শেখ হাসিনা সড়ক উন্নয়নে আরো ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দ
- মজিবুর রহমান খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
-
২০২২-০৮-০৮ ০৬:০৩:২০
- Print
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শেখ হাসিনা সড়কের উন্নয়নে (নূরপুর জিসি- কালীবাড়ি আর এন্ড এইচ ) আরো ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের (সদর ও বিজয়নগর) সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সরকারী পত্রের আলোকে এই বরাদ্দ দেয়া হয়। গত ৭ ই আগষ্ট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাদপুর জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় বলে প্রকল্প পরিচালক মো: ওয়াহিদুজ্জামানের দেয়া চিঠি থেকে জানা যায়।
এই অর্থ বরাদ্দে নূরপুর জিসি- কালীবাড়ি আর এন্ড এইচ সড়কের বিজয়নগর অংশে প্রায় ৫ কিলোমিটার কার্পেটিংয়ের কাজ হবে। এছাড়া সিসি ব্লক পুন:স্থাপনসহ সড়কের ১২১৩ মিটার অংশে রক্ষাপ্রদ কাজ হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শিরাজুল ইসলাম জানান, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং সেতুর এপ্রোচের কাজ শেষ হলে সড়কটি চালু হয়ে যাবে।
এই সড়ক বিজয়নগর উপজেলার সাথে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে। এর আগে বর্ষায় নৌকা আর শুস্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটেই জেলা সদরে যাতায়াত করতে হতো বিজয়নগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। তবে তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে আর বেশি দেরি নেই। বিস্তীর্ণ হাওর এলাকার ওপর দিয়ে এই সড়ক নির্মান অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল সংশ্লিষ্টদের জন্য। বছরের ছয় মাস পানিতে টইটম্বুর থাকা হাওরে নির্মাণ সামগ্রী নিতেই বেগ পেতে হয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে।
গত ২০১০ সালের আগস্ট মাসে বিজয়নগরকে জেলা সদর থেকে আলাদা করে উপজেলার মর্যাদা দেয় সরকার। ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে যাতায়াত করতে হয় বিজয়নগর উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষকে। সরাইল ও আখাউড়া উপজেলা হয়ে জেলা সদরে যাতায়ত করতে হয় তাদের।
এতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বিজয়নগর উপজেলার পত্তন, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর ও পাহাড়পুর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। হাওর পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে যাতায়াতের জন্য বর্ষাকালে তাদের একমাত্র ভরসা নৌকা। আর শুস্ক মৌসুমে মাইলের পর মাইল পথ পায়ে হাঁটা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। তাই পত্তন ইউনিয়নের সিমনা থেকে জেলা সদরের শিমরাইলকান্দি পর্যন্ত সড়ক তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন বিজয়নগর উপজেলার বাসিন্দারা।
বিজয়নগর উপজেলা প্রতিষ্ঠার আগ থেকেই এই স্বপ্নের সড়ক তৈরির জন্য সরকারের কাছে দাবি ছিল সেখানকার বাসিন্দাদের। ধীরে ধীরে সেটি হয়ে উঠে লাখো মানুষের প্রাণের দাবি। কারণ এই সড়ক দিয়ে জেলা সদরে আসতে সময় লাগবে মাত্র আধা ঘণ্টা। এতে করে যেমন সময় বাঁচবে, তেমনি দীর্ঘদিনের কষ্টও লাঘব হবে তাদের।
অবশেষে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় স্বপ্নের সিমনা-বি.বাড়িয়া সড়কের মহাকর্মযজ্ঞ। সড়কটির নামকর করা হয়েছে শেখ হাসিনা সড়ক। সিমনা থেকে শিমরাইলকান্দি পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) এই সাড়ে ৯ কিলোমিটার সড়ক তৈরিতে ব্যায় হচ্ছে ১২৩ কোটি টাকারও বেশি। এই সড়কে তিতাস নদী ও বালিয়াজুরী এবং লইস্কা বিলের উপর তিনটি সেতুও রয়েছে। কাজটি দেয়া হয়েছে ডলি কন্সট্রাকশন নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। গত তিন বছর ধরেই চলছে সড়কের কাজ। বছরের ছয়মাস পানি থাকার কারণে কাজ বন্ধ রাখা হয়। তবে ইতোমধ্যে সড়কের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। বিস্তীর্ণ হাওরের বুকে দৃশ্যমান শেখ হাসিনা সড়কটি এখন বিজয়নগর উপজেলাবাসীর জন্য আঁধারে আলোর দিশা।
সব কাজ শেষে ২০২২ সালের শেষ দিকে যানবাহন চলাচালের জন্য সড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হবে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বর্তমানে সড়কটির কিছু অংশে ছোট-খাটো যানবাহন চলাচল করছে। এর ফলে স্বপ্নের এই সড়কের বাস্তবায়ন হতে দেখে উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রা।
পত্তন ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. শহীদ মিয়া জানান, শেখ হাসিনা সড়ক শুধু একটি সড়ক নয়, এটি আমাদের স্বপ্ন। এই সড়কের জন্য আমি আমার জমি থেকে মাটিও দিয়েছি। সড়কটি হয়ে গেলে আমরা কয়েক ইউনিয়নের বাসিন্দারা সহজে জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারব। আমাদের আর পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দিতে হবে না। তাছাড়া সড়কের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে আমাদের জমির দামও বেড়ে গেছে। আগে হাওরের যে জমি ৩ হাজার টাকা শতাংশ ছিল সেই জমিই এখন ৫০ হাজার টাকা শতাংশ হয়েছে। তবে সড়কটি হয়েগেলে আরও দাম বাড়ার আশায় এখন কেউ জমি বিক্রি করছে না।
লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা মনির ভূইয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই দেখছি আমাদের বাপ-দাদারা এই সড়কের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। এই একটি সড়কের কারণে বহু মানুষ কষ্ট করে এবং করছে। অসুস্থ্য রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে যেতেই রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। তবে আমাদের প্রাণের এই সড়কটি হয়ে গেলে আর কোনো কষ্ট থাকবে না। চাইলে আমরা আয়েশ করে সকালের নাস্তাও শহরে গিয়ে করতে পারব।
মোবারক হোসেন নামে টানমনিপুর গ্রামের এক অটোরিকশা চালক জানান, সড়কের যতটুকু কাজ শেষ হয়েছে সেই অংশে আমরা অটোরিকশা চালাতে পারছি। কয়েক বছর আগে আমরা চিন্তাও করিনি এই সড়কে গাড়ি চালাতে পারব। এখন আমাদের স্বপ্নের সড়কে গাড়িও চলছে।
বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সড়কের কাজটিতে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ ছিল। সব সমস্যা পেরিয়ে সড়কের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। আমরা আশা করছি ২০২২ সালের শেষ দিকে সেতুগুলোর কাজ পুরোপুরি শেষ করে যানবাহন চলাচালের জন্য খুলে দেয়া হবে। তখনই মানুষ সড়কের সুফল ভোগ করতে পারবেন।