চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ২২ দিন ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ
- শাহাদাত হোসেন শান্ত, চাঁদপুর
-
২০২২-১০-০৬ ১০:৪১:৩৬
- Print
সাগর থেকে মিঠা পানিতে আসা ইলিশকে নিরাপদে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় ৭ অক্টোবর মধ্য রাত থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময় মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মওজুদ ও পরিবহন বন্ধ থাকবে। মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা জেলার উপকূলীয় এলাকার প্রায় অর্ধলক্ষ জেলের জন্য ইতোমধ্যে খাদ্য সহায়তা চাল বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তবে এ বছর ২০ কেজির স্থলে প্রত্যেক জেলে ২৫ কেজি করে চাল পাবেন। কর্মসূচি বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা টাস্কফোর্স কমিটি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানাগেছে, জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত পদ্মা ও মেঘনা নদীর প্রায় ৯০ কিলোমিটার এবং লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। চাঁদপুর অংশে দিন ও রাতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, জেলা মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ ইলিশ প্রজনন রক্ষায় যৌথ এবং পৃথক অভিযান পরিচালনা করবে।
ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকা জেলেদের মধ্যে সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের জেলে লোকমান জানান, সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা আমরা মানব। কিন্তু আমাদের যে সহযোগিতা করা হয়, তাতে আমাদের সংসার চলে না। আমাদের সহযোগিতা আরো বাড়াতে হবে।
একই এলাকার জেলে আলমগীর ও রফিকুল ইসলাম শেখ জানান, অভিযানের সময় আমাদেরকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি করে চাল দেয়। কিন্তু ওজনে সঠিক পাই না। ২০ কেজির স্থলে পাওয়া যায় ১২-১৫ কেজি। যে কারণে আমরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। ২২ দিন আমাদের সংসার চালানোর মত কোন পথ নাই।
হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলে নজরুল ইসলাম জানান, অভিযানের সময় আমরা বেকায় হয়ে পড়ি। সরকারি যে সহায়তা তা দিয়ে সংসার চলে না। বিকল্প হিসেবে আমাদেরকে এখন কৃষি কাজ কিংবা অন্য কাজ করতে হবে। কারন নিয়ম না মেনে ইলিশ ধরতে গেলে জেল খাটতে হয়।
চাঁদপুর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুজ্জামান জানান, ২২ দিনের ইলিশ প্রজনন রক্ষায় নৌ পুলিশ খুবই তৎপর। আমাদের থানা পুলিশ ছাড়াও এ বছর অভয়াশ্রম এলাকায় নৌ পুলিশের দেড় হাজার সদস্য নদী টহলে থাকবে। কোন জেলেকে নদীতে নামতে দেয়া হবে না। আইন অমান্য করলে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, ইলিশ প্রজনন রক্ষায় সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে জেলা টাস্কফোর্সের গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অভয়াশ্রম এলাকার নদী সংযুক্ত খালগুলোর মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে। যাতে করে কোন জেলে নৌকা নিয়ে নদীতে নামতে না পারে। এই বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা উপকূলীয় জেলে পাড়াগুলোতে সচেতনতামূলক সভা করে জেলেদেরকে বুঝিয়েছি। তারা যেন মা ইলিশ না ধরেন।
তিনি আরো জানান, ২২ দিনের নিষিদ্ধ সময়ের জন্য সরকার জেলেদের জন্য খাদ্য চাল বরাদ্দ দিয়েছে। গত বছর ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। এ বছর তা বাড়িয়ে ২৫ কেজি করা হয়েছে। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় অভয়াশ্রম এলাকায় জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স নিয়মিত কাজ করবে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোন জেলে নদীতে মা ইলিশ আহরণ করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড এবং উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।