বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিলের অপরাধে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
- শাহাদাত হোসেন শান্ত, চাঁদপুর
-
২০২২-০৬-২০ ০৯:১৯:৩৪
- Print
দীর্ঘ দিন ধরে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখার দায়ে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ২০ জুন সোমবার দুপুরে চাঁদপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোঃ জামাল হোসেনের উপস্থিতিতে এই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এছাড়াও বিদ্যুৎ বিভাগের বিশেষ অভিযানে বকেয়া বিলের অপরধে শহরের বেশিকিছু প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
চাঁদপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এক মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিধান রয়েছে। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমি গত মে মাস থেকে ২০২২ সালের মে মাস অবধি একবছরের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি। বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি মহাপরিচালক এবং অফিস সহকারীকে বেশ কয়েক বার তাগাদা দিলেও এ বিষয়ে তাঁরা পদক্ষেপ নেননি। ফলে সরকারি নিয়মের মধ্যে থেকেই আজ সাহিত্য একাডেমীর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নকরা হয়েছে।
এদিকে বকেয়া বিলের অপরাধে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবরে জেলার সাহিত্য কর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আয়ের উৎস (বিশাল গ্যারেজ ভাড়া দেয়া) থাকার পরেও বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কথা নয়। যেখানে একাডেমির কর্যক্রম মাসে ১বার মাত্র সাহিত্য আড্ডার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, সেখানে এতো বিদ্যুৎ বিল কিভাবে হয়। সাহিত্যকর্মীদের দীর্ঘ দিনের দাবী ছিল একাডেমি যাতে প্রতিদিন খোলা রাখা হয় এবং সেখানে যাতে সাহিত্যকর্মীদের অবাধ পদচারণা থাকে। কিন্তু গত ১০ বছরেও সেই দাবী কখনো আলোর মুখ দেখেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর বিগত কমিটির মহাপরিচালকের কর্মকাণ্ড নিয়ে ইতমধ্যো বিতর্ক উঠেছে। তিন বছরের কমিটি অগনিত
অগঠনতান্ত্রিক এবং অবৈধভাবে দশ বছর পার করলো। ১০ বছরে ১টি সাধারণ সভা করা হয়নি এবং একজন সাধারণ সদস্যও অন্তর্ভুক্ত করেনি। সাহিত্য কর্মীরা বাহিরে থেকে সাহিত্য চর্চা করে আসছে। সংরক্ষণ করা হয়নি আয়-ব্যয় সঠিক কোনো হিসাব।
অথচ সাহিত্য একাডেমী মূল হল রুম থেকে একাডেমীর ভাড়া দেওয়া গাড়ির গ্যারেজটটি অনেক বড়। কিন্তু এই গ্যারেজ থেকে আয় হওয়া অর্থ কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে সেটি বিগত কমিটির মহা-পরিচালক ব্যতিত অনেকেই জানেন না।
তাই হিসাব নিকাশে দুর্নীতির সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে কালক্ষেপন করছেন বলে সচেতন মহলের ধারনা।
এদিকে মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত এর দায়িত্ব অবহেলা এবং ব্যর্থতার দায়ে সাহিত্য একাডেমির মেয়াদ উত্তীর্ণ কার্যকরি কমিটি বিলুপ্ত করে হয় গত ২৪ মে ২০২২। পাশাপাশি সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি এবং জেলা প্রশাসক তার ক্ষমতা বলে ১১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন একটি এডহক কমিটি ঘোষণা করেন। বিলুপ্ত কমিটির মহাপরিচালক শাহাদাতকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। অথচ প্রায় এক মাস হতে চলল সাবেক মোহাপরিচালক দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। এবিষয়ে তাকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেই এপর্যন্ত তিনবার নোটিশ করা হয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে চাঁদপুরের সাহিত্য প্রেমীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের দাবি সাহিত্য একাডেমীর স্থবিরতা এবং অন্ধকার দূর হয়ে আবারো প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠুক। সাহিত্য একাডেমি যাতে সাহিত্যকর্মীদের পদচারণায় মূখর থাকে এজন্য অভিলম্বে নতুন কমিটিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হোক।