কর্মকর্তারা অফিস করছেন বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে। আর আইন অমান্য করে সরকারি টাকায় কেনা এসি লাগানো হয়েছে চার কর্মচারীর কক্ষে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ যশোর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-কর্মকর্তারা। এসি ক্রয়েও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, সবকিছুই করা হয়েছে নিয়ম মেনেই।
দরজা বন্ধ করে হিমঘরে (এসি কক্ষ) বসে কাজ করছেন যশোর মেডিক্যাল কলেজের প্রভাবশালী চার কর্মচারী। সরকারি ক্রমানুসার তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারীদের অবস্থান ১৩ ও ১৪ গ্রেডে। আর একই কলেজের পঞ্চম ও ষষ্ঠ গ্রেডের সহযোগি অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপকদের গরম নিবারণের জন্য ভরসা বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ষষ্ঠ গ্রেডের নিচের কর্মচারীদের অফিস কক্ষে এসি থাকার কথা নয়। ফলে এ নিয়ে কলেজের চিকিৎসক-কর্মকর্তাদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।
অভিযোগ রয়েছে, নানা আর্থিক অনিয়মে জড়িত কর্মচারীদের খুশি রাখতেই তাদের চারটি কক্ষে লাগানো হয়েছে সরকারি টাকায় কেনা দুই টনের এসি। অবশ্য চার এসিকক্ষ ব্যবহারকারী কর্মচারীর দাবি, এর পেছনে তাদের কোন হাত নেই, কর্তৃপক্ষ সব জানেন।
এদিকে যশোর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. গিয়াস উদ্দিন বলেন, এসি স্থাপনের ক্ষেত্রে পদমর্যাদা বিবেচনা করা হয়নি। বরং প্রশাসনিক বিভাগের কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ার মেশিনের সুরক্ষার জন্য চার কর্মচারীর কক্ষগুলোতে এসি লাগানো হয়েছে।
১০০ স্কয়ার ফুটের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে একটি কম্পিউটার ও একটি ফটোকপিয়ার। প্রতিটি কক্ষ বরাদ্দ মাত্র একজন কর্মচারীর জন্য। কম্পিউটার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামান্য এই দু’টি জিনিসের জন্য এসি’র প্রয়োজন নেই। বরং কম্পিউটার ঠান্ডা রাখার জন্য পিসিতে থাকা দু’টি কুলিংফ্যানই যথেষ্ট। আর ফটোকপিয়ারের ক্ষেত্রে গরম হবার কোন ভয় নেই। আর এয়ারকন্ডিশন এক্সপার্টের মতে, ১২০ স্কয়ার ফুটের কক্ষের জন্য ১ টনের এসি যথেষ্ট। সেখানে একশ স্কয়ার ফুটের এই কক্ষগুলোতে লাগানো হয়েছে ২ টনের এসি।
এছাড়া, এসি ক্রয়েও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। সরকারি ক্রয় আইনের ৪০ ধারা অনুযায়ী বহুল প্রচলিত জাতীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রচারের কথা থাকলেও, প্রায় দু’কোটি টাকার ৩০টির অধিক এসি ক্রয়ের জন্য বিজ্ঞপ্তিটি ছাপা হয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ড খ্যাত 'দৈনিক সংবাদ সংযোগ' ও 'দি ডেইলি ট্রাইব্যুনাল' নামের দু’টি পত্রিকায়। প্রত্রিকা দু’টি আসেনা যশোরের কোন সংবাদপত্র এজেন্ট কিংবা হকারের কাছে।
জানা যায়, গোপন টেন্ডারে এসি সরবরাহের কাজটি দেয়া হয়েছে হিসাব রক্ষক জয়নাল আবেদিনের ঘনিষ্ট ঢাকার মেসার্স তাহসিন এন্টারপ্রাইজকে। টেন্ডা স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে ১৫টি শিডিউল বিক্রি দেখানো হলেও দাখিল করা হয় মাত্র তিনটি। তবে অনিয়মের অভিযোগ মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন জানান, সব নিয়ম মেনেই টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
ক্ষুব্ধ চিকিৎসক-কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে না গেলেও বলছেন, যথাযথ তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে অনিয়ম-দুর্নীতির আরও চিত্র।