসড়কে অনেকটাই নিরাপদ হতে পারে ।
স্থানীয় জহির উদ্দীন বলেন , মহাসড়কের উপর এই বাঁশের হাট হওয়ায় প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটে । কারন প্রতি সেকেন্ডে এই মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করে । কয়েকদিন আগেও এই সড়কে সড়ক দূর্ঘটনা ঘটেছে । এই বাঁশের হাট যদি স্থানান্তরিত করা হয় । তাহলে বাঁশ বিক্রেতা ও ক্রেতা সকলের জন্যই ভাল হয় ।
বাঁশের হাটের ইজারাদার আব্দুল মজিদ এই বাঁশের হাট থেকে বাঁশ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রেরণ করা হয়। রাস্তার উপর ট্রাক দাঁড় করিয়ে বাঁশের ট্রাকে লোড করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁশ নিয়ে যায় বাঁশ ব্যবসায়ীরা । তবে মহাসড়কের উপরে বাঁশেরহাট গড়ে ওঠায় অনেক দুর্ঘটনাও ঘটছে।